1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইন্দোনেশিয়ার পরিবেশ সংরক্ষণে সবুজ বেতার

২৬ নভেম্বর ২০১০

ইন্দোনেশিয়ার নানা ধরণের সমস্যার অন্যতম হল পরিবেশ দূষণ৷ আর এই দুষণের কারণে হুমকির মুখে জীব বৈচিত্র৷ কিন্তু কেউ কি নেই তা দেখার? নিশ্চয়ই আছে৷

https://p.dw.com/p/QIp6
ছবি: Bildagentur-online/Saurer

রেডিওর নব ঘুরাচ্ছিলেন সুমাত্রা দ্বীপের ওবায়াদুল৷ বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁই করছে৷ চোখের সামনে তিল তিল করে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সবুজ বন৷ এখানে এক সময় হাতি হেলে দুলে চলতো৷ বাঘ ছুটে যেতো এখান থেকে সেখানে৷ এগুলো এখন অনেকটাই স্বপ্ন৷ কানের কাছে রেডিও নিয়ে একটি সংবাদ শুনছিলেন ওবায়াদুল৷ ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ফান্ড ফর নেচার'এর তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন৷ তৈরি করেছে গ্রিন রেডিও৷ ওরা জানাচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ায় ক্রমাগত বন উজাড় হবার ফলে কার্বন দূষণ বাড়ছে৷ অন্যদিকে, গাছপালা কেটে জঙ্গল সাফ করে ফেলায় জীববৈচিত্র ও বন্যপ্রাণীদের আবাস নষ্ট হয়ে বিলুপ্তির মুখে পড়েছে সুমাত্রা প্রজাতির হাতি এবং বাঘ৷

জনসচেতনতা নেই৷ তাই এই অবস্থার অবসানেই এগিয়ে এসেছে গ্রিন রেডিওর কর্মীরা৷ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে সবুজ বেতার বোঝানোর চেষ্টা করছে এই পরিবেশকে রক্ষা করাটা কত প্রয়োজন!

NO FLASH WWF: Lage der Regenwälder in Indonesien dramatisch
এভাবে সুমাত্রার বন উজাড় করা হচ্ছেছবি: picture-alliance/dpa

সবুজ বেতার - ছোট্ট একটা স্টেশন৷ এর সঙ্গে লোকজনও কম৷ কিন্তু যারা এর সঙ্গে আছে তার প্রচন্ড পরিশ্রমী৷ কেবল নিজের কাজের প্রতি নয়, পরিবেশ আর এই পৃথিবীর প্রতি দায়বদ্ধতার বিষয়টি সব সময় তাদের মাথায়৷ জার্কাতা ভিত্তিক এই এফএম স্টেশন কেবল নিজেরাই যে অনুষ্ঠান প্রচার করছে, তাই নয়৷ তারা অন্য রেডিও স্টেশনের জন্যও তৈরি করছে পরিবেশ সংক্রান্ত নানা অনুষ্ঠান৷ একটা রেডিও স্টেশন চালাতে অনেক খরচ৷ আর এই খরচ কিভাবে আসছে? কথা বলছিলাম গ্রিন রেডিওর পরিচালক নিতা রশিতার সঙ্গে৷ তিনিই জানালেন, রেডিও অপারেশনের খরচটা আসে মূলত বিজ্ঞাপন থেকে৷ এছাড়া তারা পরিবেশ সম্মত পণ্য উৎপাদকদের সঙ্গে কাজ করে বেশ কিছু অর্থ আয় করেন৷ তিনি জানালেন, ‘আমরা আমাদের শ্রোতাদের পরিবেশ বিষয়ে উৎসাহিত করি৷ সব কাজ করা হয় যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে৷ আমরা চাই জাকার্তা এবং এর আশপাশের অন্যান্য স্থানে পরিবেশ সম্মত জীবন গড়ে তুলতে৷' নিতা রশিতা আরও বলেন, ‘এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবেশ রক্ষা করার বিষয়টিই৷ এ অবস্থার অবসান করতে হবে৷ আর এ জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা৷ লোক দেখানো কাজ করলে হবে না৷ নিতে হবে সঠিক ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ৷'

বাদলা বনের গাছপালা ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় শূণ্য৷ গাছ কেটে বন নষ্ট এবং বন্যপ্রাণীর জীবন ধ্বংস করার কুফল ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করেছে ইন্দোনেশিয়ার জনগণ৷ সেখানে হরহামেশা হচ্ছে বন্যা৷

গাছ কেটে কাগজকলের জন্য পাল্পউড সংগ্রহ এবং বন সাফ করায় সুমাত্রা দ্বীপের প্রায় এক পঞ্চমাংশ নিয়ে গঠিত রিয়াউ প্রদেশের ৬৫ শতাংশ বনাঞ্চল গত ২৫ বছরে ধ্বংস হয়ে গেছে৷ ফলে যা হবার তাই হচ্ছে৷ বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রধান উপাদান কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে৷ বন উজাড় হওয়ায় একদিকে বায়ুমণ্ডল থেকে নির্গত কার্বন শোষণ কমে গেছে৷ অন্যদিকে, গাছ পোড়ানোর কারণে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন বাড়ছে৷ বন উজাড়ের ফলে গত ২৫ বছরে রিয়াউ বনাঞ্চলে সুমাত্রা-হাতির সংখ্যা ৮৪ শতাংশ কমে মাত্র ২১০ টিতে নেমে এসেছে এবং সুমাত্রা-বাঘের সংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশ কমে মাত্র ১৯২ টিতে নেমে এসেছে৷

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, সেখানে ফি বছর ২.৮ মিলিয়ন হেক্টর বাদলা বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে৷ আর এতদিনের এই কর্মকাণ্ডের ফলাফল ২০১২ সালের মধ্যে সুমাত্রা, বর্নিও এবং সুলাওয়াজি প্রদেশ হয়ে যাবে বনবিহীন৷ সবুজ বেতারের এবারের অভিযান বাদলা বন রক্ষা করার কার্যক্রম৷

সবুজ বেতারের মতো কি কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা যায় বাংলাদেশে, প্রশ্ন করেছিলাম এবিসি রেডিওর সংবাদ এবং অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান সানাউল্লাহ'কে৷ তিনি জানালেন, তারা নিয়মিত পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ এবং অনুষ্ঠান প্রচার করছেন৷ এ ধরণের আরও পরিকল্পনা তাদের রয়েছে৷ আর এসবের ফলে মানুষের মধ্যে বেড়েছে পরিবেশ বিষয়ে সচতনতা৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক