ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতার পাঠকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সুন্দরবনের এই বিপর্যয় রোধে কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে তাঁরা মনে করেন? এর উত্তরে বেশিরভাগ পাঠকেরই মতামত এই পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া উচিত৷
পাঠক অপু লিখেছেন, ‘‘বাঙালি বলে আমরা সুন্দরবনকে কদর করতে জানি না৷ অন্য দেশের মানুষ ঠিকই এর কদর জানে৷ আমাদের পাশের দেশ ভারত ‘ঐটুকু' বনকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরে৷ আর আমাদের ‘হিউজ' পরিমাণ বন আছে, কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত তার ক্ষতি করে যাচ্ছি৷''
খান সালমান মনে করেন জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিলেই এ ধরণের বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব৷ প্রিন্স সুদীপ চক্রবর্তীরও তাঁর সাথে একমত৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি মনে করি সুন্দবনের ভেতর দিয়ে কোনে তেলবাহী জাহাজ যেন না চলাচল করে৷''
-
মহাবিপর্যয়ের মুখে সুন্দরবন
শেলা নদীতে ট্যাংকার দুর্ঘটনা
৯ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার ভোরের দিকে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কাছে শেলা নদীতে সাড়ে তিন লাখ লিটারের ফার্নেল ওয়েলবাহী ট্যাংকার ডুবির পর, ছড়িয়ে পড়েছে তেল৷ সুন্দরবনের ৩৪ হাজার হেক্টর এলাকায় এরই মধ্যে তেল ছড়িয়ে পড়েছে বলে বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷
-
মহাবিপর্যয়ের মুখে সুন্দরবন
পরিবেশ বিপর্যয়
তেল ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করে বন সংরক্ষক জানিয়েছেন, এই তেলের ক্ষতিকর প্রভাব এখনই বোঝা যাবে না৷ একটু সময় লাগবে৷ তেলের কারণে সুন্দরবনের গাছপালা আস্তে আস্তে শুকিয়ে মারা পর্যন্ত যেতে পারে৷ সুন্দরবনের নদী-খালে অন্তত ৩০০ প্রজাতির মাছের বিচরণ রয়েছে ছোট প্রজাতির কিছু মাছ এরই মধ্যে মরতে শুরু করেছে৷
-
মহাবিপর্যয়ের মুখে সুন্দরবন
বিশ্ব ঐতিহ্যের জন্য বিপর্যয়
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তেল ক্রমেই যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে এই বিশ্ব ঐতিহ্যের জন্য বিপর্যয় বয়ে আনতে পারে৷
-
মহাবিপর্যয়ের মুখে সুন্দরবন
যেসব এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে তেল
শেলা নদীর মৃগমারী, আন্ধারমানিক, তাম্বুলবুনিয়া, হরিণটানা, শুয়ারমারা, জিউধরা, ধানসাগর, নন্দবালা, হারবাড়িয়া, চাঁদপাই স্টেশন কার্যালয়, মরাপশুর, জংড়া, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র, ঢাংমারী, ঘাঘড়ামারী ও লাউডোব এলাকায় তেল ভাসছে বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তারা৷
-
মহাবিপর্যয়ের মুখে সুন্দরবন
ডলফিন দেখা যাচ্ছে না
শেলা নদীর জয়মনি এলাকাটি ডলফিনদের অভয়াশ্রম৷ সেখানে একটু পর পর ডলফিন লাফিয়ে উঠত৷ স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছেন, তেল ছড়িয়ে পড়ার পর মঙ্গলবার বিকাল থেকে আর কোনো ডলফিন উঠতে দেখা যাচ্ছে না৷ তেলের কারণে তারা হয় মরে গেছে অথবা দূরে কোথাও সরে গেছে৷
-
মহাবিপর্যয়ের মুখে সুন্দরবন
গাছে গাছে তেলের আবরণ
বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুন্দরবনের ওই সব এলাকায় সুন্দরী গাছ বেশি৷ শেলা নদী সংলগ্ন বনের সুন্দরী, কেওড়া, বাইনসহ গুল্ম জাতীয় গাছের পাতায় তেলের আবরণ লেগে রয়েছে৷ কোথাও কোথাও জোয়ারের পানি বনভূমিতে উঠে বনের গাছের শ্বাসমূলে লেগে আছে তেল৷
-
মহাবিপর্যয়ের মুখে সুন্দরবন
ডলফিনদের রক্ষা
নদী থেকে তেল দ্রুত অপসারণ করা না গেলে বিরল প্রজাতির ডলফিনের এই অভয়াশ্রম রক্ষা করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা৷
লেখক: অমৃতা পারভেজ
মহসিন কবিরের মন্তব্য, ‘‘সৈয়দ সাদাত আলী সরকারের পদত্যাগ করা, কারণ এরাই চালু করেছে এই রিভারওয়ে৷''
এইচ ডি সবুজ এ ব্যাপারে খুবই হতাশ, তাঁর ধারণা, ‘‘বলে লাভ নাই''৷ পাঠক হৃদয় খানও তাঁর সাথে একমত৷
ইউনেস্কো ঘোষিত ‘বিশ্ব ঐতিহ্য' সুন্দরবনের বিপর্যয় রোধ করতে ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাঠক শাহজাদা হোসেন শিবলু এ ব্যাপারে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছেন৷
পাঠক সবুজের মত পুরোপরি ভিন্ন মত৷ কারণ যে সময় পরিবেশকে বাঁচানো নিয়ে নিয়ে সারা বিশ্বে চলছে নানা গবেষণা, ঠিক সেসময় শরিফুল ইসলাম সবুজ সুন্দবনকে রক্ষা করা সম্পর্কে লিখেছেন, ‘‘জাহাজ ভালোভাবে চলার জন্য সুন্দরবনের সব গাছ কেটে ফেলা দরকার৷''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ