1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান নির্বাচন ভাবনা

আসমা মিতা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বলা হয়ে থাকে জার্মানির শান্তিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম স্টুটগার্ট৷ সেই শহরের মোট বাসিন্দার প্রায় ৪০ ভাগই হলো অভিবাসী৷ কাজেই ভোটের ফলাফল নির্ধারণে এই অভিবাসীরাই ‘বড় ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/2kBUj
বাংলাদেশের মতো কোনোভাবেই কেবল পার্টির ‘লেবেল’ দেখে ভোট দেবেন না ভোটাররাছবি: DW/A. Islam

মোটর গাড়ির রাজধানী বলে খ্যাত স্টুটগার্টে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশি জার্মানের সংখ্যা এখন কম নয়৷ জার্মান ডিগ্রি, অর্থনৈতিক সক্ষমতার পাশাপাশি এদের অনেকেই অর্জন করেছেন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতাও৷ এই অর্জনকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে তাই বেশ ভেবেচিন্তেই এগোচ্ছেন সবাই৷ তবে বাংলাদেশের মতো কোনোভাবেই কেবল পার্টির ‘লেবেল’ দেখে কেউ ভোট দেবেন না বলে পরিষ্কার জানিয়েছেন৷ 

বহু বছর ধরে জার্মানিতে আছেন প্রকৌশলী আদনান সাদেক৷ আদনানের মতে, ‘‘বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন বলতে আমরা সারা দেশ নিয়ে কথা বলি৷ কিন্তু এখানে তা নয়৷ ধরুন যদি স্টুটগার্টের কথাই বলি, এখানে নির্বাচনের সময় স্থানীয় বিষয় অনেক বেশি প্রাধান্য পায়৷ একজন প্রার্থী কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তা আদৌ বাস্তবায়ন করছেন কি না অথবা অন্য প্রার্থী এলাকার উন্নয়নে ভিন্ন কিছু ভাবছে কি না সেসব নিয়ে সবাই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে৷ যেমন অনেক উদ্বাস্তু এখন জার্মানিতে আসছে, এটা একটা জাতীয় ইস্যু বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে জার্মানির ভূমিকা কী হবে অথবা আফগানিস্তানে জার্মানি সৈন্য পাঠাবে কি না এ সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও ভোটাররা এখানে প্রথমে বিবেচনা করে তার নিজের কাজ ঠিক থাকছে কি না, বাচ্চারা সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে কি না, পরিবেশ দূষিত হচ্ছে কি না, চিকিৎসা মিলছে কি না – এসব চিন্তা করে তারা প্রার্থী বাছাই করে৷’’

Deutschland Bundestagswahlen deutsch-bangladeschische Wähler
বহু বছর ধরে জার্মানিতে থাকা প্রকৌশলী আদনান সাদেক জানাচ্ছেন তাঁর ভাবনাছবি: DW/A. Islam

‘‘এই মুহূর্তে স্টুটগার্টের বড় ইস্যু হলো প্রধান রেল স্টেশনের পুনর্নির্মাণ আর অন্যটি হলো গাড়ির ধোঁয়া থেকে পরিবেশ দূষণ কমাতে ব্যবস্থা গ্রহণ৷ এই দুই ইস্যুতে যে প্রার্থী যৌক্তিকভাবে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারবেন, আমার মনে হয় ভোটাররা তার দিকে বা সেই দলের দিকেই যাবে বেশি৷’’ – বিশ্লেষণ করলেন আদনান সাদেক৷

তাহমিনা বিনতে বাতেন একটি প্রতিষ্ঠানে ড্যাটা অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন৷ দেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে আসার পরও জার্মানিতে এসে আরও একটি মাস্টার্স করেছেন কেবল চাকুরির সুবিধার্থে৷ তাহমিনার কাছে কাজের সুযোগ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ তিনি বললেন, কষ্ট করে পড়াশুনা শেষ করে চাকুরির ক্ষেত্রে কেমন সুযোগসুবিধা পাচ্ছি, চাকুরি শেষে পেনশন, অথবা বিদেশি হিসেবে আমাকে কীভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে সেই বিষয়গুলো আমি সব সময় বিবেচনা করি৷ এদেশে ছেলে-মেয়ের পার্থক্য নেই, সবাই সব কাজ করে এবং সুবিধা পায়৷ কিন্তু মুশকিল হলো ‘নন টেকনিক্যাল’ ব্যাকগ্রাউণ্ড যাদের তাদেরকে এখানে খুব হিমশিম খেতে হয় কাজ পেতে৷ আমি একজন ডেন্টিস্ট৷ আমি খুব ভালভাবেই জানি কী কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে আমাকে৷ কাজেই ‘নন টেকনিক্যাল’ ব্যাকগ্রাউণ্ডের লোকজনদের জন্যও যেন কাজের সুযোগ তৈরি হয় আমি তা ভাববো৷ কারণ আমরা কিন্তু বাংলাদেশ থেকে তৈরি হয়ে আসা মানুষ৷ সে কারণেই আমি ভেবে দেখি যে বিদেশিদের জন্য কারা নমনীয়৷’’ 

<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/video.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fdwbengali%2Fvideos%2F10154849337935978%2F&show_text=0&width=560" width="560" height="315" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allowFullScreen="true"></iframe>

প্রকৌশলী মিনহাজ দীপন অবশ্য জানালেন, ‘‘ভিনদেশি বলে তিনি কখনো অবমূল্যায়নের শিকার হননি৷ নাগরিকদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতের কথা এদেশে নিজেদের খুব একটা না ভাবলেও চলে৷ বরঞ্চ এসব নিয়ে সরকারেরই মাথাব্যথা বেশি৷ প্রায় ১৫ বছরের জার্মান প্রবাস জীবন তাকে এই বার্তাই দিয়েছে৷ কাজেই সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে নতুন নতুন মাত্রা কে যোগ করছেন, কে ভিন্নভাবে ভাবছেন সেগুলো দেখার বিষয় আছে৷ গড়পড়তা সিদ্ধান্ত এদেশের মানুষ নেন না৷ তারা ব্যক্তি দেখে ও কাজ দেখে বিবেচনা করেন কাকে ভোট দেবেন৷’’

একইভাবে শিরিন আলম, আমিনুল হক রতনসহ কথা হলো আরও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি জার্মান ভোটারের সঙ্গে৷ তারা জানালেন, বহু বছর ধরে বাস করলেও মুসলমান বলে কখনও কোন বিরূপ পরিস্থিতিতে তাদের পড়তে হয়নি৷ এমনকি হিজাব পরলেও কেউ আড়চোখে তাকায় না৷ তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে কাজের ক্ষেত্রে আগে থেকেই বলে নেয়া হয় যে, ‘হিজাব পরা যাবে না’৷ এছাড়া আর কোন পরিস্থিতিতে কাউকে কখনও পড়তে হয়নি৷ তবে ইদানীং কোন কোন রাজনৈতিক দল মুসলিম ও অভিবাসী বিদ্বেষী কথা বলছেন৷ তারা অবশ্য স্টুটগার্টে খুব একটা সুবিধা করতে পারবেন না বলেই বিশ্বাস এই ভোটারদের৷ দেশ থেকে স্বজনদের এনে একটু লম্বা সময় রাখার ব্যাপারেও আরেকটু উদারতা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তারা আশা করেন বলেও জানালেন৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...