1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইটালির শ্রুভ্র মর্মর পাথরের কদর বাড়ছে

১৭ জুন ২০১০

মার্বেল কথাটি শুনলেই ইটালির ধবধবে সাদা মার্বেল বা শ্বেতপাথর চোখের সামনে ভেসে ওঠে৷ প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই মার্বেল খোদাই এর শিল্প আবারো জেগে উঠছে ইটালিতে

https://p.dw.com/p/Nsr5
এমন মার্বেলের মূর্তি ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য অট্টালিকায়ছবি: picture-alliance / akg-images

স্থাপত্য এবং ডিজাইনিং শিল্পে মার্বেল তার পুরনো জায়গা ফিরে পেয়েছে৷ ইটালির ভেনেতো শহরে৷ দশকের পর দশক ধরে ডিজাইনার এবং আর্কিটেক্টদের কাজকে আলাদাভাবে দেখা হয়েছে৷ ধরেই নেয়া হয়েছে, একজনের কাজের সঙ্গে আরেকজনের কাজের কোন মিল নেই৷ বাস্তবে দেখাও গেছে তাই৷ আর্কিটেক্টরা ব্যস্ত তাদের স্থাপত্য শিল্প নিয়ে আর ডিজাইনররা কাজ করে যাচ্ছেন ঘর-অফিস-আদালত সাজানো-গোছানো নিয়ে৷

তবে সম্প্রতি এই দুটি ভিন্ন পেশা এক হয়ে মিশেছে – শ্বেত পাথর দিয়ে গৃহ সজ্জার ক্ষেত্রে৷ জেগে উঠছে উত্তর ইটালির ভেনেতো শহরটি৷ এই শহরটি মার্বেল বা শ্বেত পাথর কাটা, পাথরের আসবাব তৈরীর জন্য বিখ্যাত৷

ওরাসিও সেরোন দাঁড়িয়ে আছে কয়েকশ' মার্বেল ব্লকের সামনে৷ ওরাসির পারিবারিক ব্যবসা হচ্ছে মার্বেল খোদাই করা৷ একশ' বছর ধরে মার্বেল খোদাইয়ের কাজ করে আসছে সেরোন পরিবার৷ এতদিন এই মার্বেলের কাজ সীমিত ছিল কবরের উপর মৃত ব্যক্তির নামের ফলক তৈরি এবং রান্না ঘরের বেসিন বা সিংক তৈরিতে৷ তবে মার্বেল খোদাইয়ের কাজ শুধু রান্নাঘর এবং কবরস্থানের মধ্যে সীমিত নেই – আধুনিক হোটেল এবং বসারঘরেও মার্বেল শোভা পাচ্ছে৷ কীভাবে? নামী-দামী হোটেলগুলো চাইছে, তাদের লবির টেবিলগুলো বা লবি ডেস্কটি হবে মার্বেলের৷ অনেক সৌখিন পরিবার চাইছে, তাদের বসার ঘরের ফায়ারপ্লেসটি হবে মার্বেল পাথরের তৈরি, যেমনটা চাইছে অনেক অফিস৷ এ শখ মেটাতে সেরোনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ইরাকি বংশোদ্ভূত আর্কিটেক্ট জাহা হাদিদ৷ হাদিদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শুভ্র মার্বেল পাথর দিয়ে আগুনের শিখার আকারে একটি ফায়ারপ্লেস তৈরি করার৷ খুব সহজ কাজ নয়, কারণ এই কাজ করতে প্রয়োজন ডিজাইনার, আর্কিটেক্ট এবং মার্বেল কাটারের৷ সবাইকে হতে হবে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং দক্ষ৷ মার্বেল কেনা হবে ভেনেতো থেকে৷ সেই মার্বেল মাপ অনুযায়ী কাটাও হবে ভেনেতোয়৷

সেরোন বললেন, ‘‘যে মেশিন দিয়ে মার্বেল কাটা হবে, তা হচ্ছে অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি৷ এই মেশিন দিয়ে মার্বেল কাটার সময় শুধু প্রোগ্রাম করে দিতে হয়৷ কোথায় কীভাবে কাটতে হবে, মেশিন নিজে থেকেই তা সেট করে নেয়৷ মার্বেল কাটার পর নিখুঁত ফিনিশিং-এর জন্যও মেশিনে প্রোগ্রাম করা রয়েছে৷ সবমিলিয়ে প্রায় ১৮ ধরণের কৌশল এবং যন্ত্রপাতি রয়েছে এই মেশিনে৷''

হাদিদ সেরোনকে একটি থ্রিডি প্রোগ্রাম ফাইল পাঠিয়েছে৷ সেরোন তা মেশিনে পুরে দিয়েছে এবং মেশিনটি সেই হুকুম তামিল করেছে৷ প্রথমে চুনা পাথরের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে৷ তিন সপ্তাহ ধরে কাজ চলেছে চুনা পাথরের ওপর৷ দেখা গেছে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে মেশিন তার কাজ সম্পন্ন করেছে৷ আগুনের শিখার আকারে ফায়ারপ্লেস তৈরি হয়েছে – তবে তা ছিল চুনাপাথর দিয়ে তৈরি৷

Zaha Hadid
জাহা হাদিদছবি: AP

দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য মার্বেলের ফায়ারপ্লেস

ইয়ুং হি কিম একজন মহিলা ব্যবসায়ী৷ তিনি নিজের কোম্পানির জন্য ফায়ারপ্লেসটির অর্ডার দেন৷ সৌলের একটি জাদুঘর ডিজাইন করার সময় জাহা হাদিদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়৷ দক্ষিণ কোরিয়ার সেই জাদুঘরটির আর্কিটেক্ট ছিলেন জাহা হাদিদ৷

ইয়ুং কিম জানান, ‘‘খুব কম ডিজাইনার বা আর্কিটেক্ট রয়েছেন, যারা ফায়ারপ্লেস তৈরি করেন৷ আমি নিজেই একদিন নিজের মনে ভাবছিলাম, ‘জাহা হাদিদের তৈরি একটি ফায়ারপ্লেস থাকলে কেমন হয় ?' যেমন ভাবা তেমন কাজ৷ শুরু হয়েছিল এভাবেই!''

লন্ডনের একটি গ্যালারির মালিক ডেভিড জিল৷ তাঁর গ্যালারির অনেক আসবাবপত্র হাদিদের ডিজাইন করা৷ তিনি জানান, খুব কম আর্কিটেক্ট আসবাব তৈরিতে আগ্রহ দেখায়৷ হাদিদ তাদের মধ্যে একজন৷ জিল বললেন, ‘‘হঠাৎ করেই যেন আর্কিটেকচার বা স্থাপত্য শিল্প নিজের মধ্যেই গুটিয়ে যায়৷ কোন আর্কিটেক্ট আসবাব তৈরিতে আগ্রহী নন৷ কোনভাবেই তারা আসবাব-পত্র ডিজাইন করতে চান না৷ হতে পারে তাঁরা আগ্রহী নন, তাঁরা পছন্দ করেন না অথবা আসবাব-পত্র বিষয়টি তারা ঠিকমত বোঝেন না৷''

জিল আরো জানান, পুরনো আসবাব-পত্রের প্রতি মানুষের আগে যে রকম ঝোঁক ছিল, ইদানিং তা আর চোখে পড়ে না৷ সবাই চায় আধুনিক আসবাব-পত্র৷ যারা এখনো পুরনো আসবাব-পত্র পছন্দ করেন, তাঁরা একটি বইয়ের আলমারির জন্য কুড়ি হাজার ডলার খরচ করতে রাজি, একটি মর্মর টেবিলের জন্য পাঁচ লক্ষ ডলার৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদন: সঞ্জীব বর্মন