1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আকাশপথের খাবারে চাই আরো ঝাল-নুন-মশলা

১৫ নভেম্বর ২০১০

জার্মানির ফ্রাউনহফার ইন্সটিট্যুটের গবেষকরা বিমানে পরিবেশন করা খাবার সম্পর্কে এক মজার তথ্য প্রকাশ করেছেন৷ তা হল - বিমানের খাবারে নাকি লবণ, ঝাল আর অন্যান্য মশলা আরো বেশি চাই৷

https://p.dw.com/p/Q8ad
আকাশেও চাই পছন্দসই খাবারছবি: BilderBox

ভোজনরসিক ভ্রমণবিলাসী যারা প্রায়শই আকাশচারী হন এতক্ষণে নিশ্চয়ই মশলাদার সব সুস্বাদু খাবারের ছবি চোখের সামনে হাজির করেছেন৷ বিমানের মেপে মেপে কম মশলায় রাঁধা সব খাবারের পরিবর্তে পুরোন দিল্লির কিংবা ঢাকাই সব ঝাল-ঝাল, মশলাদার খাবারের লিষ্টি নিশ্চয়ই জিভে জল আনছে৷ ধৈর্য ধরুন৷ সামনে সুদিন আসছে৷

এর পেছনের কারণ খতিয়ে দেখতে যাওয়ার আগে গবেষকদের মাথায় যে প্রশ্নটি খেলেছিল, সেটি হচ্ছে- খাবারের সময় কেন অধিকাংশ বিমানযাত্রী বেশি বেশি টম্যাটো সসের চাহিদা জানায়? আর কেন এমন হয়, তা জানতেই জার্মানির লুফথ্হানসার পক্ষে এক গবেষণা চলানো হয়েছিল৷

বিমানের ভেতরের আবহাওয়া আর পরিবেশটি কেমন থাকে যারা বিমানে চড়েন, তাঁদের প্রত্যেকেই বিষয়টি জানেন৷ আর্দ্রতা থাকে মাত্র পনেরো শতাংশ, বিমানের শব্দে আরোহীর চারপাশে ঠিক যেনো এক ধোঁয়াটে সাদা চাদরই মেলা থাকে৷ বায়ুচাপের কল্যাণে শরীরের তরল উর্ধ্বমুখী৷ এরকম এক পরিস্থিতিতে তৃষ্ণা বেড়ে যায়, শ্বাসও কম প্রবাহিত হয়৷ ফলে ঘ্রাণশক্তিরও খানিক কম-বেশি হয়৷

Beinfreiheit im Airbus 380
বিমানের ভেতরে আর্দ্রতা থাকে মাত্র পনেরো শতাংশ

ফ্রাউনহফার ইন্সটিট্যুটের ড. ফ্লোরিয়ান মায়ার এই বিষয়গুলো নিয়েই পরীক্ষা নীরিক্ষা চালাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘এ খানিকটা ঠান্ডা লেগে যাওয়ার মতোন বিষয়৷ কারণ, যখন আপনার সর্দি হয় তখন নাক বন্ধ হয়ে ঘ্রাণশক্তির বারোটা বাজে৷ শুধু তাই নয়, স্বাদের অনুভূতিটিও কমে যায়৷ ঠিক এমনটা বায়ুচাপ কমে গেলেও ঘটে৷'

এ'কারণেই লুফথ্হানসা আর এর ক্যাটারিং সহযোগী এলএসজি ফ্রাউনহফার ইন্সটিট্যুটকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করেছিল যে, ১০ হাজার মিটার উঁচুতে কোন ধরণের খাবার খেতে ভালো লাগবে আর কোনটি লাগবে না৷ জানা গেছে, এই গবেষণার জন্য একটি বিমানের সামনের অংশটিতে ৩০ মিটার দীর্ঘ টিউবাকৃতি চেম্বার তৈরি করা হয়েছে৷ যার ভেতরের বায়ুচাপটি নিয়ন্ত্রিত এবং স্বাভাবিকের চাইতে অনেক কম৷ ফ্লোরিয়ান মায়ার এসম্পর্কে বলেন, এখানে আমরা আর্দ্রতার পরিমাণ রেখেছি ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে৷ আকাশে থাকার সময়টিতে বিমানের ভেতরে যে পরিবেশটি থাকে সর্বার্থে তেমন একটি পরিবেশেরই সৃষ্টি করেছেন তারা৷তিনি বলেন, যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, আমরা সেই সমুদ্র পৃষ্ঠের চাইতেও এর ভেতরের চাপটি কম রেখেছি৷ ভূপৃষ্ঠে যা নয়শো পঞ্চাশ হেকটো প্যাসকাল কিন্তু বিমান যখন আকাশে থাকে, তখন এর ভেতরের বায়ুচাপটি থাকে সাতশো পঞ্চাশ থেকে আটশোর মধ্যে৷

জানা গেছে, এই টিউবকৃতি চেম্বারটির ভেতরে আকাশ যাত্রায় বিমানের ভেতরের পরিবেশটি যেমন থাকে, ঠিক তেমন পরিবেশই তৈরি করা হয়েছে৷ এর আসনগুলো কাঁপে ঠিক যেমনটি বিমানে হয়, শব্দের বিষয়েও একই কথা৷ এর ভেতরে বিমানের মতোই শব্দ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ আর খাবারের মেনুতেও৷ বিমানে দেওয়া খাবারের ফর্দের মতোই খাবার দেওয়া হয় এখানে ৷ অবশ্য কিছু খাবার থাকে, যা এই চিরাচরিত ‘আকাশে খাবার'-এর চাইতে একেবারেই আলাদা৷

এই পরীক্ষা নীরিক্ষা থেকে ফ্রাউনহফার ইন্সটিট্যুট-এর গবেষকরা যতখানি জেনেছেন৷ তাতে তারা বুঝেছেন যে, আকাশ যাত্রায় খাবার হতে হবে কড়া পাকের৷ মানে ঝালে-মশলায় চনমনে আর কি৷

ফ্রাউনহফার ইন্সটিট্যুটের এই গবেষণাটির সার্বিক দেখ-ভাল করছেন যিনি, সেই ড. ফ্লোরিয়ান মায়ারের মতে, মশলাদার খাবার, যেমন থাই বা ইন্ডিয়ান খাবার এই পরিবেশে দারুণ খাপ খাবে৷ কারণ, এই খাবারের স্বাদটি সবসময়ই এক থাকে৷ এর মশলাদার ঝাল-ঝাল ভাবটি কখনো কমে যায় না৷ কিন্তু সাদা সসে মাছ, এ'জাতীয় খাবারে বাড়তি মশলা ঢেলে নিয়ে তবেই স্বাদ বাড়াতে হয়৷ অবশ্য লুফথ্হানসা তার বিমানের খাবারের ফর্দে বাড়তি কোনো সুরুয়া জাতীয় খাবার যুক্ত না করলেও এর ক্যাটারিং সার্ভিসটি ইতোমধ্যেই সরবরাহ করা ব্রেডরোলে বাড়তি লবণ বা নুন যুক্ত করেছে৷

গবেষকরা আরেকটি মজার প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছিলেন যা শুরুতেই বলা হয়েছিল৷ শ্রোতা-পাঠকদের মনে আছে? ঠিক আছে, আবারো বলছি৷ আকাশ যাত্রায় কেন মানুষ এতো বেশি টম্যাটোর জ্যুস খায়? লুফথ্হানসা তার বিমানের খাবারের সঙ্গে বছরে কমবেশি ১.৭ মিলিয়ন লিটার কেবল টম্যাটোর জ্যুসই সরবরাহ করে৷ হতে পারে টম্যাটোর এই রস একই সাথে লবণ আর ঝালের কাজ করে৷ কিন্তু ড. মায়ার বলেছেন ভিন্ন কথা৷ তিনি বলেছেন, ‘বায়ুচাপের সঙ্গে সঙ্গে টম্যাটোর স্বাদও বদলাতে থাকে৷ তাই মাটিতে বা ভূপৃষ্ঠে যে টম্যাটোর জ্যুস বা রসের বদনাম, সেটির স্বাদই আকাশে উড়লে সুস্বাদু এক ভিন্নতায় বদলে যায়৷ কারণ হচ্ছে কম বায়ুচাপে নাকি টম্যাটোর স্বাদের খোলতাই বাড়ে!

ড. মায়ার আরো বলেছেন, কম বায়ুচাপের কারণে আকাশে কফি খেতে একেবারেই যা তা লাগে৷ যে কোন ‘ডেজার্ট'-এ আরো চিনি ঢেলে তবেই এর মিষ্টি ভাবটা আনতে হয়৷ অনেক বিমানেই আকাশে যেসব খাবার পরিবেশন করা হয় তার তালিকায় স্থায়ী আসন গেড়েছে আগে থেকে প্যাক করা স্যান্ডউইচ, কিছু মাঝারি মানের সাদামাটা খাবার আর যৎসামান্য পানীয়৷

এখন পর্যন্ত গবেষণায় যা মিলেছে তাতে বলা যায়, আকাশে খাবারের ফর্দে টম্যাটোর রস টিকে থাকবে বহুকাল৷ যতক্ষণ পর্যন্ত না আরো নতুন কোন ঝাল-মশলাদার খাবার কিংবা স্বাদ বাড়ায় এমন মুখরোচক খাদ্য বিমানের ফর্দে যুক্ত না হচ্ছে৷ আরেকটি কথা, গবেষণাটির চূড়ান্ত পরীক্ষা বা নীরিক্ষা যাই বলি না কেন, সেটি ঘটতে যাচ্ছে এই ডিসেম্বরেই৷ সুতরাং ভোজন রসিকরা আগামী বছর আকাশে উড়লে চাইকি পেয়েও যেতে পারেন রসনায় তৃপ্তি জাগানো সব ঝাল-মশলাদার স্বাদু খাবার৷

প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক