1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অত্যাচারের সম্মুখীন মিয়ানমারের মেয়েরা

২৬ ডিসেম্বর ২০১০

মিয়ানমার মানেই অং সান সু চি৷ সম্প্রতি তিনি মুক্তি পেয়েছেন৷ স্বাধীনভাবে মানুষের সঙ্গে মিশতে পারছেন, চলাফেরা করতে পারছেন৷ কিন্তু মিয়ানমারের অন্য মেয়েদের অবস্থা কী? মেয়েদের ওপর নির্যাতনে নাকি বিশ্ব রেকর্ড করেছে মিয়ানমার?

https://p.dw.com/p/zprs
মিয়ানমারের নারীদের উপর অত্যাচার বন্ধে প্রতিবাদছবি: AP

জাতিসংঘের ১৮২০ নম্বর প্রস্তাবে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে কোন নারীর ওপর অত্যাচার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমতুল্য৷ অথচ মিয়ানমারে যেসব সেনা নিয়মিত মেয়েদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে তারা থাকে একেবারে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে, আইনের ঊর্ধ্বে৷

২০০৮ সালে জাতিসংঘ জানিয়েছে, নারীর ওপর অত্যাচার এবং নির্যাতনকে যুদ্ধাপরাধের সমতুল্য গণ্য করা হবে৷ ১৮২০ নম্বর প্রস্তাবে স্পষ্টভাবে তা উল্লেখ করা হয়েছে৷ কয়েক মাস আগে জাতিসংঘের নারী বিষয়ক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মার্গট ওয়ালস্ট্রম জানিয়েছেন, যে কোন সংঘর্ষ এবং সংঘাতপূর্ণ এলাকায় মেয়েদের যৌনপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে, সেটা যেভাবেই হোক না কেন৷ আর যে বা যারা এসব অপরাধের জন্য দায়ী থাকবে তাদের যথাযোগ্য বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে৷ পরোক্ষভাবে তিনি ইঙ্গিত করেন মিয়ানমারের প্রতি৷

Bürgerkrieg in Birma
মিয়ানমারের সেনা সদস্যদের হাতেই নারীরা বেশি নির্যাতিত হনছবি: AP

১৯৬২ সালে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে নেয়৷ তখন থেকেই মিয়ানমারের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নেমে আসে নানা ধরণের অত্যাচার৷ বিশেষ করে মেয়েদের ওপর৷ এসব মেয়েরা প্রায় সময়ই সেনাদের যৌন হয়রানির শিকার হত৷ গত আট বছর ধরে এসব যৌন অত্যাচার আর হয়রানির নথি সংগ্রহ করেছে একটি নারীবাদী সংস্থা ‘সোয়ান'৷ তারা নজর রাখছিল ‘শান' নামের একটি এলাকার ওপর৷ ৬২৫টি ঘটনা ঘটেছে ৬ বছরে৷ এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে তথ্য৷ অল্পবয়স্ক মেয়েরাও রেহাই পায়নি সেনাদের পাশবিক কামনা-বাসনার হাত থেকে৷ ‘সোয়ান' জানিয়েছে, এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ হল সেনা কর্মকর্তা৷ যৌনপীড়নের প্রতি তিনজন শিকারের মধ্যে একজন অপ্রাপ্তবয়স্কা৷ প্রতি চারজন মেয়ের মধ্যে একজন প্রাণ হারায়৷ খুবই অল্প সংখ্যক সেনার বিচার হয়েছে এ পর্যন্ত৷

নভেম্বর মাসের শুরুতে ঘটে আরেকটি ঘটনা৷ নির্বাচনের আগের দিন সন্ধ্যায় জানানো হয় সোয়ান-এর সদস্যা সেং নুওং লিন্টনার ক্যাথলিক একটি সংস্থার সাহায্যে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে একটি আন্তর্জাতিক আলোচনাসভায় অংশগ্রহণ করেছেন৷ মিয়ানমারে মেয়েদের ওপর অত্যাচারের কথা সেখানে তুলে ধরা হয়৷ লিন্টনার'এর কথায়, ‘‘আজ পর্যন্ত সামরিক বাহিনী ডানা মেলে রয়েছে দেশটিতে৷ ক্ষমতাসীন দল অকারণে সাধারণ মানুষদের নাজেহাল করছে৷ মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে৷ এবং তা করছে ইচ্ছে করেই৷ হ্যাঁ, আমি বলতে চাচ্ছি ইচ্ছাকৃতভাবেই এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে৷ যখন একজন বা একাধিক সেনা একটি মেয়ের ওপর চড়াও হয়, মেয়েটির পেছনে লেগে থাকে, তখন মেয়েটিকে নিয়ে পুরো পরিবার পালাতে বাধ্য হয়৷ এর ফলে বেশ কিছু জায়গা জনশূন্য হয়ে পড়েছে৷ আমি জানি একটি পরিবারে মা এবং মেয়েকে একই সঙ্গে ধর্ষণ করা হয়েছে৷ তাদেরকে জোর করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো হয়েছিল৷ প্রথম রাতেই তাদের ওপর হামলা করে সেনারা৷''

Margot Wallström
জাতিসংঘের নারী বিষয়ক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মার্গট ওয়ালস্ট্রমছবি: picture-alliance/dpa

নভেম্বর মাসে মার্গট ওয়ালস্ট্রম জাতিসংঘের সদর দপ্তরে জানান, একটি সমাজকে, একটি মেয়েকে, একটি পরিবারকে সারাজীবনের জন্য মানসিকভাবে পঙ্গু করে দিতে পারে ধর্ষণের মত ঘটনা৷ ধর্ষণ কোন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের মত গর্জন করে না ঠিকই কিন্তু এর পরিণতি একটি মেয়েকে পঙ্গু করে দেয় সারাজীবনের জন্য৷ তিনি বলেন, যে সব স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষ চলছে সেসব এলাকার পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবে৷ মেয়েদের রক্ষার দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে৷ ক্ষোভ প্রকাশ করে পুরুষদের উদ্দেশ্যে ওয়ালস্ট্রম বলেন, ‘‘আপনারা উপযুক্ত নন, আপনাদের মা-বোনকে রক্ষা করার ক্ষমতা আপনাদের নেই৷''

ভেরোনিক নাহুম-গ্রাপ ফরাসী নৃবিজ্ঞানী৷ তিনি জানান, ‘‘যখন একটি মহিলাকে ধর্ষণ করা হয় তখন সে আর মহিলা থাকে না৷ একটি নারীর ভেতর যে কোমলতা লুকিয়ে থাকে তার পুরোটাই হরণ করা হয়৷ যে বা যারা এ কাজটি করে তারা একটি মেয়ের নিজস্ব সত্তাকেই হত্যা করে, পড়ে থাকে শুধু দেহটি৷ সংখ্যালঘুদের নিশ্চিহ্ন করতে ধর্ষণের মত অস্ত্রকে বেছে নেওয়া হয়েছে৷ সমাজে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে পরিত্যক্ত হিসেবে, জঞ্জাল হিসেবে৷ তাদের লক্ষ্য হল এসব সংখ্যালঘুদের নির্মূল করা৷''

লিন্টানার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন৷ মিয়ানমারের সামরিক জান্তার হাত থেকে এইসব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করার আর্জি জানিয়েছেন বহির্বিশ্বকে৷ সামরিক জান্তার অবসানের দাবি জানিয়েছেন তিনি৷ প্রশ্ন, অং সান সু চি'র মত মিয়ানমারের প্রতিটি মেয়ে স্বাধীন হবে কবে?

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারুক