1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের এক দশক পূর্তি

৮ নভেম্বর ২০১০

গত ১০ বছর ধরে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার উপরে মহাকাশের সীমানায় বিরাজ করছে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন৷ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে ভাসমান এই গবেষণাগার৷

https://p.dw.com/p/Q1Hj
ছবি: AP

মানবজাতির সব সাফল্যের মত স্পেস স্টেশনও প্রথম দিকে জনমানসে যে আগ্রহের সৃষ্টি করত, আজ তা অনেক কমে গেছে৷ অথচ ২০০০ সালের ২রা নভেম্বর যখন মহাকাশে মানুষের এই স্থায়ী আস্তানা চালু হলো, তখন বিস্ময় যেন কাটছিল না৷ শুধু প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়, অতীতের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে বিশ্বের সব মহাকাশ শক্তি একযোগে কাজ করলে কী ফল পাওয়া যায়, তারও প্রথম দৃষ্টান্ত দেখা গেল৷ ১৫টি দেশ মিলে তিলে তিলে তৈরি করেছে স্পেস স্টেশন৷ তবে প্রকল্পের প্রথম সারিতে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপ, জাপান ও ক্যানাডার মহাকাশ সংস্থাগুলি৷ শীতল যুদ্ধ শেষ হওয়ার ঠিক পরেই রুশ-মার্কিন সহযোগিতার দ্রুত ফল দেখতে পেয়েছিল গোটা বিশ্ব৷ সেদিন রুশ মহাকাশচারী ইউরি গিডজেঙ্কো ও সের্গেই ক্রিকালেভ এবং মার্কিন মহাকাশচারী বিল শেপার্ড পাশাপাশি ভাসতে ভাসতে স্পেস স্টেশনে প্রবেশ করেছিলেন৷ বিগত এক দশকে প্রায় ২০০ মহাকাশচারী এই স্টেশনে থেকে গেছেন এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আওতার বাইরে ৬০০রও বেশি পরীক্ষা চালিয়েছেন৷ গত বছর থেকে স্টেশনে স্থায়ীভাবে ৬ জন থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷

মঙ্গলবার দশম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে স্পেস স্টেশনেও ছোটখাটো এক উৎসব হয়ে গেল৷ সেসময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন ৩ মার্কিন ও ৩ রুশ মহাকাশচারী৷ সেদিন ছিল বিশেষ ভূরিভোজের আয়োজন৷ মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা'র প্রধান চার্লস বোল্ডেন তাঁদের শুভেচ্ছা বার্তা শোনান৷ তিনি বলেন, স্টেশনের দ্বিতীয় দশকে এই স্টেশনকে ভিত্তি করে আমরা মহাকাশের আরও গভীরে পৌঁছতে পারবো৷ স্পেস স্টেশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মানুষ মঙ্গলগ্রহ ও আরও দূরে যাবার শিক্ষা অর্জন করছে৷ নাসা'র আইএসএস প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান মাইক সাফ্রেডিনি বলেন, মানবজাতি এর আগে সম্ভবত এত দুরূহ কাজ করতে পারে নি৷

Europäisches ISS-Labor Columbus bereit zur Übergabe Titel
ছবি: ESA / D.Ducros

জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত স্পেস স্টেশন গড়ে তোলার কাজ কিন্তু শেষ হয় নি৷ আসলে একটি করে মডিউল বা অংশ পৃথিবী থেকে নিয়ে এসে মহাকাশেই গড়ে তোলা হচ্ছে এই পরিকাঠামো৷ প্রতিনিয়ত তাতে যোগ করা হচ্ছে নতুন কোনো অংশ, বা বদলানো হচ্ছে পুরানো কোনো অংশবিশেষ৷ বর্তমানে গোটা স্টেশনের আয়তন প্রায় এক ফুটবল মাঠের মতো৷ তবে মহাকাশচারীদের থাকার জায়গা অনেকটা ৫টি ঘরের এক ছোট বাড়ির মতো৷ আগামী বছর এই নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ার কথা৷

এতকাল মার্কিন ‘স্পেস শাটল' বা মহাকাশফেরী ভারি বস্তুগুলি স্পেস স্টেশনে নিয়ে আসতো৷ সপ্তাহান্তে স্পেস শাটল ‘ডিসকভারি'র এক অভিযানে স্পেস স্টেশনে যোগ হবে নতুন একটি ঘর, যা তৈরি করেছে ইটালির মহাকাশ সংস্থা৷ এতকাল এই অংশটিকে পরিবহনের কাজে লাগানো হত৷ এখন এটি একটি স্থায়ী ঘর হিসেবে স্টেশনের অংশ হয়ে উঠবে৷ আগামী বছর স্পেস শাটল কর্মসূচি চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পরিবহন একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে৷ স্পেস স্টেশনে যাতায়াতের জন্য অবশ্য মহাকাশচারীরা রাশিয়ার অপেক্ষাকৃত ছোট অথচ নির্ভরযোগ্য ‘সোয়ুজ' মহাকাশযান ব্যবহার করতে পারবেন৷

প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের পাশাপাশি এত বড় কর্মকাণ্ড চালু রাখার আর্থিক ব্যয়ভার ও ব্যবস্থাপনার দিকটিও ফেলনা নয়৷ বিশেষ করে দুনিয়াজুড়ে সরকারি স্তরে বর্তমানে ব্যয় কমানোর যে উদ্যোগ চলছে, তার কোপ মহাকাশ অভিযানের উপর পড়া অত্যন্ত স্বাভাবিক৷ মার্কিন প্রশাসনও এমন অনেক অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্ত্বেও কংগ্রেস আপাতত ২০২০ সাল – অর্থাৎ আরও এক দশকের জন্য আইএসএস প্রকল্পের জন্য আর্থিক সহায়তা দেবার অঙ্গীকার করেছে৷ এর আগে ২০১৫ সালেই এই সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছিল৷ এই অনিশ্চয়তা কেটে যাবার ফলে স্পেস স্টেশনে আরও নতুন পরীক্ষা চালানোর পথ প্রশস্ত হয়ে গেল৷ তবে বিশাল ব্যয়ভারের কারণে গোটা প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বার বার যে প্রশ্ন ওঠে, তা বন্ধ হয়ে যাবে – এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই৷

আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে শুধু মহাকাশচারী নয়, ঘুরে গেছেন ৭ জন পর্যটকও৷ এমন এক বিরল অভিজ্ঞতার জন্য অবশ্য পকেট থেকে ২ কোটি ডলার বেরিয়ে যায়৷ দৈনিক ব্যয় সম্পর্কে কিছু তথ্যই একটা সার্বিক ধারণা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট৷ আসলে যে কজন মানুষই থাকুক না কেন, গোটা বছর ধরে পৃথিবীর বুক থেকে ৩৫০ কিলোমিটার উপরে তাদের মৌলিক প্রয়োজন মেটানো বড় একটা চ্যালেঞ্জ৷ খাদ্য, পানীয়, জামাকাপড় থেকে শুরু করে সব রসদই আসে পৃথিবী থেকে৷ টয়লেট-বাথরুমের জন্য জলের সরবরাহ ও বর্জ্য পদার্থ দূর করাও জটিল এক প্রক্রিয়া৷ জনপ্রতি খাবার খরচ দৈনিক প্রায় ৩৫০ ইউরো৷ সপ্তাহে ৭ দিন একই খাবার খেতে হয়৷ পাঁউরুটি নিষিদ্ধ, কারণ তার গুঁড়ো স্টেশনের পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে৷ তবে গত ১০ বছরে এই স্টেশন যথেষ্ট বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক