1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপীয় মুদ্রা তহবিলের প্রয়োজন নেই: সংবাদভাষ্য

১০ মার্চ ২০১০

গ্রিসের চলমান সঙ্কট থেকে শিক্ষা নিয়ে ইউরোপীয় মুদ্রা তহবিলের প্রস্তাব দিয়েছেন জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তবে তাঁর মতে, আইএমএফ’এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয় – ইউরো এলাকার স্থিতিশীলতার জন্যই এমন এক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন রয়েছে৷

https://p.dw.com/p/MOXt
গ্রিসের আর্থিক সঙ্কটের ফলে ইউরো এলাকার ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়েছে

লিসবন চুক্তির কড়া নিয়ম

বর্তমানে যে সঙ্কট চলছে, আপাতদৃষ্টিতে ইউরোপীয় মুদ্রা তহবিলের প্রস্তাবকে তার মোক্ষম সমাধানসূত্র মনে হতে পারে৷ লিসবন চুক্তি অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোন সদস্য দেশে আর্থিক সঙ্কট দেখা দিলে বাকিরা মোটা অঙ্কের টাকা ঢেলে ‘বেল-আউট প্যাকেজ'এর মাধ্যমে তার সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে না৷ চুক্তির মূলমন্ত্র হল, প্রত্যেক সদস্য দেশকেই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে – অন্যরা তার ভুলের মাশুল গুনবে না৷ বিপুল বাজেট ঘাটতি করেও অন্যদের সুনাম ভেঙে বাজারে টিকে থাকা চলবে না৷ তবে এই নিয়ম আদৌ কতটা বাস্তবসম্মত, সেবিষয়ে ইউরোপীয় অর্থমন্ত্রীদের মনে এখন প্রশ্ন জাগছে৷ কারণ ‘বেল-আউট প্যাকেজ'এর উপর এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কোন দেশ যদি ইউরো এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হয় বা দেউলিয়া হয়ে পড়ে, তার পরিণামও মারাত্মক হতে পারে৷ আবার এই নিষেধাজ্ঞার খাঁড়ারও প্রয়োজন রয়েছে৷ তা না হলে এই অস্ত্রের কোনো ধারই থাকতো না৷ ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই ইউরোপীয় মুদ্রা তহবিলের প্রস্তাব অনেকটা ‘সাপও মরবে, আর লাঠিও ভাঙবে না' গোছের এক সমাধানসূত্র নিয়ে এসেছে৷ আজ এমন এক প্রতিষ্ঠান থাকলে তা গ্রিসের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারতো – কোন সদস্য দেশকেই নিষেধাজ্ঞা ভেঙে সাহায্য করতে এগিয়ে আসার কথা ভাবতে হতো না৷

যুক্তির আগে আবেগ

প্রস্তাবিত ইউরোপীয় মুদ্রা তহবিলের আসল উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন৷ ইউরো এলাকার অর্থমন্ত্রীরা চান না, যে গ্রিস আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ'এর দ্বারস্থ হয়৷ কারণ সেক্ষেত্রে ইউরো এলাকার ভাবমূর্তির ক্ষতি হবে৷ তখন কার্যত মেনে নিতে হবে, যে এই জোট নিজস্ব সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ অর্থাৎ, আসল কারণ হল, আত্মমর্যাদায় আঘাত লেগেছে৷ কিন্তু ক্রোধ বা প্রতিশোধ স্পৃহার মত এটাও সঠিক পথ নয়৷

ইউরোপীয় ইউনিয়ন যতদিনে এই ধারণাকে বাস্তব রূপ দিতে পারবে এবং কোন এক রাজধানীতে ইউরোপীয় মুদ্রা তহবিলের দপ্তর খোলা হবে, ততদিনে গ্রিসের সঙ্কট কোন না কোন ভাবে কেটে যাবে৷ তাছাড়া এই তহবিলকে ঘিরে অসংখ্য খুঁটিনাটি প্রশ্ন উঠবে – যেমন কোন দেশ কত অঙ্কের অর্থ জমা দেবে, আলাদা করে তাহলে আইএমএফ'এই বা অর্থ দেওয়ার প্রয়োজন থাকবে কি না, ইত্যাদি৷ জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শয়েব্লে যেমনটা আইএমএফ'এর মত প্রতিষ্ঠানের গুণাগুণের ভিত্তিতে এক ইউরোপীয় তহবিলের স্বপ্ন দেখছেন, বাস্তবে তা হয়ে উঠবে ‘বেল-আউট প্যাকেজ'এর নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার এক পথ৷ তখন যে কোন দেশই নিজের সাধ্যের সীমা পেরিয়ে ইচ্ছামতো ঘাটতি করতে পারবে৷

ভিন্ন পথ

বিধিনিয়ম কার্যকর করার জন্য অন্য পথে হাঁটতে হবে৷ ইউরোপীয় মুদ্রা তহবিল সেক্ষেত্রে মোটেই আদর্শ হতে পারে না৷ অন্যদিকে আইএমএফ'এর অসংখ্য সঙ্কটের অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ এমনকি গ্রিসের মত দেশেও কাঠামোগত সংস্কার কার্যকর করার মত ক্ষমতা এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে৷ আজ গ্রিসের নিজস্ব কর আদায়ের কাঠামো যদি যথেষ্ট মজবুত হত, তাহলে হয়তো করের বোঝা বাড়ানোর প্রয়োজনই হতো না৷ গ্রিসের সংস্কারের ক্ষেত্রে আইএমএফ'এর যথেষ্ট সাফল্যের সম্ভাবনা রয়েছে৷ ইউরোপের অর্থমন্ত্রীদের উচিত, নিজেদের অহঙ্কারবোধ ঝেড়ে ফেলে গ্রিসকে দ্রুত ওয়াশিংটনের দিকে এগোনোর পথে আর বাধা সৃষ্টি না করা৷ কারণ মূল ক্ষতি হচ্ছে গ্রিসেরই৷ সেদেশ লিসবন চুক্তি স্বাক্ষর করে যে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে, তাকে একাই তা পালন করতে হবে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি একবার সম্পদ বণ্টনের ক্ষমতা হাতে পায়, তাহলে আর রাশ টানা যাবে না৷ তাই এমন প্রচেষ্টা মূলেই বিনাশ করতে হবে৷

লেখক: রল্ফ ভেঙ্কেল, অনুবাদ: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: দেবারতি গুহ