1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আত্মহত্যার অধিকার রয়েছে সুইজারল্যান্ডে

৬ সেপ্টেম্বর ২০১০

আত্মহত্যা করার অধিকার কি সবার আছে? বাংলাদেশে আত্মহত্যার চেষ্টা করা কিন্তু ফৌজদারি অপরাধ৷ কিন্তু তারপরেও মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় নিজের জীবন প্রদীপ নেভানোর৷

https://p.dw.com/p/P53S
সুইজারল্যান্ডের ডিগনিটাস সংস্থার সাহায্য নিয়ে আত্মহত্যা করছেন একজনছবি: AP

সুইজারল্যান্ডের ডিগনিটাস সংস্থা সাহায্য করে মানুষকে আত্মহত্যা করতে৷ সম্প্রতি এই সংস্থার কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে৷ সংস্থার কর্মকাণ্ড নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন তুলছেন বিভিন্ন আইনজীবীরা৷ জুরিখ লেকের গভীরে অসংখ্য ভস্মাধার খুঁজে পাওয়ার পর ডিগনিটাস'এর ঘাড়ে তার দোষ পড়ে৷ বলা প্রয়োজন, সুইজারল্যান্ডে আত্মহত্যা করার স্বপক্ষে বেশ কিছু আইন রয়েছে, তবে সেই আইনে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে যে আর্থিক সুবিধা আদায়ের জন্য কখনোই কাউকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া যাবে না৷ ডিগনিটাসের এই কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছে৷ তারা দাবি জানিয়েছে সরকারের কাছে পুরো বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখার জন্য৷

লেক জুরিখ, শান্ত একটি দুপুর৷ কিন্তু এই লেকের গভীরে রয়েছে কয়েক ডজন ভস্মাধার৷ রাজনীতিবিদ ডানিয়েল সুটার জানালেন, ‘‘আমরা প্রথমে খুবই বিস্মিত হয়েছি৷ এটা অবিশ্বাস্য ! আমরা নিশ্চিত, ডিগনিটাস আর্থিক সুবিধা আদায় করেছে এই মানুষগুলোর কাছ থেকে৷ অসংখ্য ভস্মাধার জমিয়ে রাখা একটা বড় সমস্যা, তাই এই সংস্থা লেকে ভস্মাধার ফেলে দিচ্ছে৷ ডিগনিটাস এবং তার মালিক লুডভিশ মিনেলি সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ করছে না, তারা নিজেদের স্বার্থে কাজ করছে৷ তাঁকে যদি টাকা দিয়ে বলা হয় ‘এই কাজটি এভাবে করতে হবে' সে নির্দ্বিধায় সে কাজটি করবে৷ ''

জুরিখের রাজনীতিবিদ ডানিয়েল সুটার খোলাখুলিভাবেই বললেন, যে তিনি নিশ্চিত ডিগনিটাস ভস্মাধারগুলো জুরিখ লেকে ফেলে যায়৷ তাঁর এই যুক্তিকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে ডিগনিটাসে কর্মরত সাবেক একজন নার্সের বক্তব্য৷ সোরাইয়া ভের্নলি জানান, ‘‘ঘটনাটি ঘটেছিল গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে৷ মিনেলি আমাকে নিয়ে জুরিখ লেকে যায়৷ আমরা সেখানে পৌঁছানোর পর তিনি তার গাড়ির পেছনের ডালা খোলেন৷ তা ভর্তি ছিল ভস্মাধারে৷ তিনি একটি স্ক্রু ড্রাইভারের সাহায্যে ভস্মাধার থেকে নাম গুলো খুলতে থাকেন৷ তারপর সব ছুঁড়ে দেন লেকে৷ আমার চোখের সামনে তা একবার হয়েছে৷ আমি একবারই দেখেছি৷''

Flash-Galerie Welternährung
এমন সুন্দর দেশের মানুষও আত্মহত্যা করতে চায়ছবি: AP

সুইজারল্যান্ডের সংবিধান অনুযায়ী আর্থিক সুযোগ সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে কাউকে আত্মহত্যায় সাহায্য করা যাবে না৷ ডিগনিটাসের মালিক লুডভিশ মিনেলি জানালেন, তিনি অনৈতিক বা অবৈধ কোন কাজ করছেন না৷

ডিগনিটাসের বোর্ডের সদস্য মাত্র দু'জন৷ একজন লুডভিশ মিনেলি অপরজন কে তা তিনি জানাননি৷ যারা আত্মহত্যা করতে চায়, তারা ২০০ ডলার দিয়ে সদস্য হয়৷ এরপর যদি আত্মহত্যা সফল হয় বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন তাঁর কাছ থেকে নেওয়া হয় সাত হাজার ডলার৷ কিন্তু ডিগনিটাস কীভাবে চলে, তা কেউই জানেন না৷ সুইজরল্যান্ডের আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র সেসব মানুষই আত্মহত্যা করার অধিকার রাখে, যারা ভীষণভাবে অসুস্থ এবং তাদের সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই৷ অথচ ডিগনিটাস গুরুতর অসুস্থ নয় – এমন মানুষকেও সাহায্য করেছে আত্মহত্যা করতে৷ মিনেলি নিজেই বললেন, ‘‘প্রতিটি মানুষের অধিকার রয়েছে আত্মহত্যা করার৷ যারা মানসিক রোগী, তাদের বেলাও একই কথা খাটে৷ আমি মনে করি, আত্মহত্যা শুধু অসুস্থ মানুষ নয় সুস্থ মানুষেরও করার অধিকার রয়েছে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধ যিনি অসুস্থ নন, ঘুরছেন-ফিরছেন, তিনি আত্মহত্যা করতে চান৷ কারণ তাঁর পরিবারের কেউই বেঁচে নেই, তার কোন বন্ধু-বান্ধবও নেই৷ তাহলে কেন তিনি বেঁচে থাকবেন? আর কেনই বা আমরা তাঁকে সাহায্য করবো না ?''

আর ঠিক এ ধরণের ঘটনাগুলো নিয়েই সবচেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছেন ডানিয়েল সুটার৷ তাঁর মতে আত্মহত্যার মূল লক্ষ্য হল কাউকে যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি দেওয়া৷ কিন্তু ডিগনিটাস তা ব্যবহার করছে একটি অস্ত্র হিসেবে৷ সুটারের আশঙ্কা, ‘‘আগামী ২০ বছরে এদেশে বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা আরো বাড়বে৷ তখন আমরা কী করবো ? সবাইকে আত্মহত্যা করতে বলবো ? অসুস্থ হলে টাকা-পয়সা খরচ করতে হবে না৷ ডিগনিটাসের সাহায্যে আত্মহত্যা করতে হলে কোন ক্লিনিকে যাওয়ার প্রয়োজন নেই৷ প্লেন থেকে নেমে সোজা চলে যাবেন নির্দিষ্ট চিকিৎসকের কাছে৷ এর কয়েক ঘণ্টা পরেই আপনি নেই৷ জুরিখের কোন এক শীতল ঘরে আপনি মারা গেছেন৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন