ইউরোপ থেকে আফ্রিকায়!
৩০ জানুয়ারি ২০১৪ঘানার রাজধানী আক্রার বাজারের এক দৃশ্য: ছায়াতেই সূর্যের তাপ ৩০ ডিগ্রি৷ বাতাসের আর্দ্রতাও কম নয়৷ বিক্রেতারা ঘর্মাক্ত কলেবরে নাস্তানাবুদ হচ্ছেন৷ সামনের কাউন্টারে রাখা ফ্রোজেন মুরগির মাংস গলে যাচ্ছে৷ পাশের কোল্ড হাউসেও একই অবস্থা৷ ঘানার মতো দেশগুলিতে কার্যকর কোনো কোল্ড স্টোরেজ নেই৷ তাই আমদানি করা ফ্রোজেন মাংস গলে গিয়ে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়৷
ধনীদেশের সস্তার পোল্ট্রি
তা সত্ত্বেও ঘানা বছরে ১৬৫,০০০ টন সস্তার পোল্ট্রি ব্রাজিল, অ্যামেরিকা ও ইউরোপ থেকে আমদানি করে থাকে৷ এসব হলো অবশিষ্ট মাংস, যা ধনী দেশের মানুষরা খেতে চান না৷ অথচ ১৯৮০ থেকে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত ঘানা হাঁসমুরগির মাংসের চাহিদার ৮০ শতাংশ নিজেই পূরণ করতে পারতো৷
‘‘সস্তায় আমদানিকৃত মাংস বাজারে আসার পর থেকে অবস্থা বদলে গিয়েছে৷ এখন আমাদের কৃষকরা চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ মাংস উৎপাদন করে থাকেন৷'' বলেন ঘানার জাতীয় পোল্ট্রি শিল্পের কোয়াম কোকরোহ৷
একজন জার্মান বছরে ১৯ কিলোর মতো মুরগির মাংস খান৷ বিশেষ করে ফিলের মাংস জার্মানদের কাছে প্রিয়৷ এই মাংস শুধু সাদা ও নরমই নয়, কম চর্বিযুক্তও৷ তাই ইউরোপের স্বাস্থ্যসচেতন মানুষরা মুরগির বুকের মাংস খেতে পছন্দ করেন৷ জার্মান চাষিরা প্রয়োজনের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি মাংস উত্পাদন করেন৷ অতিরিক্ত মাংস অল্প দামে আফ্রিকায় রপ্তানি করা হয়৷ এর মধ্যে রয়েছে মুরগির ভেতরের অংশ (যকৃৎ,বৃক্ক,হার্ট) গলা, পাখা ইত্যাদি৷ আফ্রিকায় আমদানিকৃত মুরগির মাংসের ১০ শতাংশ জার্মানি থেকে আসে৷ বাকি ৯০ শতাংশ আসে ব্রাজিল, অ্যামেরিকা ও নেদারল্যান্ডস থেকে৷
আফ্রিকার পক্ষে এত কম খরচে সম্ভব নয়
এই সব মাংস এত কম দামে বিক্রি হয় যে, আফ্রিকার কোনো চাষির পক্ষে এত কম খরচে পোল্ট্রি চাষ সম্ভব নয়৷ মাত্র দুই ইউরো দিয়েই আমদানি করা ফ্রোজেন মাংসের টুকরা পাওয়া যায়৷ স্থানীয় পোল্ট্রি চাষিদের একই পরিমাণ মাংসের দাম চার ইউরোর কম নয়৷
ইইউ-এর কৃষি বিষয়ক কমিশনার ডাচিয়ান চলোসের ঘোষণা অনুযায়ী, ইউরোপীয় কৃষি রপ্তানি ক্ষেত্রে অনুদান সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হবে৷ সমালোকরা মনে করেন এতেও কোনো কাজ হবে না৷ ২০০৮ সালেও এই রকম একটা ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল৷ যা ফাঁকা বুলিতেই রয়ে গিয়েছে৷
এত সস্তায় মাংস রপ্তানি করতে পারার একটি কারণ হলো, অল্প জায়গায় বহু পশু পাখিকে গাদাগাদি করে রেখে খরচও বাঁচানোর প্রবণতা৷ আর একটি কারণ হলো, ইউরোপের বাজারে দামি ফিলের মাংস বিক্রি করে উৎপাদনের খরচ অনেকটা উঠে আসে৷
সস্তায় আমদানি রোধ করার চেষ্টা ব্যর্থ
ঘানার সংসদে ২০০৩ সালে আমদানিকর বৃদ্ধি করে সস্তায় আমদানি রোধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল৷ কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই এই আইনটি বাতিল হয়ে যায়৷ ‘‘আমি মনে করি আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছে ঘানা সরকারকে৷'' বলেন ঘানার জাতীয় পোল্ট্রি শিল্পের কোয়াম কোকরোহ৷
উন্নয়ন সাহায্য সংগঠন ‘ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ড'-এর ফ্রান্সিসকো মারিও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘একই সময়ে ঋণ স্থানান্তরের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দেনদরবার চলছিল ঘানার৷ এই আইন বাতিল না করলে হয়ত অনেক অর্থ গচ্চা দিতে হতো৷'' বলা বাহুল্য, দরিদ্র দেশগুলির অসহায়ত্বেরই এক চিত্র এটি৷