1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেড়েই চলেছে বধূ নির্যাতন!

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ভারতে আকছারই ঘটছে কন্যাসন্তানের জন্মদানে বধূ নির্যাতন৷ এ নিয়ে আন্দোলন হয়নি, রাজনৈতিক দলগুলি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কুশ্রী মানসিকতা বদলাতে আসেনি এগিয়ে৷ মোদীর ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও' স্রেফ একটা শব্দবন্ধ হয়ে রয়ে গেছে৷

https://p.dw.com/p/2k1FU
ছবি: picture-alliance/dpa/M. F. Calvert

পুত্রসন্তান ভূমিষ্ট হলে পরিবারে আকাশছোঁয়া আনন্দ৷ কন্যাসন্তান হলে সবার মুখ ব্যাজার৷ মেয়ে মানেই সংসারে বোঝা৷ আর ছেলে বংশরক্ষা করবে, রোজগার করবে, পরিবারে সবার অন্ন জোগাবে আর বৃদ্ধ বয়সে পরিবারের দায়দায়িত্ব সামলাবে৷ এই বস্তাপচা মানসিকতা সমাজে আজও বদ্ধমূল৷

সেকালের কথা আলাদা৷ মেয়েদের শিক্ষার ছিল নগণ্য৷ কিন্তু এখন? সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ কি পালটায়নি? কেন পালটায়নি? শিক্ষা-দীক্ষা আর মেধায় মেয়েরা আজ কত এগিয়ে গেছে৷ রোজগার করছে, ঘরে-বাইরে জীবনের প্রতিটি স্তরে তাঁদের প্রতিভার স্বাক্ষর জ্বলজ্বল করছে৷ তবু জোর গলায় বলা যাচ্ছে না – হ্যাঁ, পালটেছে বৈকি৷ রুঢ় বাস্তব বলছে সামাজিক কাঠামোটা মোটামুটি একই রয়ে গেছে৷ হয়ত স্থানকাল ও পাত্রবিশেষে উনিশ-বিশ হতে পারে৷

এই লিঙ্গ বৈষম্য শুরু হয়ে যায় কন্যাসন্তানের জন্মলগ্ন থেকেই৷ খাওয়া-পরা, পুষ্টি, যত্ন-পরিচর্যা – সবদিক থেকেই কন্যাসন্তান যেন অবহেলার পাত্রী৷ এরই চরম পরিণতি কন্যাভ্রুণ হত্যা অথবা কন্যা ভূমিষ্ট হবার পর তাকে পরিত্যাগ করা৷ আল্ট্রাসাউন্ড করে গর্ভস্থ শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেও, একটা পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে, ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে বছরে চার হাজারেরও বেশি কন্যাভ্রুণ হত্যা করা হচ্ছে৷ এখনও প্রত্যন্ত গ্রামে সন্তান ভূমিষ্ট হয় ঘরেই৷ তাই তাঁদের রেকর্ড অজানাই থেকে যায়৷ শুধু তামিলনাড়ুতেই নয়, ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও ছবিটা মোটামুটি একরকম৷ আকছারই ঘটছে কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ায় বধূ নির্যাতন৷

চারপাশে নজর দিলেই উঠে আসে কত ঘটনা৷ এই তো কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের এক গ্রামে রুবিনা বিবিকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে তাঁর শ্বশুরবাডির লোকেরা৷ কেন? কারণ আল্ট্রাসাউন্ড করে তাঁর স্বামী জানতে পেরেছিলেন রুবিনার গর্ভে কন্যাসন্তান আছে৷ স্ত্রীকে গর্ভপাত করাতে বলে কাজ হয় না৷ স্ত্রী রাজি না হলে স্বামী তাঁর বাপের বাড়ি থেকে একলক্ষ টাকা আনতে বলেন৷ সেটাও সম্ভব না হওয়ায়, স্ত্রীর গলায় জোর করে তরল বিষ ঢেলে দেন স্বামী৷ পশুরাও বুঝি লজ্জা পাবে এই আচরণে৷ আরো আছে৷ পর পর তিনবার কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়, হচ্ছে৷ যেন কন্যাসন্তানের জন্য বৌ একাই দায়ী৷ বারবার মেয়ে হওয়ায় শেষে নবজাত কন্যাকে কাঁথায় মুড়ে ঝোপের মধ্যে ফেলে আসে হতভাগ্য নবজাতকের পরিবার৷ শিয়াল-কুকুর খাবার আগেই ভাগ্যক্রমে কোনো পথচারী শিশুটিকে উদ্ধার করে হোমে দিয়ে আসে৷ এর থেকেও বিভত্স ঘটনা রয়েছে৷

‘ভারতের রাজনীতিতে এই ইস্যুটি নেই’

যেমন নবজাত কন্যাসন্তানকে জ্যান্ত কবর দিয়ে আসে বাড়ির লোকজন৷ শিশুর কান্না এবং নড়াচড়া কারোর চোখে পড়ায় সে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ আল্ট্রাসাউন্ড আসার পর কন্যাভ্রুণ হত্যার হার যেন বেড়ে গেছে৷ দিল্লিতে প্রতি হাজার ছেলের তুলনায় মেয়ের আনুপাতিক হার ৯৭৯,  মহারাষ্ট্রে ৮৯৪, পাঞ্জাবে ৮৪৬ আর গুজরাটে ৮৯০৷

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক বুদ্ধদেব ঘোষ এর পেছনে আর্থিক কারণটাকে প্রধান বলে মনে করেন না৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, দেশের যে দু'টি রাজ্য আর্থিক দিক থেকে এগিয়ে সেই পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা রাজ্যে লিঙ্গ ব্যবধান, যাকে বলে সেক্স রেশিও, তার তারতম্য সবথেকে বেশি৷ কারণ কন্যাভ্রুণ হত্যা সেখানে বেশি হয়৷ মূলত এটা একটা সাংস্কৃতিক ইস্যু৷ এ নিয়ে যে সামাজিক আন্দোলন হয়নি বা হচ্ছে না, তা নয়৷ রামমোহন রায়ের সতীদাহ প্রথা নিবারণ থেকে যা শুরু হয়, তা এখনো চলছে অন্যভাবে৷ তবে একথা ঠিক যে, ভারতের রাজনীতিতে এই ইস্যুটি নেই৷ সংসদে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ বিলটি দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী অবশ্য এ বিষয়ে কিছুটা উদ্যোগ নিলেও, অন্যান্য নেতারা অনাগ্রহী৷ আরজেডি নেতা লালু প্রসাদ তো সামনাসামনি বলেছেন, মহিলারা আবার রাজনীতিতে কেন? সমাজবাদী পার্টির মুলায়েম সিং যাদবেরও একই মত৷ অন্য সব রাজনৈতিক দলগুলি মুখে কিছু না বললেও মনে মনে তারাও চায় না যে সংসদে মহিলাদের জন্য রিজার্ভেশন থাক৷

এই প্রসঙ্গের রেশ টেনে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সের আপর এক অধ্যাপক দেবদাস ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা শুধু ভারতেই নয়, গোটা দুনিয়াতেই আছে৷ তবে ভারতে কন্যাসন্তানের প্রতি বৈষম্যের একটা বড় কারণ সম্ভবত পণপ্রথা৷ শহরে পণপ্রথার প্রকৃতি কিছুটা বদলালেও সর্বত্র সেটা দেখা যায় না৷ পণপ্রথা বেআইনি হলেও তা কার্যকর করতে সরকার গা করে না৷ চরম নির্যাতন বা বধূ হত্যা বা আত্মহত্যা পর্যন্ত না গড়ালে পুলিশ প্রশাসন নীরব দর্শকই থাকে৷ অথচ এতবড় একটা সামাজিক ব্যাধি নিয়ে বড় কোনো আন্দোলন তৈরি হচ্ছে না৷ রাজনৈতিক দলগুলি এই ইস্যু নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না, পাছে ভোটব্যাংকে টান পড়ে৷

প্রধানমন্ত্রী মোদী নারী স্বশক্তিকরণের লক্ষ্যে ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও' নামে একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন৷ কিন্তু সেটা কত দূর সফল হয়েছে তা বলার সময় এখনও আসেনি৷ কন্যাসন্তান বোঝা – একমাত্র এই মানসিকতা সমাজের তৃণমূল স্তর থেকে মুছে ফেলতে পারলেই প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্প সাফল্যের মুখ দেখতে পারবে৷

এ বিষয়ে আপনার কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য