আপনি চুল রং করেন, নাকি করবেন?
জার্মানিতে শতকরা ৫০ জন মেয়েই চুল রং করেন আর ইউরোপের অন্যান্য জায়গায় এই হিসেব তো প্রায় ৭০ শতাংশ৷ বাঙালি মেয়েদের ক্ষেত্রেও এই হিসেব দিনদিন বাড়ছে৷ চুলে রং করার কিছু তথ্য পাবেন এই ছবিঘরে৷
কেশবতী কন্যা, মেঘবরণ চুল
মেয়েদের সৌন্দর্যের অপর নাম সুন্দর চুল! যে কোনো মানুষকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতে চুলের ভূমিকা বিশাল৷ চুলের স্টাইল যেমন চেহারা পাল্টে দেয়, তেমনি চুলের রংও৷ পশ্চিমা বিশ্বে আগে থেকেই মেয়েদের চুলে রং করার ফ্যাশন রয়েছে৷ তাছাড়া ইউরোপের দেশগুলোয় সোনালি চুলের রয়েছে বিশেষ কদর ,অর্থাৎ স্বর্ণকেশীরাই নাকি বেশি সুন্দরী৷ তাই অনেকেই চুল রং করে স্বর্ণকেশী হতে চান৷
বাঙালি নারীর চুল
আগেকারদিনে বাঙালি নারীর সৌন্দর্যই ছিল মাথাভর্তি লম্বা ঘন কালো চুল৷ এই চুল নিয়ে আমাদের কবি, সাহিত্যিকরা কত কথাই না লিখেছেন! চুল পেকে গেলে তা ঢাকতে বা বয়স কিছুটা কমাতে চুলে রং লাগানো হতো৷ যুগের সাথে চুলের ফ্যাশনেও এসেছে অনেক পরিবর্তন৷ লম্বা কালো চুল অনেক তরুণীর কাছেই কিছুটা একঘেয়ে৷ তাই সময়ের সাথে তাল মেলাতে আজকাল তারা চুলের রং পাল্টায়৷
সোনালী চুল
বেশিরভাগ জার্মানদের চুলের রং বাদামি বা কিছুটা হালকা৷ তাই যাঁরা চুল গাঢ় বাদামি বা কালো করতে চান, তাঁদের জন্য সেটা কোনো সমস্যা নয়৷ তবে যাঁরা নিজের চুলের রঙের চেয়ে হালকা বা বাদামি চুলকে সোনালি করতে চান, তাঁদের জন্য কিছু সমস্যা আছে৷ ‘‘এতে চুল রুক্ষ এবং শুকনো হয়ে যাবার ভয় থাকে৷’’ বলেন মিউনিখ শহরের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. প্যাটরিশিয়া অগিলভি৷
কেমিকেলে অ্যালার্জি
ত্বক বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘‘যাঁদের মাথার ত্বক সংবেদনশীল তাঁরা অবশ্যই পার্লারে গিয়ে চুলে রং করাবেন৷ মাথার ত্বকে সরাসরি রং না লাগিয়ে শুধু চুলে রং দেবেন, যাতে ত্বক কেমিকেল থেকে দূরে থাকে৷ এছাড়া জীবনে প্রথমবার চুলে রং দেওয়ার আগে অবশ্যই হাতের ত্বকে বা অন্য কথাও রং লাগিয়ে রেখে কয়েক ঘণ্টা পর অ্যালার্জি বা কোনো প্রতিক্রিয়া হয় কিনা তা কিনা পরীক্ষা করে নেবেন৷’’
রং করার নিয়ম
‘‘চুলে রং দেয়ার দুই-একদিন আগে চুলে শ্যাম্পু না করাই ভালো৷ এতে মাথার ত্বক অ্যাসিড সুরক্ষায় সাহায্য করে এবং চুল ভালোভাবে রং-কে গ্রহণ করে৷ বিশেষকরে সংবেদনশীল মাথার ত্বকের জন্য বিশেষভাবে এ কথা প্রযোজ্য৷’’ বলেন মিউনিখের এক পার্লারকর্মী রোজা লিটসমান৷
বিশেষ যত্ন
রং লাগানোর পর মাথার ত্বকের জন্য ‘প্যাক’ লাগানো জরুরি৷ এটা তিলের তেলের হতে পারে, যা চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হওয়া থেকে রক্ষা করে৷ রং করা চুলকে বিশেষভাবে যত্ন নিতে হয়, অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত৷ কারণ এতে চুল রুক্ষ তো হয়ই না, বরং চুলের চকচকে আভা বজায় থাকে৷
চুলে হাইলাইট
চুলের ওপরের ভাগের সামান্য কিছু অংশ অনেকেই লাল বা ব্লন্ড, অর্থাৎ ‘হাইলাইট’ করেন৷ এটা করলে চুল বেশ আকর্ষণীয় দেখায়৷ তবে হাইলাইট করার পর যদি কারো মনে হয় যে, রং একটু বেশি হয়ে গেছে, তবে ‘অ্যান্টি ড্যানড্রফ’ বা খুসকি দূর করার শ্যাম্পু ব্যবহার করলেই সেই অতিরিক্ত রং-এর ভাবটা কমে যাবে৷
হেয়ার ড্রায়ার
চুল শুকানোর জন্য কখনোই অতিরিক্ত তাপ ব্যবহার করবেন না৷ এতে চুল খশখশে হয়ে যায় এবং দেখতেও অস্বাস্থ্যকর মনে হয়৷ এছাড়া রং দেওয়ার ঠিক পর পর বেশি রোদ লাগলে চুলের রং কমে না, এ কথা ঠিক৷ তবে এতে চুল শুষ্ক হয়ে যায়৷ আসলে চুলের জন্য ভিটামিন ‘ই’ যেমন জরুরি, তেমনি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও দূরে থাকা দরকার৷
রঙিন চুলের জন্য বিশেষ শ্যাম্পু
যাঁরা চুল রং করেন তাঁদের জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে জরুরি, তা হচ্ছে চুল যেন কোনোভাবেই শুকনো এবং খশখশে না হয়৷ দু-তিন দিন পর পর রঙিন চুলের জন্য বিশেষ শ্যাম্পু এবং তার সঙ্গে একটি বিশেষ কন্ডিশনার ব্যবহার করুন৷ সেটা কিন্তু ঘৃত-কুমারী বা কাঠবাদাম তেলও হতে পারে৷ আরো ভালো হয়, যদি চুল শ্যাম্পু কার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে একবার মাথা ধুয়ে হালকা করে মুছে ফেলা যায়৷
ছেলেদের চুল
আজকাল শুধু এই প্রজন্মের মেয়েরা নয়, ছেলেরাও চুলে রং করে থাকেন৷ তবে সেটা মেয়েদের তুলনায় অনেক কম৷ অবশ্য অনেক বয়স্ক পুরুষ পাকা চুল বা দাড়ি ঢাকতে তা রং বা মেহেদি (বানান ও উচ্চারণভেদে মেহেন্দি) করে থাকেন ৷
সোজা চুল
মেয়েদের জন্য একদম সোজা চুলই আজকের যুগের ফ্যাশন৷ যাঁদের চুল খুব কোঁকড়ানো, হালকা কোঁকড়ানো বা একটু ভাজ – তাঁদের জন্য বাজারে রয়েছে ‘হেয়ার স্ট্রেইটনার’ বা চুল সোজা করার ইলেক্ট্রনিক মেশিন৷ তবে অতিরিক্ত গরম করে নিয়মিত এই যন্ত্রটি ব্যবহার করলে চুলের ক্ষতি হয়, চুল ভেঙে ও রুক্ষ হয়ে যায়৷ তাই এটা নিয়মিত ব্যবহার না করাই উচিত, বলেন রোজা লিটসমান৷