1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডাক্তারদের কি কোনো দায় নেই?

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দুর্গা প্রতিমার পায়ের কাছে থাকা অসুর ডাক্তারের সাজে৷ সেই নিয়ে ক্ষোভ৷ মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সরাতে হলো প্রতীকী প্রতিবাদ৷ তবে প্রশ্নটা তারপরও থাকছে যে, ডাক্তারদের অসুর রূপে দেখানোর পেছনে কি তাঁদের কোনো দায়ই নেই?

https://p.dw.com/p/2kdrK
Indien Westbengalen Gesundheitssystem, Krankenhäuser
ছবি: DW/P. Samanta

মধ্য কলকাতায়, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটু এগোলেই মোহাম্মদ আলী পার্ক৷ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে এখানকার বারোয়ারি দুর্গাপুজো বহু বছরের পুরনো৷ এখনকার পুজোয় প্রথাগত ধারার বাইরে গিয়ে অন্য আঙ্গিক এবং শিল্পশৈলীর দুর্গাপ্রতিমার যে চল হয়েছে, তার শুরু হয়েছিল ১৯৮০'র দশকে এই মোহাম্মদ আলী পার্কের পুজোতেই৷ এবং সেই প্রতিমার অলঙ্করণে একটা সামাজিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা থাকে প্রতি বছরেই৷ তার মধ্যে চলতি সময়ের গণ-মানসিকতার একটা প্রতিফলন থাকে৷ কিন্তু এবার সেই নিয়ে তুমুল বিতর্ক, কারণ, মোহাম্মদ আলী পার্কে অসুরকে দেখানো হয়েছে ডাক্তারের সাজে৷

ডা. নির্মল হালদার

সম্প্রতি যেভাবে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায়, বা গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যু, চিকিৎসার নামে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা, এমনকি ভুয়া ডিগ্রিধারী জাল ডাক্তার ধরা পড়ার ঘটনা সামনে আসছে একের পর এক, তারই প্রেক্ষিতে৷

কিন্তু রাজ্যের চিকিৎসক মহল তাতে অপমানিত বোধ করেন৷ বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ডাক্তারেরা, সংবাদ মাধ্যমও এই নিয়ে সরব হয়৷ তখন মোহাম্মদ আলী পার্ক পুজো কমিটি ওই ডাক্তাররূপী অসুরের গলা থেকে একটি বোর্ড ঝোলায়, যাতে বলা হয়, অসৎ ডাক্তারদের উদ্দেশেই এই কটাক্ষ৷ যাঁরা সৎ এবং সমাজের সেবায় নিয়োজিত, তাঁদের আহত বা অসম্মানিত করার কোনও উদ্দেশ্য এর মধ্যে নেই৷ কিন্তু তাতেও ডাক্তারদের ক্ষোভ কমে না৷ বরং নানা মহল থেকে অভিযোগ যায় প্রশাসনের কাছে৷ তখন বাধ্য হয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি হস্তক্ষেপ করেন৷ তাঁর নির্দেশে ওই ডাক্তাররূপী অসুরের পরনের সাদা অ্যাপ্রন খুলে নেওয়া হয়, সরিয়ে দেওয়া হয় গলায় ঝোলানো স্টেথোস্কোপ৷

ডা. উদল মুখার্জী

কিন্তু প্রশ্নটা উঠেই গেছে যে, আত্মসম্মানে আঘাত লাগলে ডাক্তাররা প্রতিবাদ করতে পারেন, কিন্তু যখন ডাক্তারদের অসাধুতা ধরা পড়ে, সে জাল ডাক্তারই হোক, বা ভুল চিকিৎসা, তখন কেন তাদের সরব হতে দেখা যায় না?‌ বেসরকারি হাসপাতালে যখন চিকিৎসার বিল ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বাড়িয়ে রোগীর পরিবারকে বেকায়দায় ফেলা হয়, তখন কেন তাঁরা এগিয়ে আসেন না?‌

শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. নির্মল হালদার ডয়চে ভেলেকে জানালেন, বেসরকারি হাসপাতালে যে চিকিৎসার বিল তৈরি হয়, ডাক্তাররা তার ৮ থেকে ১০ শতাংশ পেয়ে থাকেন, নিজেদের পারিশ্রমিক বা পেশাগত ফি হিসেবে, তার বেশি কিছুতেই নয়৷ কাজেই চিকিৎসার নামে ব্যবসার এই ব্যবস্থাটায় ডাক্তাররা শরিক নন৷ তবু তাঁদেরকেই অসুর বানানো হয়, যেহেতু ক্ষুব্ধ রোগী পরিবারের মুখোমুখি তাঁদেরই হতে হয়৷

আর চিকিৎসায় গাফিলতি, বা ভুল চিকিৎসার অভিযোগের জবাবে ডা. হালদারের বক্তব্য, কীভাবে রোগী মারতে হয়, বা কীভাবে ভুল চিকিৎসা করে পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে হয়, এই পাঠ কিন্তু মেডিকেল কলেজে তাঁদের পড়ানো হয় না৷

বরং উল্টোটাই হয়৷ তাঁরা সবসময় চান ১০০ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাক৷ কিন্তু সব সময় সেটা হয় না৷ সেটা ব্যর্থতা এবং খুবই স্বাভাবিক৷ তার জন্য ডাক্তারদের দোষারোপ করা অযৌক্তিক৷

কলকাতার এক বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক ডা. উদয় মুখার্জি অন্য একটি সমস্যার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিউএইচও'র নিয়ম অনুযায়ী, নাগরিক এবং চিকিৎসকের যে অনুপাত থাকা উচিত, ভারতে সেটা নেই, বরং বিস্তর অভাব আছে ডাক্তারের৷ ডা. মুখার্জির মতে, এটা সম্পূর্ণত পরিকাঠামোগত সমস্যা এবং সরকারের ব্যর্থতা৷ সম্ভবত সেই সমস্যার থেকে নজর ঘোরাতেই প্রতি ক্ষেত্রে ডাক্তারদের ভিলেন হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, যার পরিণতি এই ডাক্তাররূপী অসুর!‌

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান