1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আফগানিস্তানের মানুষ সন্ত্রাসী নয়'

২৯ জুলাই ২০১৬

আফগান শরণার্থী ও নিরাপত্তাকর্মী আমির নাজিয়ারজাদেহ মিউনিখে আততায়ীর আক্রমণের সময় প্রায় ২০০ মানুষকে সুরক্ষা দেন৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন সেই মুহূর্তের আতঙ্কের কথা৷ জানালেন তাঁর স্বপ্ন, ইচ্ছের কথাও৷

https://p.dw.com/p/1JXcY
Deutschland Amir Najjarzadeh
আফগান নিরাপত্তাকর্মী আমির নাজিয়ারজাদেহছবি: Privat

২০ বছর বয়সি আমির নাজিয়ারজাদেহ মিউনিখের অলিম্পিয়া শপিং সেন্টারে নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করেন, যেখানে চলতি মাসে এক যুবক, সম্ভবত একজন উগ্র ডানপন্থি, সাধারণ মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে৷ গুলির শব্দ শুনেই তৎপর হয়ে ওঠেন নাজিয়ারজাদেহ, উদভ্রান্ত হয়ে ছুটোছুটি করতে থাকা প্রায় ২০০ মানুষকে বেসমেন্টের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসেন৷

নাজিয়ারজাদেহ কিন্তু নিজেই একজন শরণার্থী, যিনি আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে জার্মানি চলে এসেছিলেন প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে৷ তাই মিউনিখ-কাণ্ডে তাঁর ভূমিকা একটি চমৎকার বার্তা বয়ে এসেছে এমন এক সময়ে, যখন একের পর এক হামলার ফলে শরণার্থী এবং অন্যদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে৷

ডয়েচে ভেলের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে নাজিয়ারজাদেহ জানান, এ ঘটনায় সন্ত্রাসীরা তার দেশের নামে যে ‘কলঙ্ক' ছড়াচ্ছে, তার একটা ভিন্ন চিত্র তুলে ধরতে পেরে তিনি আনন্দিত৷

ডিডাব্লিউ: আপনার নাম জার্মান মিডিয়ায় শিরোনাম হচ্ছে কিছুদিন ধরেই৷ কী করে ব্যাপারটা ঘটলো?

নাজিয়ারজাদেহ: আমি যা করেছি তা এমন কোনো মহান কাজ নয়৷ আমি মানবিকতার খাতিরেই কাজটা করেছি৷ জার্মান হোক আর শরণার্থী, সব মানুষই সমান৷ যদি পারতাম, তবে সেই আক্রমণকারীর মুখোমুখি হতাম আর তার অস্ত্র কেড়ে নিতাম৷ কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল না৷ আমার পক্ষে যা সম্ভব ছিল, তা ছিল ঐ মানুষগুলোকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা৷ পুলিশ আমাদের জানায় যে, আক্রমণকারী সম্ভবত ভবনের ভেতরেই আছে৷ তাই আমি সবাইকে বেসমেন্টে নিয়ে আসি৷ আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজন শিশু ও একজন গর্ভবতী নারীও ছিলেন৷ তাঁদের নীচে পৌঁছে দিয়ে আমি আবারো শপিং এরিয়ায় ফরে আসি, এটা দেখতে যে জায়গাটা তখন নিরাপদ কিনা৷

আমার কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল না৷ আসলে আমি নিজেও ভয় পেয়েছিলাম৷ সব সময় ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং অন্যান্য সন্ত্রাসীদের এমন বীভৎস সব কর্মকাণ্ডের কথা শুনে থাকি আমরা৷ তাই সে সমস্তই আমার মাথার মধ্যে ঘুরছিল৷ আমি নিজের জন্য নয়, বরং এই মানুষগুলোর জন্য ভয় পাচ্ছিলাম৷ পুরোটা সময় আমার মনে হচ্ছিল, সেই আততায়ী এ ভবনে চলে আসবে আর এই নিরপরাধ মানুষগুলোর ওপর আক্রমণ করবে৷ আমার নিজের জীবন সেই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না৷ আমি একজন নিরাপত্তারক্ষী৷ তাই অন্যদের নিরাপত্তা দেয়া আমার দায়িত্ব৷

সাম্প্রতিককালে এ রকম সন্ত্রাসী হামলা যারা ঘটিয়েছে, তারা সাধারণত সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান বা ইরানের মতো দেশ থেকে ইউরোপে এসেছিল, শরণার্থী হয়ে৷ এ ব্যাপারটাও কি আপনার মাথায় ঘুরছিল?

আমি ভ্যুর্ৎসবুর্গে কুড়াল আক্রমণের কথা শুনেছি৷ প্রথমে বলা হয়েছিল আক্রমণকারী আফগান৷ পরে জানা গেল সে আসলে পাকিস্তান থেকে এসেছিল৷ পুরো ঘটনার সময় আমার মনে হচ্ছিল, আক্রমণকারী যেন আফগান বা মুসলিম না হয়৷ এরা ইসলামের এবং তাদের নিজেদের দেশের নাম কলঙ্কিত করেছে, যা আমাদের জন্য লজ্জার৷

আপনি কি নিজেকে ‘হিরো' মনে করেন?

সব আফগানদের নাম এই একটা ভালো কাজ করতে পেরে আমি খুশি৷ আমি চাই এখানকার মানুষ জানুক যে, আমরা সন্ত্রাসী নই৷ মানে আফগানিস্তানের মানুষ সন্ত্রাসী নয়৷ বিশ্বজুড়ে যারা আতঙ্ক ছড়ায়, তারা আমরা নই৷ জার্মানি জানুক যে, আমরা এমন কিছু করতে পারি না৷ আমাদের কিছু দেয়া হলে আমরা তার প্রতিদান দেই৷ আশা করি, সেই বার্তাটি আমি পৌঁছাতে পেরেছি৷

সাক্ষাৎকার: আমানুল্লাহ জাওয়াদ, অনুবাদ: ফাহমিম ফেরদৌস

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য