1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আশা আর আশঙ্কার নববর্ষ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ এপ্রিল ২০১৭

এবার বাংলা নববর্ষ যেমন আশা জাগানিয়া, তেমনি আশঙ্কারও সৃষ্টি করেছে৷ মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ৷ আর তার বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে হেফাজতে ইসলাম৷ তাদের মতে, বাংলা নববর্ষ নয়, মুসলমানদের হিজরি নববর্ষ পালন করা উচিত৷

https://p.dw.com/p/2bCk7
Bangladesch Neujahr Fest (Bildergalerie)
ছবি: DW/M. Mamun

হেফাজতসহ আরো কিছু ‘ইসলমি' গ্রুপের এই অবস্থান অবশ্য পুরনো নয়৷ কিন্তু একদা বর্তমান সরকারবিরোধী হেফাজত এখন সরকারের ঘনিষ্ঠ৷ এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেফাজাতের দাবি মেনে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপন করা গ্রিক দেবীর আদলে ন্যায়ের ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলায় পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছেন৷ আর এই প্রথমবারের মতো ক্ষতাসীন আওয়ামী লীগ নববর্ষের র‌্যালি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

হেফাজতও সুপ্রিম কোর্টের সামনের ‘মূর্তি' সরনোর দাবিতে সফলতা পেয়ে এবার দেশে থেকে সব ‘মূর্তি' সরানোর দাবি তুলেছে৷ বৃহস্পতিবার হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘মুসলমানরা বাংলা বর্ষবরণ করবে, হিজরি বর্ষবরণ কেন করবে না? বাংলা নববর্ষ মুসলমানদের জন্য নয়, হিজরি নববর্ষ মুসলমানদের উৎসব৷'' এ প্রসঙ্গে বুধবার তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা মুসলামানদের জন্য হারাম৷''

এবারের বাংলা নববর্ষ নিয়ে যে একটা ঘোলাটে পরিস্থিতি চলছে, তার নমুনাও এরইমধ্যে পাওয়া গেছে৷ চট্টগ্রামে পোড়া মোবিল দিয়ে নববর্ষের চিত্রকর্মকে মুছে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা৷ বরিশালে জেএমবি-র নামে হুমকি দিয়ে নববর্ষের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে৷

মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হওয়ায় এবার ঢাকাসহ সারাদেশে বাংলা নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার বিশেষ আয়োজনের প্রস্তুতি ছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের৷ তারা সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চিঠিও দিয়েছে৷ কিন্তু সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে৷ আর ঢাকায় নিরাপত্তার নামে যা করা হয়েছে, তাতে মঙ্গল শোভাযাত্রার অবস্থা কী দাঁড়ায় তা পহেলা বৈশাখেই বোঝা যাবে৷ মঙ্গল শোভাযাত্রায় একবার ঢুকলে আর বের হওয়া যাবেনা৷ শুরুতে না থাকলে মাঝখান থেকে যোগ দেয়া যাবেনা৷ তাছাড়া এবার বিকেল পাঁচটার মধ্যেই নববর্ষের সব আয়োজন শেষ করতে বলেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷

নববর্ষের ঠিক আগে হেফাজতের সঙ্গে  ‘ঘনিষ্ঠতা' সরকারের মন্ত্রীরাই ভালো চোখে দেখছেন না৷ তাদের চোখে বর্তমান পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না৷ তাই সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে ঢাকাবাসী আয়োজিত চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব উপলক্ষ্যে র‌্যালির উদ্বোধনকালে বলেন, ‘‘একটি মহল বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভাষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে৷ চট্টগ্রামে বাঙালির লোকজ ঐতিহ্যের দেয়ালচিত্র পোড়া মোবিলের কালো আবরণে ঢেকে দেওয়া, সন্ধ্যার আগেই নববর্ষের উৎসব শেষ করতে বলা, এ সব ঘটনাপ্রবাহ গণতান্ত্রিক চেতনাবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে৷''

সুলতানা কামাল

তিনি আরো বলেন, ‘‘এতে প্রগতিশীল শক্তির হাত সংকুচিত হবে৷ এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে৷ পহেলা বৈশাখ নিয়ে যা কিছু হচ্ছে, তা অশনিসংকেত৷'' তবে সরকারের আরেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘‘সরকার হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে কোনো আপস করেনি৷ এটা রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা৷ জনগণের আবেগ অনুভূতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে৷''

পরিস্থিতিকে জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন মানবাধিকার কর্মী এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হেফাজতসহ তাদের অনুসারীদের সরকার যেভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাতে তারা দু'দিন পর যদি বলে প্রধানমন্ত্রীর লাইফ সাইজ প্রোট্রেট টানানো যাবে না, নারী নেতৃত্ব বাতিল করতে হবে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না৷ তারা এখন আমাদের বাংলা নববর্ষের বিরুদ্ধে কথা বলছে৷ মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধের দাবি জানাচ্ছে৷ আর তাদর সমর্থন দিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার৷ এই অশুভ শক্তিকে প্রশ্রয় দেয়ার ফল ভালো হবে না৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘রাজনীতির হিসাবে সরকার এরকম অশুভদের প্রশ্রয় দিতে পারে৷ কিন্তু বাঙালি তাতে ভয় পায় না৷ আমরা আমদের ঐতিহ্যের উৎসবে বাঙালি সংস্কৃতির উৎসব পহেলা বৈশাখ , মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপন করবই৷''

আপনি কি সুলতানা কামালের সঙ্গে একমত? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য