1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলার পর

আশীষ চক্রবর্ত্তী৪ জুলাই ২০১৬

সন্তান হারানো যে কোনো বাবা-মায়ের জন্যই অপরিসীম বেদনার৷ অথচ সন্তান কখন যে হারিয়ে যায় অনেক বাবা-মা তা বুঝতেই পারেন না৷ বোঝেন যখন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে, সব বন্ধন ছিঁড়ে সন্তান ততক্ষণে চলে গেছে জীবনের ওপারে৷

https://p.dw.com/p/1JImY
গুলশান, ঢাকা
ছবি: picture-alliance/AA/Z. H. Chowdhury

গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলা চালানো জঙ্গিদের পরিচয় জেনে অনেকেই বিস্মিত৷ এত ধনাঢ্য, অভিজাত পরিবারের সন্তানরা কী করে জঙ্গি হয়, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা ‘আধুনিক' তরুণরা কিভাবে ধর্মের নামে এত নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করে – তা তারা ভেবেই পাচ্ছেন না৷ অথচ আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং ইংরেজিজ্ঞান কখনোই আধুনিকতা আর মানবিক শিক্ষার নিয়ামক নয়৷ ‘জঙ্গি মানেই মাদ্রাসাছাত্র' – এমন ধারনার অসারতার প্রমান তো আমরা অতীতেও অনেকবার পেয়েছি৷

ব্লগার রাজীব হত্যা মামলার আটজন আসামির সাতজনই যে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র – তা কি আমরা ভুলে গেছি?

আগের হত্যাকাণ্ডগুলোর আসামীদের সঙ্গে গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলাকারীদের বড় একটা পার্থক্য হলো, এই হামলাকারীদের পরিচয় এবং অপরাধ সম্পর্কে কোনো বিভ্রান্তি বা সংশয়ের অবকাশ নেই৷ এই জঙ্গিরা ‘আত্মস্বীকৃত' জঙ্গি৷ ঘটনাপরম্পরায় এইটুকু অন্তত বলা যেতেই পারে৷

আশীষ চক্রবর্ত্তী
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

কিন্তু এই তরুণরা কেমন করে হঠাৎ জঙ্গি হয়ে গেল অনেকের কাছে সেটাই যেন বিস্ময়ের৷ তাদের পরিবারও নাকি বিষয়টা বুঝতে পারেনি৷ এক জঙ্গির পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তানের নিখোঁজ হওয়ার খবর পুলিশকেও নাকি জানানো হয়েছিল৷ কিন্তু সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, পুলিশ তখন বিষয়টিকে আমলে নেয়নি৷ তাদের মনে হয়েছে, বড় লোকের ছেলেটি হয়ত কোথাও বেড়াতে গেছে, সময়মতো ঠিকই ফিরে আসবে৷

কিন্তু ছেলেটি আর ফেরেনি৷ নিরীহ কিছু মানুষকে মেরে নিজেও মৃত্যুবরণ করেছে৷

প্রশ্ন জাগে, বাবা-মায়ের দায়িত্ব কি শুধু সন্তানের ভরনপোষণ আর লেখাপড়ার খরচ জোগানো? সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কী করছে – এ সব সম্পর্কে উদাসীনতা যে কত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে তার ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত তো বহুবার আমরা দেখেছি৷ এমন উদাসীনতার কারণেই নেশার রাজ্যে ডুবে নিজের বাবা-মাকেই হত্যা করেছে ঐশী৷ ওর সামনে এখন ফাঁসির দড়ি৷ আদালত শাস্তি মওকুফ না করলে হয়ত কৈশোরেই শেষ হয়ে যাবে একটি জীবন৷

ঐশীর বাবা-মাকে তবু সন্তানের মৃত্যু দেখে যেতে হয়নি৷ জঙ্গিদের মা-বাবাকে তা দেখতে হলো৷ দেখতে হলো প্রায় তাদের সন্তানেরই বয়সের ছেলে ফারাজের মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷ দুই বন্ধুর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে ফারাজ৷ সারা বিশ্বের গণমাধ্যম তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ৷

অন্যদিকে জঙ্গিরা৷ তাদের পরিচয়, তাদের কৃতকর্ম পরিবারকেও শুধু দুঃখ আর গ্লানিই দিয়েছে৷

এই গ্লানিতে রাষ্ট্র এবং সমাজেরও দায় নিশ্চয়ই আছে৷ কিন্তু পরিবারও দায় এড়াতে পারে না৷ কোনো কিছুই হঠাৎ ঘটে না৷ গুলশানের জাতীয় ট্র্যাজেডি সব পরিবারের জন্যই এক সতর্কবার্তা৷ পরিবারের সবাই, বিশেষ করে বাবা-মা সব সময় উঠতি বয়সের সন্তানদের পাশে থাকুন৷ ওদের ভরসা হয়ে থাকুন, ছায়া হয়ে থাকুন যেন কোনো খরতাপেই কচি কচি জীবনগুলো হঠাৎ জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে না যায়!

লেখকের সঙ্গে আপনি কি একমত? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান