1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আধিকার হারানোর ভয় আফগান নারীদের

৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০

আফগানিস্তানে তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে আপোসের পথে গেলে মেয়েদের স্বাধীনতা আবার ভীষণভাবে খর্ব হবে, এই আশঙ্কা করছেন সেখানকার নারী সমাজের অনেকে৷ ফরিদা তারানা তাঁদেরই একজন৷

https://p.dw.com/p/LvxW

আফগান সমাজের বছরের পর বছর ধরে চলে আসা সনাতন রীতি নীতি, প্রাণহানির হুমকি এবং নারী বৈষম্য - এসব কিছুকে পায়ে ঠেলে ফরিদা তারানা নিজেকে করে তোলেন একজন পপ তারকা৷ পরে তিনি হয়ে ওঠেন তালেবান-উত্তর আফগানিস্তানে নারী রাজনীতির এক প্রকাশ্য ছবি৷ এখন তাঁর ভয়, তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে রফা হলে মেয়েদের স্বাধীনতা আর থাকবেনা৷

ফরিদা তারানা বর্তমানে স্থানীয় সংসদ সদস্যা৷কট্টর ইসলামপন্থি তালেবান শাসক গোষ্ঠীর আমলে মেয়েদের স্কুল কলেজে যাওয়া, বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করায় বাধা ছিল৷ ২০০১ সালে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হবার পর থেকে আফগান মেয়েরা এগিয়ে গেছেন৷ ফরিদা তারানা সেই অগ্রযাত্রারই এক নাম দৃষ্টান্ত৷

আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত তালেবান বিদ্রোহীদের সঙ্গে আপোশ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন৷ আর এর ফলে তারানা এবং অন্য আফগান নারীরা ভীত হয়ে পড়েছেন৷ তাঁরা মনে করছেন, তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে রফা হলে তাদের বহু কষ্টের অর্জন বৃথা হয়ে যাবে৷ তারানা বলেন, শান্তির পক্ষে তিনিও কিন্তু নারী স্বাধীনতার মূল্যে নয়৷ ২০০৫ সালে ‘‘অ্যামেরিকান আইডল'' টেলিভিশন ট্যালেন্ট-শোর আদলে তৈরি ‘আফগান স্টার' শোতে তিনি অংশ নেন এবং রাতারাতি তারকার মর্যাদা পেয়ে যান৷

Karsai / Afghanistan / London
আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইছবি: AP

ফরিদা শুধু প্রতিভাধর নন, সাহসীও৷ ভালবাসার গান ও পপ গান গেয়ে আফগান তরুণদের মধ্যে তারানা খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন৷ কিন্তু কট্টর ইসলামপন্থি মহল আর উগ্র বিভিন্ন গ্রুপ তাঁর বিরুদ্ধে জোর প্রচার শুরু করে৷ তাদের অভিযোগ, তারানা আফগানিস্তানের ধর্মীয় আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ভঙ্গ করছেন৷

তিনি জানান, শুধু উগ্রপন্থিরাই নয় তাঁর নিজের আত্মীয়স্বজনরাও তাঁর এ কাজে বাধা দিয়েছে৷ বলেছে, তাঁর এ কাজ করা উচিত না৷ এমনকি তাঁর প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়৷ টেলিফোনে অনামা ব্যক্তিরা তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়৷

ফরিদা তারানা বলেন, এ ধরণের হুমকিই তাঁকে পেশাদার গায়িকার জীবন আরও সংহত করতে তাঁকে করে তোলে আরও দৃঢ়সংকল্প, আরও উচ্চাকাঙ্খী৷ একের পর এক নতুন রেকর্ড করতে শুরু করেন তিনি৷ খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে তাঁর৷ খ্যাতির সঙ্গে আসে বিত্ত আর বৈভব৷

কাজটা সহজ ছিলনা৷ কারণ আফগানিস্তানের মানুষ মেয়েদের গান করাকে ভাল চোখে দেখেনা, বলেছেন তারানা৷ আর একজন গায়িকার রাজনীতিক হওয়া ছিল আরও বেশি কঠিন ব্যাপার৷ কাবুলের প্রাদেশিক পরিষদের একটি আসনে প্রার্থী হন তিনি গত আগষ্ট মাসের নির্বাচনে৷ সব রকমের বিরোধী প্রচারকে নস্যাৎ করে দিয়ে তিনি জয়ী হন৷ ভোট পান ৮,৪২১৷ যা ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ৷ এবার তাঁর লক্ষ্য সেপ্টেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া৷

আফগান সংসদ সদস্য ও নারী অধিকারবাদী সাবরিনা শাকিব বলেন, তালেবান আমলের বর্বরতা এখনো আফগান মেয়েরা ভুলতে পারেননি৷ তালেবান গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তির পরিকল্পনা সফল হবেনা৷ তবে সফল যদি হয় তাহলে আফগান মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷

এখন আফগানিস্তানের সংবিধানের অধীনে নারী-পুরুষের অধিকার সমান৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক নারী সংগঠন বলছে, মেয়েরা এখনও দেশে সবচেয়ে প্রান্তিক এবং অধিকারহীন অবস্থায় রয়ে গেছে৷ আফগান ঐতিহ্যের নামে এখনও তারা সহিংসতা আর বৈষ ম্যের শিকার হয়ে চলেছে৷

প্রতিবেদক : আসফারা হক

সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক