1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অবশেষে চালু হল কণার রশ্মি ভাঙার যন্ত্র

৩ এপ্রিল ২০১০

দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে এল সেই প্রায় অলৌকিক মুহূর্ত৷ ‘বিগ ব্যাং' মহা-বিস্ফোরণের ফলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হয়েছিল - এই তত্ত্ব যাচাই করে দেখতে কৃত্রিম উপায়ে তার এক ক্ষুদ্র সংস্করণ পরীক্ষা করতে সমর্থ হলেন৷

https://p.dw.com/p/MmkI
স্কটল্যান্ডের বিজ্ঞানী পেটার হিগসছবি: AP

প্রেক্ষাপট

বিজ্ঞানের ইতিহাসে এর আগে কখনো এত বড় যন্ত্র তৈরি করা হয় নি৷ জেনিভা শহরের কাছে ইউরোপীয় পরমাণু গবেষণা সংস্থা (সিইআরএন) প্রায় ৩৭০ কোটি ইউরো ব্যয় করে ভূগর্ভের একশো মিটার নীচে বৃত্তাকার ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এক সুড়ঙ্গের মধ্যে লার্জ হেডরন কোলাইডার নামের যন্ত্র স্থাপন করেছে৷ তবে একের পর এক গোলযোগের কারণে পরীক্ষার দিন বার বার পিছিয়ে দিতে হয়েছিল৷ অবশেষে মঙ্গলবার ৩০শে মার্চ স্থানীয় সময় দুপুর ১টা বেজে ৬ মিনিটে যন্ত্রটি চালু করা হয়৷ করতালিতে মেতে ওঠেন অলিভার বুখম্যুলার ও অন্যান্য পদার্থবিজ্ঞানীরা৷ অলিভার বলেন, ‘‘আমরা প্রথম সংঘাত দেখতে পেলাম৷ আমরা সবাই এবার অত্যন্ত নিশ্চিন্ত বোধ করছি৷ এ ছিল এক লম্বা দিন৷ দীর্ঘ প্রায় ২ বছর ধরে প্রস্তুতির কাজ চলেছে৷ এই প্রথম সংঘাতের সাক্ষী হতে পারা সত্যি অভাবনীয় এক অভিজ্ঞতা৷''

কন্ট্রোল রুমের বিশাল এলসিডি পর্দায় ভেসে উঠছে পরীক্ষার দৃশ্য৷ কণার রশ্মি ভাঙার এই বিশাল যন্ত্র অত্যন্ত দ্রুত প্রোটনের দুটি রশ্মি নিক্ষেপ করেছে৷ ৭ টেরা-ইলেকট্রন ভোল্ট বা এক লক্ষ কোটি ইলেকট্রন ভোল্টের সর্বোচ্চ সম্ভাব্য মাত্রা অর্জন করে বিজ্ঞানীরা উচ্ছ্বসিত৷

Marko Petek – Front of CMS
কণার রশ্মি ভাঙার এই বিশাল যন্ত্র অনেক রহস্যের সমাধান করবে বলে আশা করা হচ্ছেছবি: CERN/Marko Petek

বিঘ্ন থেকে শিক্ষা

২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম প্রচেষ্টার মাত্র ৯ দিন পরই বিঘ্ন ঘটার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয়েছিল লার্জ হেডরন কোলাইডার যন্ত্র৷ সুড়ঙ্গে এক বিস্ফোরণের ফলে অনেকগুলি অতিকায় চুম্বক ভেঙে পড়ে৷ প্রায় দেড় বছর ধরে মেরামতির কাজ চলে৷ বুখম্যুলার এপ্রসঙ্গে বললেন, ‘‘এই সুড়ঙ্গের প্রায় ২০০ মিটার অংশ অকেজো হয়ে যাওয়ায় যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, তার ফলে আমরা অবশ্যই অত্যন্ত হতাশ হয়েছিলাম৷ তবে গত দেড় বছরে আমরা এই ঘটনা থেকে অনেক শিক্ষা নিয়েছি৷ ফলে এখন আমাদের প্রস্তুতি আগের তুলনায় অনেক ভাল৷''

মেরামতির এই সময় সত্যি কাজে লাগানো হয়েছে৷ হেডরন কোলাইডার আবার পুরোপুরি চালু হয়ে গেছে৷ সুইজারল্যান্ডের পদার্থবিজ্ঞানী গ্যুন্টার ডিসের্টোরি জানালেন, যে এবার পরিমাপের কাজ শুরু করা যেতে পারে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আসলে এখনই কাজ ঠিকমতো শুরু হচ্ছে৷ এখন আমাদের সামনে লক্ষ্য হল আগামী কয়েক মাস ও বছর ধরে সংঘাতের পরিমাপ করে যাওয়া, লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি এমন সংঘাত সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা৷ কোটি কোটি পরীক্ষার মধ্য থেকে কয়েকটিকে বেছে নিতে হবে, যেগুলি সত্যি অনবদ্য৷''

20.09.2009 projekt zukunft LHC 1
অতিকায় যন্ত্র ‘লার্জ হেডরন কোলাইডার’

বিশাল সব ক্যামেরা বা ডিটেক্টর গোটা পরীক্ষার উপর কড়া নজর রেখে চলেছে৷ কোন একটি সংঘাতের ফলে যদি কোন অজানা মৌলিক কণার সৃষ্টি হয়, তা হবে যুগান্তকারী এক আবিষ্কার৷ তখন পদার্থবিদ্যার অনেক রহস্যের সমাধান করা হয়ত সম্ভব হবে – যেমন ‘ডার্ক ম্যাটার' বা ‘ডার্ক এনার্জি' কী, তা সত্যি জানা যাবে৷

‘ঈশ্বর কণা'

আসলে জেনিভার কাছে এই পরীক্ষাকে অনেকেই ঈশ্বরের কাজে হস্তক্ষেপ বা তাঁর সমকক্ষ হয়ে ওঠার উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন৷ তাই কণার রশ্মি ভাঙার যন্ত্র যে কণা নিয়ে কাজ করছে, তাকে বলা হচ্ছে ‘ঈশ্বর কণা'৷ এই কণার ধারণার জন্ম দিয়েছিলেন যে দুই বিজ্ঞানী তাঁদের মধ্যে একজন বাঙালী, সত্যেন্দ্রনাথ বসু৷ এমনকি বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সমস্ত কণাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে যে নামকরণ করা হয়েছে, তার মধ্যেই এই বিজ্ঞানীর কাজের স্বীকৃতি লুকিয়ে রয়েছে৷ প্রথম দলকে বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মির নাম অনুসারে ‘ফার্মিয়ন' এবং আর দ্বিতীয় দলকে সত্যেন বসুর নাম অনুসারে ‘বোসন' রাখা হয়েছে৷ যিনি এই তত্ত্বকে হাতেনাতে যাচাই করার এই দুরূহ কাজে হাত দিয়েছেন, তাঁর নাম পিটার হিগস৷ ৮০ বছর বয়সী স্কটল্যান্ডের এই বিজ্ঞানীর নোবেল জয় এখন শুধু সময়ের প্রশ্ন৷ তবে নোবেল পুরস্কার পান নি সত্যেন্দ্রনাথ বসু, যার কোন যুক্তিগ্রাহ্য কারণ এখনো খুঁজে পাওয়া যায় নি৷ বিজ্ঞানীরা অবশ্য এখনো এই পরীক্ষার সাফল্য সম্পর্কে বেশ সতর্ক রয়েছেন৷ ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে কণার রশ্মি ভাঙার যন্ত্র যেভাবে বিকল হয়ে পড়েছিল, তার ফলে যে সময় নষ্ট হয়, এমন ঘটনা যে আবার ঘটবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই৷ আগাম সতর্কতা হিসেবে ২০১২ সালে ঐ যন্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক বছর বন্ধ রাখা হবে৷ তার পরেই সম্পূর্ণ শক্তি দেখাবে ‘লার্জ হেডরন কোলাইডার'৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক