1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপীয় মুসলমানরা এখন ঝুঁকছেন হালাল মাংসের দিকে

২৫ অক্টোবর ২০১০

‘হালাল’ মাংস৷ ফ্রান্সে প্রায় ৬০ লক্ষ মুসলমান বসবাস করে৷ মাংস কেনার আগে তারা দেখে নিচ্ছে তা হালাল কিনা৷ সুবিধা আদায় করতে চুটিয়ে ব্যবসা করছে হালাল মাংস সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলো৷

https://p.dw.com/p/Pn1K
ছবি: AP

ফ্রান্সে বসবাসরত সব মুসলমান যে ধর্মের সব কিছু অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন তা নয়৷ কিন্তু সুপারমার্কেট থেকে যে কোন খাবার কেনার আগে খুঁটিয়ে তারা দেখে কী কী উপাদান তার মধ্যে রয়েছে৷ যেমন- দীর্ঘদিন খাবার সংরক্ষণের জন্য অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়েছে কিনা৷ মাংস কেনার ক্ষেত্রে দেখা হয় প্রাণীটি ইসলামি কায়দায় জবাই করা হয়েছে কিনা, না হলে তা হারাম৷ হালাল হলে প্যাকেটের ওপর তা স্পষ্ট লেখা থাকবে৷ ইসলাম ধর্মের এই দিকটি বেশ কঠোরভাবেই মেনে চলে মুসলমানরা৷ আর এই সুযোগেই চুটিয়ে ব্যবসা করছে বেশ কিছু খাবার প্রস্তুতকারী কোম্পানি৷ এরা সরবরাহ করছে ‘হালাল' কাঁচা মাংস৷

পিছিয়ে নেই ফাস্ট ফুডের দোকানগুলো৷ বেলজিয়ামের ফাস্ট ফুড চেইন ‘কুইক'৷ মুসলমান কাস্টমার পেতে তারাও বিজ্ঞাপন দিচ্ছে ‘হালাল' বার্গারের৷ ভ্রূ-কুঞ্চিত হচ্ছে ফরাসিদের৷ তাদের অভিযোগ, তারা বৈষম্যের শিকার৷ কারণ তাদের অবজ্ঞা করা হচ্ছে৷ এসব দোকানে খেতে এবং কেনাকাটা করতে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে মুসলমানদের৷

দোকানের নাম জাকিয়া৷ সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা– আমরা হালাল মাংস খাই৷ বিক্রেতা নাদিল আরাব জানান, ‘‘হালাল দ্রব্য বিক্রি করার অর্থ হল একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা দেওয়া৷ কোন মুসলমানই এখান থেকে কিছু কিনতে ভয় পাবে না৷ ‘হালাল' হ্যামবার্গার রেস্ট্যুরেন্টে মুসলিম-অমুসলিম যে কেউই খেতে পারবে৷ অথচ সাধারণ কোন রেস্ট্যুরেন্টে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যাবে না কারণ সেখানে ‘হালাল' বার্গার বিক্রি হচ্ছে না৷ আমরা দু'পক্ষকেই সমর্থন করছি৷ যার যা ইচ্ছে৷''

Ostern in Deutschland
ছবি: AP

এ বছরের রমজান মাস থেকেই এই দোকানটি ব্যবসা চালু করেছে৷ প্রায় তিন লক্ষ ইউরো খরচ হয়েছে ব্যবসা দাঁড় করাতে৷ টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন, রাস্তার বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন ছাড়াও ফ্লায়ার বিতরণ করা হয়েছে৷ বলা হচ্ছে, হালাল পিৎসা, হালাল লসানিয়ে৷ প্রতিটি প্যাকেটে বর্ণনা দেওয়া রয়েছে৷ ইসলাম ধর্মের প্রতিটি নিয়ম কানুন মেনে তৈরি করা হয়েছে খাবারগুলো৷ এমনকি কোরআন শরিফের আয়াত পর্যন্ত তুলে দেওয়া হয়েছে৷

এই ‘হালাল' মাংস বিক্রির ব্যবস্থা ফ্রান্সে বাড়ছে৷ সব মুসলমান ধর্মপ্রাণ না হলেও রমজান মাসে কম বেশি অনেকেই রোজা রাখছে এবং ইফতার বা রাতের খাবার সময় খুঁজেছে হালাল খাবার৷ অর্থাৎ যা ইসলাম ধর্মানুযায়ী তৈরি এবং যে খাবারে অ্যালকোহলের মাত্রা শূন্য৷

সুপার মার্কেট ক্যাসিনোর বিক্রেতা আব্দেল রামান মুজিদ বললেন, ‘‘এই দোকানে অনেক ফরাসি কাস্টমার আসেন৷ তাঁরা হাঁসের মাংস কেনেন তা হালাল কী হারাম তা নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যাথা নেই৷ শুকরের গোস্ত আর গরুর গোস্ত মিশিয়ে কিমা বিক্রি করা হয়৷ কোন মুসলমান তা কখনোই কিনবে না৷ মুসলমানরা চলে যায় গলির ভেতর ছোট মাংসের দোকানে৷ কারণ সেখানে হালাল মাংস বিক্রি হয়৷''

ক্যাসিনো সুপারমার্কেটও গত বছর থেকে ‘হালাল' মাংস আমদানি করছে৷ প্রায় পাঁচ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করতে হয়েছিল৷ লাভ হচ্ছে৷ ‘হালাল' মাংস আনার পর ১০ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে ক্যাসিনোর৷ রাজধানী প্যারিসে সম্প্রতি চালু হয়েছে আরেকটি সুপার মার্কেট৷ সেখানে শুধু ‘হালাল' খাবারই বিক্রি হয়৷ প্যারিসের বাইরেও গড়ে উঠেছে হালাল রেস্টুরেন্ট৷ এসব রেস্টুরেন্টে কখনও মদ পর্যন্ত পরিবেশন করা হয় না৷

তবে সবাই যে ‘হালাল' খাবারকে সাদরে গ্রহণ করেছে তা কিন্তু নয়৷ ইসলাম ধর্মানুযায়ী জবেহ করাকে অনেকে অমানবিক বলে আখ্যায়িত করছে৷ ‘হালাল' রেস্ট্যুরেন্ট চালু করায় এরা প্রতিবাদ করছে৷ জনপ্রিয় ফরাসি অভিনেত্রী ব্রিজিত বার্দো তাদের মধ্যে একজন৷ তার কথায়, ‘‘কোন খোদা, প্রভু, ঈশ্বর বা ধর্ম বলেনি যে মানবজাতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে পশু-পাখি জবাই করে খেয়ে ফেলতে হবে৷ ফ্রান্সে আগে থেকেই ‘কশের' মাংস খাওয়ার পদ্ধতি প্রচলিত ছিল৷ এখন কেন হঠাৎ করে ‘হালাল' মাংস খাওয়া প্রয়োজন তা আমি বুঝতে পারছি না৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক