1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আবহাওয়াজনিত দুর্যোগে মানুষের স্বাস্থ্যহানি

২১ ডিসেম্বর ২০১০

ঝড়, বন্যা, খরাপ্রবাহের কারণে গত দুই দশকে সারা বিশ্বে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ মারা গেছে৷ সম্প্রতি পরিবেশবাদী সংগঠন জার্মান ওয়াচ ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়ার যে সূচক প্রকাশ করেছে, তাতেই দেয়া হয়েছে এই তথ্য৷

https://p.dw.com/p/QhCx
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বন্যাছবি: AP

জলবায়ু ও আবহাওয়ার চরম পরিবর্তন মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব৷ আবহাওয়াজনিত বিপদ আপদ রোধ করার জন্য অন্যান্য দেশের মত জার্মানিতেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন৷ এই মত প্রকাশ করলেন বন শহরের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রসচিব ইউর্গেন বেকার৷

তাঁর ভাষায়, ‘‘তাপ প্রবাহ মানুষকে অত্যন্ত পীড়িত করে তোলে, যেমনটি ঘটেছিল ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে৷ হৃদযন্ত্রের অসুখে আক্রান্ত হয়ে জার্মানিতেও মারা গেছে অনেকে৷ বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের বৃদ্ধিও আমাকে চিন্তিত করে তোলে৷ শুধু পানিতে ডুবে বা দুর্ঘটনাতেই নয়, নোংরা পানি ও ছত্রাকজনিত অসুখ বিসুখেও মারা যায় বহু মানুষ৷''

জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে চরম আবহাওয়াজনিত দুর্ঘটনা ও রোগব্যাধিও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন জার্মান আবহাওয়া দপ্তরের সহপরিচালক পাউল বেকার৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমরা লক্ষ্য করছি, সারা বিশ্বেই তাপমাত্রা ওপরের দিকে উঠছে৷ গরম দিন ও উষ্ণ রাতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এই রকম গ্রীষ্ণমণ্ডলীয় আবহাওয়া চলতে থাকলে, অর্থাৎ তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামার সংখ্যা কমে আসতে থাকলে, তার প্রতিক্রিয়া মানুষের শরীরের ওপরও পড়বে৷''

Dürre in China Flussbett getrocknet
চীনে খরাছবি: picture-alliance/ dpa

চরম আবহাওয়া মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যে ক্ষতিকর প্রভাব রাখছে তা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বিগ্ন৷ জানিয়েছেন ডাব্লিউএইচও'র ইউরোপ দপ্তরের কর্মকর্তা স্রোডান মাটিচ৷ তিনি বলেন, ‘‘২০০৩ সালে সংঘাতিক গরম ছিল আবহাওয়া৷ ইউরোপের এই অত্যন্ত গরম আবহাওয়ার সরাসরি প্রতিক্রিয়ায় আনুমানিক ৭০ হাজার মানুষ মারা যায়৷ বৃদ্ধ বৃদ্ধারা, শিশু এবং আশ্রয়হীন মানুষরাই এই রকম আবহাওয়ায় বিশেষভাবে হুমকির মুখে পড়ে৷ এই তো এবারকার গ্রীষ্ণেও রুশ ফেডারেশনে উত্তপ্ত আবহাওয়ার কারণে মৃত্যুর বর্ধিত হার লক্ষ্য করা গেছে৷ মাত্র দু সপ্তাহে এই রকম চরম আবহাওয়ায় ১০ থেকে ২০ হাজার মানুষ বেশি মারা গেছে৷''

অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ মেয়াদের সাংঘাতিক গরম আবহাওয়ার সময় পরোক্ষভাবেও বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে৷ যেমন ধরা যাক, পানির ঘাটতির কারণে স্বাস্থ্যগত সমস্যাও দেখা দিতে পারে৷ এই রকম পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, বলেন আবহাওয়াবিদ পাউল বেকার৷ যেমন নির্ভরযোগ্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস, কার্যকর বিপদ সংকেতপদ্ধতি ও সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে৷

পাউল বেকার আরও বলেন, ‘‘এই রকম এক পদ্ধতি হল গ্রীষ্মকালীন বিপদ সংকেত ব্যবস্থার উন্নয়ন৷ অর্থাৎ মানুষকে নির্দিষ্ট তথ্য দিতে হবে৷ এর ফলে বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাদের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে আগেই, কিংবা খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনা সহজ হবে৷ বন্যাপ্রতিরোধের জন্য উঁচু দালানও নির্মাণ করা যেতে পারে৷ বাভারিয়া ও বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্য এদিক দিয়ে এগিয়ে আছে৷ ভবিষ্যতের দিকে নজর রেখে বন্যা প্রতিরোধের জন্য উঁচু দালানকোঠা নির্মাণ করা হচ্ছে এই সব রাজ্যে৷''

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ মাটিচ বলছেন, চরম আবহাওয়ায় অভ্যস্ত হয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে, তবে একই সঙ্গে আমাদের জীবনযাত্রার পদ্ধতি বদলানোর ব্যাপারেও প্রস্তুত থাকতে হবে৷ তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে ঘরবাড়ি বানাতে হবে অন্যভাবে৷ ঘর গরম ও ঠাণ্ডা রাখার নমনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷ অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে বেঁচে থাকার শিক্ষা নেয়াটাই আসল কথা৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক