1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অ্যাঙ্গোলায় শিশু মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ

২৫ আগস্ট ২০১০

অ্যাঙ্গোলায় পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই অনেক শিশু ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে৷ জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে ২০১৫ সালের মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার দুই তৃতীয়াংশ কমনোর যে পরিকল্পনা তারা নিয়েছিল, তা এখন সুদূর পরাহত৷

https://p.dw.com/p/OvO0
অনেক শিশু এতই দুর্বল যে কাঁদতেও পারে নাছবি: picture-alliance / dpa

অ্যাঙ্গোলার রাজধানী লুয়ান্ডার ডেভিড ব্যার্নার্ডিনো শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একটি দৃশ্য: বারান্দায় শয়ে শয়ে মা বাবা তাদের অসুস্থ বাচ্চাদের নিয়ে অপেক্ষা করছেন৷ মুমূর্ষু রোগীকেও অপেক্ষা করতে হয় এখানে দীর্ঘ সময়৷ আশেপাশের এলাকাসহ লুয়ান্ডায় প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষ বসবাস করেন৷ তাই হাসপাতালে ভিড়টাও বেশি৷ ৫০০ বাচ্চার দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র ৪ জন চিকিৎসক৷ জরুরি বিভাগের প্রধান ডাক্তার মার্গারিডা করেইয়া জানান, ‘‘বেশির ভাগ বাচ্চাই আসে ম্যালেরিয়া বা মারাত্মক ডায়রিয়া নিয়ে৷ অতিরিক্ত ডিহাইড্রেশনে ও অপুষ্টিজনিত রোগে ভোগে অনেক ছোট শিশু৷ এখানে যারা এসেছে, তাদের বেশির ভাগই খুব ছোট বাচ্চা৷ বছর তিনেকের মধ্যে বয়স তাদের৷''

লুবিনা রোডরিগেস তাঁর অপুষ্টিতে ভোগা জীর্ণ শীর্ণ নাতিকে নিয়ে ভোর পাঁচটা থেকে অপেক্ষা করছেন হাসপাতালের করিডোরে৷ ইতোমধ্যে ১১টা বেজে গেছে৷ তিনি দুঃখ করে জানান, ‘‘বাচ্চাটা অত্যন্ত অপুষ্টিতে ভুগছে৷ আমি তার নানি৷ বাচ্চার মা বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ৷ প্রথমে কেউ খেয়াল করেনি৷ অনেক দেরিতে বাচ্চাটাকে এই অবস্থায় দেখি আমি৷ তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে এসেছি ওকে৷ আমার মনে হয় ওর মায়ের টিবি হয়েছে৷ তাই এই বাচ্চার দেখাশোনা করার দায়িত্ব এখন আমার ওপরই পড়েছে৷ পাঁচ বাচ্চা নিয়ে ওর মা হিমশিম খাচ্ছে৷ কাউকে সাহায্যের জন্য ডাকেওনি সে৷ তাই বাচ্চাটার এই হাল হয়েছে৷ তবে আমি আশা ছাড়িনি৷ ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস আছে আমার৷''

Mutter mit krankem Kind
হাসপাতালে বেশির ভাগ বাচ্চাই আসে ম্যালেরিয়া বা মারাত্মক ডায়রিয়া নিয়েছবি: DW

অনেক শিশু এতই দুর্বল যে কাঁদতেও পারে না তারা৷ করিডোরের অন্য দিকে আরেক বাচ্চাকে দেখা যাচ্ছে৷ নল দিয়ে কৃত্রিমভাবে খাদ্য দেয়া হচ্ছে তাকে৷ শিশুটির ১৬ বছরের মা জানায়, ‘‘আমি বাচ্চাকে খাবার দিলেও খেতে পারেনা৷ এই হাসপাতালে আমাকে বলা হয়েছে যে, বাচ্চাকে ভিটামিনযুক্ত খাবার দিতে হবে৷ কিন্তু এই সব খাবার কেনার সামর্থ্য আমার নেই৷ আমি রাস্তায় জিনিস ফেরি করে জীবন চালাই৷ বাচ্চাটা অসুস্থ হওয়ায় কাজও বাদ দিয়েছি৷ শিশু মেয়েটির বয়স ১৫ মাস৷''

ডাক্তার মার্গারিডা কোরেইয়া জানালেন, ‘‘প্রত্যেক দিনই আমাদের জরুরি বিভাগে যথাসাধ্য চেষ্টা সত্ত্বেও বহু শিশু মারা যাচ্ছে৷ অন্তত ছয় জন তো হবেই৷ এই সংখ্যাটা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এখন প্রতিদিন ১০০ কঠিন রোগাক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা করছি আমরা৷ দুই বছর আগেও এই সংখ্যাটা ছিল গড়ে ৬০৷ অনেক মা বাবাই আমাদের কাছে বাচ্চাদের নিয়ে আসেন তখন, যখন বেশ দেরি হয়ে যায়৷ হাসপাতালে ছয় ঘন্টার মধ্যেই মারা যায় অনেক বাচ্চা৷''

পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুর মৃত্যুর হার হ্রাস হওয়ার কোনো লক্ষণই এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছেনা অ্যাঙ্গোলায়৷ সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, ও আফগানিস্তানের পাশাপাশি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু মারা যায় অ্যাঙ্গোলায়৷ প্রতি এক হাজার জন্মে মারা যায় ১৮২টি শিশু৷ জার্মানিতে এই সংখ্যাটা চারেরও কম৷ খনিজ সম্পদের দিক দিয়ে অ্যাঙ্গোলা এখন আফ্রিকার সবচেয়ে ধনী দেশগুলির অন্যতম৷ খনিজ তেল রপ্তানিকারক দেশ হিসাবেও প্রথম দিকে অবস্থান দেশটির৷ কিন্তু এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেকে লাভবান হচ্ছেন কেবল ওপর তলার কিছু সংখ্যক ব্যক্তি৷ সাধারণ জনগণের ধরাছোঁয়ার বাইরে এখনও এই অগ্রগতি৷ স্বাস্থ্যব্যবস্থা অত্যন্ত বিপর্যস্ত৷ বড় বড় হাসপাতালেও ডাক্তার, ওষুধপত্র,ও সাজ সরঞ্জামের অভাব প্রকট৷ এ প্রসঙ্গে ডাক্তার মার্গারিডা বলেন, ‘‘হাসপাতালে জায়গা, বেড, বলা যায় সব কিছুরই অভাব৷ কয়েক বছর ধরে এখানে ৩৫টি বেডই রয়েছে৷ অথচ দ্বিগুণ সংখ্যক বেডের প্রয়োজন আমাদের৷ কোনো কোনো বেডে দুই থেকে তিন জন রোগীকে রাখা হয়৷ অ্যাঙ্গোলার অন্যান্য অঞ্চলের অবস্থা আরো কাহিল৷ তাই অনেক দূর থেকেও অসুস্থ বাচ্চারা আমাদের কাছে আসে৷''

Unterernährtes Kind
ডিহাইড্রেশনে ও অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে অনেক ছোট শিশুছবি: DW

অ্যাঙ্গোলার রাজধানীতে ৫ লক্ষ মানুষ বসবাস করবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছিল৷ কিন্তু এখন এখানে ৬০ লক্ষ অধিবাসী বাস করেন৷ দূষিত বাতাস ও পানীয় জলের কারণে ডায়রিয়া ও শ্বাসপ্রশ্বাসের অসুখে আক্রান্ত হয় অনেকে৷ এর মধ্যে অধিকাংশই শিশু৷ পাঁচ শতাংশ মানুষ এইচ আই ভি ভাইরাসে আক্রান্ত৷ মানুষের গড় আয়ু মাত্র ৪৪ বছর৷ ৩৮ শতাংশ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন৷ অ্যাঙ্গোলার স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দুর্দশা দূর করতে হলে বিশেষ করে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে জাতিসংঘের সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে হলে রাজনীতিকদের চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে, বিশাল বিশাল দালানকোঠা নির্মাণের পরিবর্তে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন