1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আসুন, ‘দুঃখিত' বলতে শিখি

আশীষ চক্রবর্ত্তী২৩ অক্টোবর ২০১৪

ইউএন হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ৷ শুনে গর্ব হচ্ছে৷ মনে হচ্ছে, এবার আমাদের সময়মতো ছোট্ট একটা শব্দ গভীর আবেগ আর আন্তরিকতা নিয়ে উচ্চারণ করতেও শেখা উচিত৷

https://p.dw.com/p/1DZvS
Fähre mit mehr als 200 Passagieren in Bangladesch gesunken
ছবি: picture-alliance/dpa

শব্দটি আমরা উচ্চারণ যে করিনা এমন কিন্তু নয়৷ বাঙালি হয়েও ‘দুঃখিত' শব্দটি কম বললেও ইংরেজিতে ‘স্যরি'-তো প্রায় উঠতে-বসতে বলি৷ ছোট ছোট ভুলে বেশি বলি৷ বড় কোনো ভুল বা অপরাধ হলে অনেক সময় বেমালুম ভুলে যাই শব্দটা৷ সাধারণ মানুষের মাঝে অবশ্য এর ব্যতিক্রমও আছে৷ অনেকেই পথ চলতে চলতে কারো গায়ে ফুলের টোকাটি লাগলেও অস্ফুটে বলে উঠি, ‘স্যরি'৷ যিনি আপন মনে হেঁটে যাচ্ছিলেন, ফিরে তাকিয়ে ‘না, ঠিক আছে' বলতে গিয়ে তাঁরই বরং হোঁচট খাওয়ার দশা হয়৷ আমরা এইটুকু তবু পারি৷ কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের খুব বড় বড় মানুষরা বড় ভুলে সামান্য একটি শব্দ উচ্চারণ করতে আগে কদাচিৎ হয়তো পেরেছেন, এখন একদমই পারেননা৷

বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচআরসি-র সদস্য হওয়ার পর প্রত্যাশিতভাবেই আবার উঠে এসেছে দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রসঙ্গ৷ উঠে আসছে রাজাপুরের লিমন হোসেনের র‌্যাবের গুলিতে পা হারানোর প্রসঙ্গ৷ নারায়ণগঞ্জের সাত খুন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসহ আরো অনেক প্রসঙ্গ উঠে এসেছে, কিংবা আসবে৷ জানা কথা, সভা-সমিতিতে, আড্ডায়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তুমুল বিতর্ক এবং তর্কযুদ্ধ চলবে কয়েকদিন৷ চলবেই৷ তারপর?

তারপর আবার চুপচাপ থাকা৷ কেউ প্রাণ হারালে, অপহৃত কিংবা ‘গুম' হলে, কোনো অঞ্চলে মানুষের ঘর-প্রার্থনালয় পুড়লে, মনগুলো স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেলে আবার শুরু হবে কথা- বিবৃতি৷ পাল্টা কথা, পাল্টা বিবৃতির নহরও বইবে৷ কেউ বলবেন না, ‘‘হ্যাঁ, রাজনীতি অথবা ধর্মের শান্তি-সৌহার্দ্যের মর্মকথা ভুলে বা অগ্রাহ্য করে ব্যক্তিগত, দলীয়, গোষ্ঠীগত, কিংবা সাম্প্রদায়িক নষ্ট চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যায় করে ফেলেছি৷ দুঃখিত৷ এমনটি আর হবেনা, হতে দেবনা৷''

যদি বলতেন, ইতিহাসটাই অন্যরকম হতো৷ তাহলে একাত্তরের ঘাতক-দালালরা বাহাত্তরেই হাত জোড় করে বলতো, ‘‘মানুষ হিসেবে, মুসলমান হিসেবে, দলের নেতা-কর্মী হিসেবে আমরা ঘোরতর অন্যায় করেছি, নয়তো করতে সহায়তা করেছি....ক্ষমা চাই৷'' বঙ্গবন্ধু দেশ শাসন যতটা দক্ষতা, কিংবা ব্যর্থতার সঙ্গেই করে থাকুন, তাঁকে, তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে এবং জেলখানায় ঢুকে চার নেতাকে যারা হত্যা করেছে, তারাও বলতো, ‘‘জনগণই যেখানে একদিন-না-একদিন শাসককে সরাতে পারতো, সেখানে কোলের শিশুটিকে পর্যন্ত গুলি করে মেরে আস্ফালন করা মোটেই মানুষের কাজ হয়নি৷ '' কেউ হাত জোড় করেনি৷ কেউ ‘স্যরি' বা ‘দুঃখিত' বলেনি৷ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করার উপায়টুকুও না রাখতে বরং ‘ইনডেমনিটি' হয়েছিল বাংলাদেশে৷

সেই থেকে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ, বঙ্গবন্ধু, শিশু শেখ রাসেল, রক্ষী বাহিনী, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, কর্নেল তাহের, খালেদ মোশাররফ- সবই যেন কিছু রাজনৈতিক শব্দ৷ ময়েজ উদ্দীন, নূর হোসেন থেকে শুরু করে হালের লিমন, এই সেদিন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নিজের সন্তানকে ‘চুরি করে বিক্রি করতে যাওয়ার' অভিযোগ মাথায় নিয়ে মারা যাওয়া আসমা আক্তারও যেন তাই৷ তাঁদের কেউই যেন মানুষ ছিলেন না, ছিলেন না কারো বাবা, মা, স্ত্রী বা সন্তান৷

DW Bengali Redaktion
আশীষ চক্রবর্ত্তী, এই ব্লগটির লেখকছবি: DW/P. Henriksen

অথচ প্রত্যেকেই মানুষ৷ এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে চরমভাবে৷ যে সংখ্যালঘুর ঘর-মন্দির পোড়ে, যে মেয়েটি ধর্ষিত হয়, যে লোকটি র‌্যাব, কিংবা গুণ্ডা, ডাকাতের হাতে খুন অথবা গুম হয়, হরতালে যে শিশুটি ককটেলের আঘাতে মায়ের কোলে ঢলে পড়ে, প্রত্যেকেই মানুষ৷

৪৩ বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে৷ জনসংখ্যা বেড়ে দ্বিগুনের চেয়েও বেশি হয়েছে৷ সেই অর্থে মানুষ বেড়েছে অনেক৷

এবার অনেক ‘বড় মানুষ' দেখতে চাই৷

আসুন, অন্য কোথাও দাঙ্গা হয়েছে বলে, আগে কেউ খুন করেছিল বা খুনের সমস্ত সুবিধা নিয়েছিল বলে খুন-গুমের পক্ষে সাফাই গাওয়া ভুলি৷ আসুন, ‘দুঃখিত' বলতে শিখি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য