1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইরানি চলচ্চিত্রকার শিরিন নেশাত

১০ জুলাই ২০১০

ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর যেসব ইরানি নাগরিক অ্যামেরিকায় চলে গিয়েছেন তাদের জীবন-যাপন নিয়ে বেশ কিছু আলোকচিত্র উপহার দিয়েছেন তিনি৷ করেছেন ভিডিও৷

https://p.dw.com/p/OFmw
ইরানি চলচ্চিত্রকার শিরিন নেশাতছবি: AP

শিরিন নেশাত একজন ইরানি চলচ্চিত্রকার৷ তিনি একজন পেশাগত ফটোগ্রাফারও৷ তবে ৯০এর দশকে তাঁর তোলা ছবি দিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়, নাম, ‘আল্লাহর নারীরা'৷

সাত বছর আগে শিরিন নেশাত একটি ছবি তৈরি করেন৷ ছবির নাম ‘জানান বেদুন মার্দান' অর্থাৎ পুরুষ বিহীন নারী৷ ৫০-এর দশকের চার ইরানি নারীর জীবন কাহিনী নিয়ে এই ছবি৷ জুলাই মাসের এক তারিখে জার্মানিতে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে৷

ছবিতে যে চারজনকে দেখা গেছে তারা হলেন, একজন মহিলা, যার স্বামী বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, একজন দুঃখকাতর প্রেমিকা, একজন যৌন কর্মী এবং আত্মহত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন এরকম একজন মহিলা৷ তারা জড়ো হয়েছেন একটি বাগানু৷ বাগানের এক পাশে মরুভূমি, অন্যপাশে জঙ্গল – আবার এই বাগানটিই হল রক্ষাব্যূহ৷ এই বাগানে চারজন মহিলা তাদের জীবনের দুঃখের কাহিনি শোনান একে অপরকে৷ ঘটনা শুরু হয় ১৯৫৩ সাল থেকে যখন ইরানের শাহ ক্ষমতায় এলেন৷ ছবি এবং গল্প দিয়ে সেই বিভীষিকাময় দিনগুলো তুলে ধরেছেন শিরিন নেশাত৷ সংগ্রাম, আশা, হতাশা এবং গ্লানির প্রতিটি ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাঁর ছবিতে৷ শিরিন নেশাত বললেন, ‘‘৫০-এর দশকে মানুষের জীবন কেমন ছিল তা আমি এই ছবিতে দেখাতে চেয়েছি৷ এখনকার চেয়ে সেই সময় অনেক স্বাধীনতা ছিল মানুষের ৷ পশ্চিমের দেশ থেকে যে কেউ আসতো পারতো, আমাদের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে মিশতে পারতো৷ ধর্মীয় স্বাধীনতা ছিল সবার৷ অথচ এখন জোর করে সবার ওপর ধর্মকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷''

ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানে অনেক কিছুই পাল্টে যায়৷ পাল্টে যায় শিরিন নেশাতের জীবনও৷ তিনি ধর্মে মুসলমান কিন্তু পশ্চিমা ধাঁচে জীবন-যাপন করেছেন, পড়াশোনা করছেন ক্যাথলিক স্কুলে৷ শিল্পকলা নিয়ে পড়াশোনার জন্য তিনি ১৯৭৯ সালে অ্যামেরিকা চলে যান৷ এই চলে যাওয়ার আর একটি কারণ আয়াতুল্লাহ খোমেনির ইসলামি বিপ্লব৷ শিরিন নেশাত থেকে যান অ্যামেরিকায় তবে কাজ করতে থাকেন ইরানের বিভিন্ন সমস্যা নিয়েই৷ শিল্পকলার মধ্যে দিয়ে ইরানের নারীদের জীবন চিত্র তুলে ধরেন তিনি৷ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘ওম্যান অফ আল্লাহ্' ৯০-এর দশকে সাড়া জাগায়৷ শিরিন নেশাত জানান, ‘‘ইরান থেকে ইরানের নাগরিকদের বের করে দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু ইরানিদের মধ্য থেকে ইরানকে বের করে দেওয়া অসম্ভব৷ এত বছর বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের পরও আমি একজন ইরানি৷ আবার অন্যদিকে আমি নিজেকে পশ্চিমী বিশ্বের একজন মনে করি৷ আমার মন-মানসিকতা, আমার পোশাক পরিচ্ছদ, আমার জীবন যাপন – সবকিছুই পশ্চিমের মানুষদের মত৷''

Flash-Galerie Women Without Men
জুলাইয়ের এক তারিখে জার্মানিতে মুক্তি পেয়েছে ‘জানান বেদুন মার্দান' অর্থাৎ ‘পুরুষ বিহীন নারী’ ছবিটিছবি: Courtesy Co-Production-Office

রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কোনভাবেই তিনি স্পষ্টভাবে সক্রিয় নন৷ ইচ্ছে করেই এতদিন তিনি তা এড়িয়ে গেছেন৷ কাজের মধ্যে দিয়েই তিনি বোঝাতে চেয়েছেন তিনি কী বলতে চান৷

শিরিন নিজেই জানালেন, ‘‘আমি নিজেকে একজন মুসলমান মনে করি৷ তবে আমি প্রতিদিন নামাজও পড়ি না৷ ইসলাম ধর্মকে অসম্মানও করি না৷ আমি বিশ্বাস করি, ধর্মীয় বিশ্বাস যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার৷ সবার প্রতি সম্মান দেখানো উচিত৷ এই ছবির মধ্যে দিয়ে ইসলাম ধর্মের প্রতি কোন অসম্মান আমি করিনি, প্রতিবাদও করিনি৷ আমি যা দেখেছি, যা আমার চোখে পড়েছে তা-ই আমি দেখাতে চেয়েছি৷''

২০০৯ সালে ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে শিরিন নেশাত আবারো সক্রিয় হয়ে ওঠেন৷ ইরানের তরুণ প্রজন্মের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন তাঁকে ভাবিয়ে তোলে৷ তাঁর ভেতর এক ধরণের পরিবর্তন তিনি লক্ষ্য করেন৷ নৈতিকভাবে ইরানের তরুণ প্রজন্মকে তিনি সমর্থন করেন৷ তিনি মনে করেন, এই তরুণ প্রজন্ম এবং তিনি সবাই গণতন্ত্র, শান্তি এবং মানবাধিকারের জন্যই লড়ছেন৷ ২০০৯ সালের আন্দোলন তাঁকে বার বার ফিরিয়ে নিয়ে গেছে ১৯৫৩ সালের ইরানে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক