1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রামমন্দির-বাবরি মসজিদ বিবাদের কলঙ্ক

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
৫ ডিসেম্বর ২০১৭

রামমন্দির-বাবরি মসজিদ বিবাদের ফয়সালা করতে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে৷ জমির মলিকানা স্বত্ব নিয়ে ৪টি দেওয়ানি মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের পরও ১৩টি আবেদন জমা পড়ে আদালতে৷ পরবর্তী শুনানি ৮ই ফেব্রুয়ারি৷

https://p.dw.com/p/2onzD
ছবি: Getty Images/AFP/D .E. Curran

বিতর্কিত মসজিদ ভাঙার ২৫ বছর পূর্ণ হবার ঠিক একদিন আগে, অর্থাৎ মঙ্গলবার, ভারতের শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের এক বিশেষ বেঞ্চে অযোধ্যার রামমন্দির-বাবরি মসজিদ বিবাদের রাজনৈতিক বিতর্কের চূড়ান্ত রায় ঘোষণার শুনানি শুরু হয়৷ ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ছাড়াও এই বেঞ্চে আছেন বিচারপতি অশোক ভূষণ ও বিচারপতি এস. আবদুল নাজির৷

সুন্নি ওয়কফ বোর্ডের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বাল আদালতে বলেন, প্রথমত প্রয়োজনীয় সাড়ে ১৯ হাজার দলিল-দস্তাবেজের সব পেশ করা হয়নি, যার মধ্যে পুরাতাত্ত্বিক রিপোর্টও আছে৷ দ্বিতীয়ত অযোধ্যার এই মামলা নিয়ে যখনই শুনানি হয়, আদালতের বাইরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমস্যা হয়৷ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ তাই মামলার তথ্য-প্রমাণ পেশ সম্পূর্ণ হলে ২০১৯ সালের ১৫ই জুলাইয়ের পরই যেন শুরু করা হয় শুনানি৷ তিনি ছাড়াও, প্রবীণ আইনজীবী রাজীব ধওয়ান বিষয়টি বৃহত্তর বেঞ্চের কাছে পাঠানোর আর্জি জানান৷

অন্যদিকে রাম জন্মভূমির পক্ষে আইনজীবী হরিশ সালভে বৃহত্তর বেঞ্চে এই মামলা পাঠানোর বিরোধিতা করে সওয়াল করেন যে, আদালতের বাইরের রাজনীতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মাথা ঘামানোর কারণ নেই৷ সুন্নি বোর্ডের আর্জি খারিজ করে পরবর্তী শুনানি আগামী বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি ধার্য করে শীর্ষ আদালত৷ উত্তর প্রদেশ সরকারের পক্ষে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, আরবি ও ফার্সিতে লেখা মূল নথিপত্র ইংরেজি এবং অন্যান্য ভাষায় অনুবাদসহ দাখিল করা হয়েছে৷ আর তাতে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে দেখানো হয় যে, ১৫২৮ সালে মুঘল সুলতান বাবরের শাসনকালে বাবরি মসজিদ তৈরির আগে ঐ জায়গায় একটি হিন্দু মন্দির ছিল৷

২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট অযোধ্যার বিবাদিত ২ দশমিক ৭৭ একর জমি সংশ্লিষ্ট তিন পক্ষের  প্রত্যেককে এক-তৃতীয়াংশ করে ভাগ করে দেয়৷ লাগোয়া বাকি ৬৭ একর জমি কেন্দ্রীয় সরকার নিজের হাতে রাখে৷ সংশ্লিষ্ট এই তিনটি পক্ষ হলো – সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহি আখড়া এবং রামলালা (বালক রামের বিগ্রহ)৷ কিন্তু এই রায়ে সন্তুষ্ট না হওয়ায় চারটি দেওয়ানি মামলার ১৩টি আবেদন জমা পড়ে সুপ্রিম কোর্টে৷ এর মধ্যেই মুসলিম সম্প্রদায়ের শিয়া-সুন্নি বিরোধ নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে৷ উত্তর প্রদেশের শিয়া মুসলিম ওয়াকফ বোর্ড এক সমাধানসূত্র দাখিল করে জানায় যে, অযোধ্যার বিতর্কিত এলাকা থেকে একটা যুক্তিসম্মত দূরত্বে মুসলিম প্রধান এলাকায় মসজিদ বানানো যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, শিয়া বোর্ড এই মামলার একেবারে গোড়ার দিকে সংশ্লিষ্ট পক্ষ ছিল না৷

তাই শিয়া বোর্ডের এই হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে সুন্নি বোর্ড৷ তাদের মতে, মুসলিম সম্প্রদায়ের দু'পক্ষের মধ্যে মীমাংসা হয়ে গেছে সেই ১৯৪৬ সালে৷ এতে বাবরি মসজিদের ওপর সুন্নিদের অধিকার মেনে নেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর সেই মসজিদই গুঁড়িয়ে দেয় হিন্দু্বাদী সংঘ-পরিবারের কর সেবকরা৷ শিয়া বোর্ডের সওয়ালকে চ্যালেঞ্জ করে উত্তর প্রদেশের সুন্নি বোর্ডের বক্তব্য: এই ধরনের সংবেদনশীল মামলায় দলিল-দস্তাবেজের তথ্য-প্রমাণের তুলনায় বড় হচ্ছে ধর্মবিশ্বাস৷ সেটাই হওয়া উচিত রায়ের ভিত্তি৷ অন্যথায় সংবিধানের ২৫-২৬ ধারা লংঘিত হবে, যেখানে সব ধর্ম বিশ্বাসীদের অধিকার সমান৷

এই আর্জিকে সমর্থন করেছে অন্যতম মামলাকারী মুসলিম পার্সোনাল আইন বোর্ড৷ সম্প্রতি নাগরিক অধিকারবাদী সংগঠন অযোধ্যার মন্দির-মসজিদ বিবাদে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়ে বলেছে, এই বিবাদ শুধু জমিজমার বিবাদ নয়৷ এর সঙ্গে জড়িয়ে আরও নানা বিষয়, যার প্রভাব পড়তে পারে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তির ওপর৷

মঙ্গলবারের শুনানির প্রেক্ষিতে এই বছরের মার্চ মাসে আদালতের বাইরে এই বিবাদের আপোষ মীমাংসা করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষই তাতে সাড়া দেয়নি: উলটে হিন্দুত্ববাদী সংঘ-পরিবার হুঙ্কার দেয় যে, অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে শুধু রামমন্দিরই হবে এবং সেখানকার পাথর দিয়েই৷ অন্য কোনো কাঠামো নয়৷ এই আবহে নতুন করে আসরে নেমেছেন বিজেপি সাংসদ সুব্রামনিয়াম স্বামী, ধর্মগুরু শ্রী শ্রী রবিসংকর এবং শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের ওয়াসিম রিজভি৷

প্রশ্ন হলো – অযোধ্যার সাধারণ মানুষ কী বলছে? বলছে, এটাই রামমন্দির নির্মাণের সুবর্ণ সুযোগ৷ উত্তর প্রদেশে আছে যোগী আদিত্য নাথের বিজেপি সরকার, অন্যদিকে কেন্দ্রে আছে মোদীর বিজেপি সরকার৷ পাশাপাশি সর্বত্র চোখে পড়ছে সংঘ-পরিবারের বাড়বাড়ন্ত৷ এর নিরিখে বাবরি মসজিদ ভাঙার ২৫ বছর পর যদি মন্দির নির্মাণ না হয়, তাহলে দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক ছবির কলঙ্কদাগ মুছে ফেলা যাবে না এবং পরবর্তীতে বিজেপির মাথা তোলা মুশকিল হবে৷ কাজেই এই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে মন্দির নির্মাণের আশা কম৷ ওদিকে আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন করে সরকার জমির মালিকানা স্বত্ত্বের একতরফা মীমাংসা করতে পারে না৷

প্রবীর দে

মন্দির-মসজিদ জমির বিতর্কিত মালিকানা সংক্রান্ত ইস্যুর চূড়ান্ত রায় অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবি রাখাটা কি দেশের বৃহত্তর স্বার্থের পক্ষে বাঞ্ছনীয় নয়? প্রশ্নটা ডয়চে ভেলে রেখেছিল কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক প্রবীর দে-র কাছে৷ উত্তরে উনি বললেন, ‘‘এটা একটা সংবেদনশীল ও বিতর্কিত ইস্যু৷ তাছাড়া ভুলে গেলে চলবে না যে, আমাদের দেশের মূল ভিত্তি ধর্মনিরপেক্ষতা৷ তাই ব্যক্তিগতভাবে আমি সংবিধান এবং দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে এর আশু নিষ্পত্তি হওয়া দরকার বলে মনে করি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের দেশের বেশিরভাগই তো ভোট-ভিত্তিক রাজনীতি৷ সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের স্বার্থ বুঝে বিভিন্ন ইস্যুকে ব্যবহার করে৷ দ্বিতীয়ত যে কোনো মৌলবাদ, তা সে সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু যাই হোক, সব সময়ই তা দেশের পক্ষে বিপজ্জনক৷ সুস্থ এবং শুভবিচার বুদ্ধি সম্পন্ন নাগরিক হিসেবে সব মৌলবাদকেই পরিহার করা উচিত৷ যেহেতু আমরা সুপ্রিম কোর্টের বিচারের ওপর আস্থাশীল, তাই মনে হয় সুপ্রিম কোর্টের রায় দেশকে এক ইতিবাচক বার্তা দেবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য