‘অপরাধবোধ’ থেকে হাসপাতাল, সেখানেই ইবোলা-বিরোধী যুদ্ধ
অন্যের ‘অপরাধেও’ লজ্জিত হয়ে যিনি মহৎ কাজে ব্রতী হতে পারেন তিনি নিশ্চয়ই সর্বজনশ্রদ্ধেয়৷ তেমনি এক ‘মহানায়ক’ একটা হাসপাতাল গড়েছিলেন গ্যাবনে৷ ছবিঘরে আজ এক নোবেল বিজয়ীর স্মৃতিবিজড়িত হাসপাতাল এবং ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কথা৷
ছোট্ট এক জেলেপল্লী
পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গ্যাবনের ছোট্ট শহর লামবারেনে৷ শহরের বেশির ভাগ মানুষই জেলে বা মৎস্যজীবী, অর্থাৎ মাছ ধরাই তাঁদের পেশা৷ কিন্তু এ শহর সারা বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে একটি হাসপাতালের জন্য৷ হাসপাতালটির নাম আলব্যার্ট শোয়াইৎসার হাসপাতাল৷
আলব্যার্ট শোয়াইৎসার এবং তাঁর অনন্য কীর্তি
আলব্যার্ট শোয়াইৎসারের জন্ম ১৮৭৫ সালে, জার্মানিতে৷ তবে ১৯১৯ সাল থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন ফ্রান্সের নাগরিক৷ দর্শন ধর্মতত্ত্ব আর সংগীতেই ডুবে ছিলেন জীবনের বেশ বড় একটা সময়৷ শেষমেশ হলেন ডাক্তার৷ গ্যাবনের লামবারেনে শহরের হাসপাতালটি তাঁরই গড়া৷ আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশের অতীত তাঁকে কষ্ট দিতো৷ অনুশোচনাও হতো৷ সেই অনুশোচনা থেকেই হাসপাতালটি গড়ে তুলেছিলেন আলব্যার্ট শোয়াইৎসার৷
তাঁর ছায়া আছে, তবে প্রাচুর্য নেই
১৯১৩ সালে হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন আলব্যার্ট শোয়াইৎসার৷ ১৯৫২ সালে চিকিৎসায় নোবেল দেয়া হয় তাঁকে৷ ১৯৬৫ সালে মারা যান তিনি৷ হাসপাতালের সমস্যা মূলত একটাই – অর্থ৷ হাসপাতালের পরিচালক হান্সইয়র্গ ফোটুরি জানালেন, গত কয়েক বছর ধরে খুব একটা অনুদান পাওয়া যাচ্ছেনা, ফলে হাসপাতালের আধুনিকায়নের কাজও এগোচ্ছেনা৷ আলব্যার্ট শোয়াইৎসারকে স্থানীয়দের অনেকেই এখন চেনে না৷ অনুদান দেবে কে!
ইবোলার বিরুদ্ধে লড়াই
আলব্যার্ট শোয়াইৎসার হাসপাতালের পাশেই এক গবেষণা কেন্দ্রে চলছে ইবোলার টীকা নিয়ে গবেষনা৷ আফ্রিকান এবং ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন সেখানে৷
জার্মানি থেকে গ্যাবনে
ইবোলার টীকা কতটা কার্যকর তা পরীক্ষা করে দেখা শুরু হয়েছে৷ সেই কাজের তদারকি করছেন ডাক্তার জোসে ফার্নান্দেস৷ জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা অসমাপ্ত রেখে তিনি গ্যাবন চলে যান৷ ৬০ জন সবল স্বেচ্ছাসেবীর দেহে পরীক্ষা করা হচ্ছে এই টীকা৷
সাহসী স্বেচ্ছাসেবী
আন্টোইন মাগাঙ্গা মোম্বো একজন স্বেচ্ছাসেবী৷ রক্ত পরীক্ষা করাতে মাসে একবার অন্তত গবেষণা কেন্দ্রে আসতে হয় তাঁকে৷ ২২ বছর বয়সী মোম্বো জানালেন, টীকা নেয়ায় তাঁর বিশেষ কোনো সমস্যা হচ্ছে না৷ মোম্বো যে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সামলে নিতে পারছেন গবেষকদের জন্য এটা নিশ্চয়ই ভালো খবর৷
দারিদ্র্যে অবলম্বন
মোম্বোকে নিয়ে তাঁর পরিবার গর্বিত৷ তাঁর এক চাচা বললেন, ‘‘এমন কাজ করতে তো সাহস লাগে!’’ বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখেন মোম্বো৷ টীকার ট্রায়ালে অংশ নেয়ার জন্য ৪৪৯ ডলার দেয়া হয় তাঁকে৷ টাকাটা পরিবারের জন্য খুব দরকার! গ্যাস স্টেশনে কাজ করে মোম্বো যা পান তাতে তো সংসার চলেনা৷
তথ্য সংগ্রহ
গবেষণা সংক্রান্ত, বিশেষ করে টীকা প্রয়োগের পর স্বেচ্ছাসেবীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য সংরক্ষণের কাজটি করছেন পাউল পিৎসিঙার৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-র হয়ে কাজ করছেন ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা শাস্ত্রের ছাত্র পাউল৷ আফ্রিকার আরো কয়েকটি দেশ, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রেও চলছে ইবোলা টীকার ট্রায়াল৷ সব জায়গার সব গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যই সংগ্রহ করছে ডাব্লিউএইচও৷
দিনক্ষণ অজানা
পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে ইবোলা টীকার দ্বিতীয় পর্বের ট্রায়াল৷ ল্যামবারেনের প্রকল্প পরিচালক বেট্রাম লেল জানালেন টীকা আদৌ অনুমোদন পাবে কিনা, পেলেও কবে পাবে তা এখনো অজানা৷