1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শকুনি বাঁচাও

ইয়ুর্গেন শ্নাইডার/এসি২৪ নভেম্বর ২০১৫

শকুনি বলতেই অনেক মানুষের গা ঘিন ঘিন করে ওঠে, বা ভয় লাগে! আসলে এই পাখিগুলো জীবজগৎ ও মানুষের পক্ষে অতি উপকারী৷ কিন্তু আফ্রিকান ওঝাদের টোটকা ওষুধ তৈরির জন্য প্রতিবছর শ'য়ে শ'য়ে শকুনি মারা হয়৷

https://p.dw.com/p/1HAk8
tote Geier
ছবি: Andre Botha

ফিলি মথলাদেসি তাঁর অ-কেতাবি জড়িবুটি কেনার জন্য জোহানেসবার্গের মুতি বাজারে যান৷ ফিলি হলেন একজন সাঙ্গোমা, অর্থাৎ প্রথাগত আফ্রিকান ওঝা৷ এই বাজারে তিনি তাঁর ওষুধের সব রকম উপাদানই পান, যদিও সেজন্য কিছু কিছু বিরল প্রজাতিকে প্রাণ দিতে হয়৷ তার মধ্যে শকুনিও রয়েছে৷ এই ধরনের একটি পাখি কিনতে পড়ে প্রায় ২০০ ইউরো৷

ফিলি মথলাদেসি বলেন: ‘‘ওরা প্রধানত চোখগুলো আর মাথাটা ব্যবহার করে৷ তাতে নাকি ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া যায় – এই পাখিগুলো বহুদূর থেকে দেখতে পায় কিনা৷ কাজেই এটা অন্যান্য জড়িবুটির সঙ্গে দিতে হয়৷ পুড়িয়ে গন্ধ শোঁকা যায়৷ সেই ধোঁয়া যখন নাকে-মুখে ঢোকে, তখন স্বভাবতই ভবিষ্যৎ পর্যন্ত দেখা যায়৷''

আসলে সাঙ্গোমা-রা ওষুধের জন্য কোনো জীবজন্তু মারতে পারেন না, জানালেন ফিলি৷ কিন্তু চাহিদা এতো বেশি যে, প্রতিবছর শয়ে শয়ে শকুন মেরে এ ধরনের বাজারে বিক্রি করা হয়৷ শকুনদের জন্য এর ফলশ্রুতি ভয়াবহ৷ আফ্রিকায় গত ত্রিশ বছরে শকুনদের সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে৷

বিষ দিয়ে মারা

আন্দ্রে বোথা ‘এনডেঞ্জারড ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট' প্রকৃতি সংরক্ষণ সংগঠনের কর্মী৷ তিনি যে কর্মসূচির দায়িত্বে রয়েছেন, তার উদ্দেশ্য হল, আফ্রিকার শকুনদের রক্ষা করা৷ শকুনরা হল মহাদেশটির আবর্জনা পরিষ্কার করার দায়িত্বে৷ তারা জন্তুজানোয়ারের মরাপচা লাশ খেয়ে তা থেকে রোগ ছড়ানো রোধ করে৷ শকুনদের সবচেয়ে বড় শত্রু হল বিষ, বললেন বোথা, সহজে পাওয়া যায়, আবার সস্তাও বটে৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে যা দেখছেন, তা হল এই যে, এই পাখিগুলোকে খাবারের লোভ দেখিয়ে কাছে নিয়ে আসাটা কতো সহজ৷ দুঃখের বিষয়, চোরাশিকারীরাও সে ভাবেই কাজ করে৷ একমাত্র পার্থক্য হল, ওরা বিষাক্ত টোপ ব্যবহার করে৷ পাখিগুলোকে মেরে ফেলে, তারপর সেগুলোকে বেচে টাকা পায়৷''

শকুনদের রক্ষা করা খুব শক্ত কাজ৷ পাখিগুলো দিনে চারশো কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে৷ কাজেই শকুন মরলে তার প্রভাব কোনো দেশে সীমাবদ্ধ থাকে না৷ যেগুলো বাঁচে, তাদের অনেকেই শেষমেষ ব্রায়ান জোনস-এর হাতে এসে পড়ে৷ ব্রায়ান আহত জন্তুজানোয়ারদের জন্য একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি করেছেন৷ বহু শকুন হাই-টেনশন বিদ্যুতের তারে লেগে প্রাণ কিংবা অঙ্গ হারায়৷ ব্রায়ানের পুনর্বাসন কেন্দ্রে তাদের খাইয়ে-দাইয়ে সুস্থ করে আবার সম্ভব হলে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ যদিও তাদের ভবিষ্যৎ যে কতোটা নিশ্চিত, তা বলা শক্ত৷

মোহোলোহোলো ওয়াইল্ডলাইফ রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের প্রধান ব্রায়ান জোনস বলেন: ‘‘বাসা ছাড়ার পর পাখিগুলোর পঁচাত্তর ভাগ এক বছরও বাঁচে না৷ বিশ্বব্যাপী শিকারী পাখিদের নিয়ে গবেষণা করে এ কথা জানা গিয়েছে৷ কাজেই তাদের সংখ্যা আবার বাড়বে কী করে? গতবছর এখানে প্রায় দু'হাজার শকুনিকে বিষ দিয়ে মারা হয়েছে৷ সেটা কী দিয়ে পূরণ করব? ওদিকে প্রতিবছর অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে৷ এটা একটা সংকট৷ শিগগীরই আকাশে আর কোনো শকুন দেখতে পাওয়া যাবে না৷''

উইং ট্যাগ, রিং, হারনেস

পশুপাখি সংরক্ষণকারীদের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল মানুষজনকে শেখানো৷ শিশু ও যুবগোষ্ঠীরা পাখিগুলোর সংস্পর্শে এসে শেখে, এই শকুনরা আফ্রিকার প্রকৃতির জন্য কতোটা অপরিহার্য৷ শকুনরা কীভাবে বেঁচে থাকে, তা নিয়েও গবেষণা করা অত্যন্ত জরুরি৷ এক পর্যায়ে গবেষক তা নিয়ে ব্যস্ত৷ সেজন্য প্রচুর ধৈর্যের প্রয়োজন আর সেই সঙ্গে দৌড়নোর ক্ষমতা!

বোথা বলেন: ‘‘আমরা এই পাখিগুলোকে ধরে উইং ট্যাগ লাগাই, পায়ে রিং লাগাই, কিছু কিছু ক্ষেত্রে হারনেস পরাই, যাতে তারা কোথায় যাচ্ছে, তা ট্র্যাক করা যায়: দক্ষিণ আফ্রিকায় তাদের রেঞ্জ বরাবর তারা কোথায় তাদের খাবার পায় - এই সব জুড়ে আমরা একটা ধারণা পাই, তারা কোথায় বিপদে পড়তে পারে৷''

সেই সব বিপদগুলোকে যতোদূর সম্ভব দূরে রাখাই হল আন্দ্রে বোথা-র লক্ষ্য, যাতে আফ্রিকার আকাশে ভবিষ্যতেও শকুনিদের ধীরগতিতে চক্কর দিতে দেখা যায়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য