1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান তরুণদের ভাবনা

মাডেলাইন মায়ার/আরবি২৫ নভেম্বর ২০১৩

বিশেষজ্ঞদের মতে জার্মান অর্থনীতি ২০১৪ সালে ফুলেফেঁপে উঠবে৷ তবে অর্থনীতিকে চাঙা করতে হলে আরো বেশি কাজ করতে হবে, করতে হবে বেশি করে কেনাকাটা৷ এমনকি জিনিসপত্র ভালো থাকলেও বাতিল করতে হবে৷

https://p.dw.com/p/1AMxD
‘কতটা হলে পর্যাপ্ত হয়?’ছবি: DW/M. Meier

‘‘আমাদের জীবনে কতটা জিনিস যথেষ্ট?'' ২৩ জন অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে লিসা একটি ওয়ার্কশপে যোগ দিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন৷ শনিবার সকালের একটি দিন৷ ১১টার একটু পরেই বিছানা ছাড়তে হয়েছে তাঁকে৷ ম্যুন্সটার থেকে ডর্টমুন্ডে শহরের একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে৷ অনুষ্ঠানের মটো: ‘‘প্রাচুর্যের দিনগুলি শেষ হয়ে গেছে''৷ তবে এই রকম কোনো দিন লিসার জীবনে এসেছিল কিনা মনে করতে পারেন না এই ছাত্রী৷ তাঁর বয়স ২৯৷ ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি৷ ‘‘আমি ধনী৷ তবে আমার কখনও বেশি অর্থ ছিল না'', হাসতে হাসতে বলেন লিসা৷ পোশাক-আশাক বেশিরভাগই উপহার হিসাবে পান৷ কিংবা অন্যান্যদের সঙ্গে বদলাবদলি করে নেন৷ শেষ ছুটি কাটাতে যান ফ্রান্সে, রাস্তায় ‘হিচ হাইক' করে বা হাত তুলে অন্যের গাড়ি থামিয়ে৷

Portrait Lisa Tschorn
লিসাছবি: DW/M. Meier

বিলাসদ্রব্য পরিহার করা

নিকো পিচ-ও সচেতনভাবেই বিলাসদ্রব্য পরিহার করছেন৷ তাঁর কোনো মোবাইল টেলিফোন নেই, নেই গাড়িও৷ শেষবার কবে নিজের জন্য সৌখিন কোনো জিনিস কিনেছিলেন, এই প্রশ্নের উত্তরে একটু চিন্তা করে উত্তর দেন তিনি, ‘‘একটা সেকেন্ড হ্যান্ড সিডি''৷ নিকো পিচ অল্ডেনবুর্গ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর৷ মানুষের অফুরন্ত চাহিদার গতিটাকে একটু মন্থর করতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি৷ বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়৷ নিকো পিচের ভাষায়, ‘‘আমাদের একটি মাত্র শরীর৷ তাই আমাদের অর্জন শুধুই বাড়তে পারে না৷ তবু আমরা অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র জোগাড় করছি৷ কোন অধিকারে?''

পিচ লক্ষ্য করেছেন, আগের চেয়ে আজকের তরুণদের মধ্যে অনেকেই ধারণ ক্ষমতার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন৷ কিন্তু তাদের সংখ্যাটা খুব বেশি নয়৷ লিমোনেডের বদলে জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন কোনো ‘সফট ড্রিংক' পান করলেই যে ‘লাইফ স্টাইল' বদলে যাবে এমন কোনো কথা নেই৷ মানুষের চিন্তাধারারই পরিবর্তন দরকার৷ চাহিদা কমাতে হবে৷ কমাতে হবে জিনিসপত্র কেনার আকাঙ্খা৷ ত্যাগের মাধ্যমেই সম্পদের সাশ্রয় হবে৷ কেননা মনে রাখতে হবে আমাদের সম্পদ সীমিত৷

Prof. Niko Paech
অর্থনীতিবিদ নিকো পিচছবি: Universität Oldenburg

কেউ কেউ অনুপ্রাণিত

পিচের এই ধ্যানধারণায় অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে এসেছেন টোমাস ফোরব্রিগার৷ ৩৫ বছর বয়স্ক এই ব্যক্তি আজকের এই ওয়ার্কশপটি পরিচালনা করছেন৷ অর্থ যে শুধুই এক জড় পদার্থ এটা বোঝাতে তাঁকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে৷ অনেক বিস্মিত দৃষ্টির সামনে পড়তে হয়েছে তাঁকে৷ অংশগ্রহণকারীদের তিনি অনুপ্রাণিত করতে চেষ্টা করেছেন, যাতে প্রত্যেকেই এই সামাজিক সিস্টেমকে পরিবর্তন করতে কিছু না কিছু অবদান রাখতে পারে৷ টোমাস নিজেও নয়টা-পাঁচটা চাকরির ব্যাপারে উৎসাহ দেখাননি৷ এর ফলে যে সময় পাওয়া গেছে সেটা অন্য কাজে লাগাতে পেরেছেন ৷ যেমন কোনো কিছু মেরামত বা তৈরি করার কাজে৷ বাগানের কাজেও মন দিতে পারছেন৷

টোমাস ফোরব্রিগারের সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশেরই বয়স ২০-র কিছু বেশি৷ এদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ মার্লিন শোয়ারৎসে৷ বয়স ১৮৷ সামনের বছর স্কুল ফাইনাল বা ‘আবিটুর' দেবে সে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘স্কুলে আমি এসব বিষয়ে জানতে পারি না, যাতে আমার আগ্রহ রয়েছে৷ সে জন্যই আমি এখানে এসেছি৷'' সে আশা করে সমমনা মানুষজনের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে এই সেমিনারে৷ স্কুলে সহপাঠীরা তাঁর দিকে অনেকটা বাঁকা চোখে তাকায়৷ কারণ মার্লিনের কোনো স্মার্টফোন নেই, নেই ফ্যাশনমাফিক পোশাক-আশাক৷ বন্ধু-বান্ধবরা ‘ফাস্ট ফুড' খেতে গেলে উপবাস করে সে৷ ‘‘এইভাবে আমি নিজেকে বহিরাগত করে ফেলছি'', জানায় মার্লিন৷ জার্মানিতে আমাদের কী যথেষ্ট জিনিসপত্র রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে মার্লিনে বলে, ‘‘শুধু যথেষ্ট নয়, অনেক বেশি আছে৷''

Portrait Marleen Schwarze
মার্লিন শোয়ারৎসেছবি: DW/M. Meier

অনেক কিছু ত্যাগ করা কষ্টকর

সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের জন্য ছোট্ট একটা বিরতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ বায়ো চকলেট ও ফেয়ার ট্রেড-এর বাদাম খেতে খেতে আলোচনা করে ছেলে-মেয়েরা৷

২১ বছর বয়সি জেসকো গ্যোটিং-ও যোগ দিয়েছে সেমিনারে৷ বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন ধরে চিন্তাভাবনা করছে সে৷ তবে সে বাস্তববাদী৷ ‘‘আবর্জনা পৃথক করা কিংবা মাঝে মাঝে গাড়ি না চালানো, বিষয়টি আমি সঠিক বলেই মনেই করি৷ কিন্তু এশিয়া বা দূরের কোনো দেশে প্লেনে করে যেতে হলে তা আমি বাদ দেবো না'', জানায় জেসকো৷

‘‘অথচ জলবায়ুর এক বড় ঘাতক বলা যায় প্লেন বা উড়োজাহাজকে'', বলেন অর্থনীতিবিদ নিকো পিচ৷ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ও ডিসপোসেবল প্যাকেজিং-এর পাশাপাশি তরুণদের জন্য এটাও একটা বড় সমস্যা৷ আর এই সব ক্ষেত্রে তাদের চাহিদা কমাতে চায় না অনেকে৷ এই ধরনের মানসিকতায় বড় রকমের কোনো পরিবর্তন আনতে পারবেন বলে মনে করেন না পিচ৷ ‘‘কিন্তু এ সম্পর্কে কথা বলতে তো ক্ষতি নেই'', বলেন এই অর্থনীতিবিদ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য