এই প্রথম ভিন্ন গ্যালাক্সি’র গ্রহ আবিস্কার
২৬ নভেম্বর ২০১০ভিন্ন সৌরমণ্ডলের গ্রহ আবিষ্কারের ঘটনা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের জন্য এই প্রথম এবং এই আবিষ্কার দারুণ সাফল্যের একটি ঘটনাই বটে৷ আমাদের সৌরমন্ডলের ইতিউতি আর বিভিন্ন গ্রহের তত্ত্ব তালাশের ফাঁকে এই ভিন্ন গ্যালাক্সি বা সৌরমন্ডলের গ্রহটি খুঁজে পাওয়ার ঘটনাটি অবশ্যই একটি চমকপ্রদ বিষয়৷ বিজ্ঞানীদের বরাতে জানা গেছে, আমাদের এই সুদীর্ঘ ছায়াপথের বাইরে সেই কোন সূদূরে পৃথিবী থেকে প্রায় দুই হাজার আলোকবর্ষ দূরত্বে এটি অবস্থান করছে৷
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আমাদের সৌরমন্ডলের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির চেয়ে আকারে এই নবআবিষ্কৃত ভিন গ্রহটি সামান্যই বড়৷ তারা ধারণা করছেন, ছয় থেকে নয় বিলিয়ন বছর আগে ছায়াপথ বা মিল্কিওয়েটি একটি ক্ষুদ্র সৌরমন্ডলকে গোগ্রাসে গিলে ফেলার পর রয়ে যাওয়া কয়েকটি নক্ষত্রপুঞ্জেরই অংশ এই গ্রহ আর তার সঙ্গের নক্ষত্রটি৷ সম্প্রতি এক বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত নিবন্ধে লেখা হয়েছে এটি হেলমি নামের একটি নক্ষত্রপুঞ্জেরই অংশ, যার বাকি অংশ নিঃশেষ হয়েছে ছায়াপথের আগ্রাসে৷ বিজ্ঞানীরা ছায়াপথের এই আগ্রাসী আচরণের নাম দিয়েছেন- ‘গ্যালাক্টিক ক্যানিবালিজম'৷
হাইডেলবার্গের মাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিট্যুট ফর অ্যাসট্রোনমির জনি সেটিওয়ান বলেছেন, ‘যতদূর জানি এমন একটি গ্রহ আবিষ্কারের ঘটনা এটাই প্রথম৷ আমাদের সৌরমন্ডলে এটি ঢুকে পড়েছিল ছয় থেকে নয় বিলিয়ন বছর আগে৷'
জানা গেছে, চিলি'র লা সিলা অবজারভেটরি'র ইউরোপিয়ান সাদার্ণ ল্যাবরেটরিতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্পেকটোগ্রাফ সংযুক্ত একটি সাড়ে সাত ফুটি টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এই গ্রহ এবং এর কক্ষপথে ঘোরা নক্ষত্রটি নজরে এসেছিল৷ এর নাম রাখা হয়েছে হিপ ১৩০৪৪ বি৷
রাইনার ক্লিমেন্ট নামের এক বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, এই আবিষ্কারের ঘটনাটি চমকপ্রদ৷ তিনি বলেন, এটি আসলে অনেক দূরের একটি গ্রহ৷ এর আগে এমন ভিন্ন গ্যালাক্সির কোন গ্রহ আমরা খুঁজে পাইনি৷
বিজ্ঞানী মনে করছেন, এই গ্রহটি যেনবা আমাদের ভবিষ্যত পৃথিবীর ছবিই আমাদের সামনে তুলে ধরেছে৷ কেননা আজ থেকে পাঁচ বিলিয়ন বছর পরে আমাদের সূর্যের সমস্ত হাইড্রোজেন নিঃশেষ হয়ে গেলে পরে সেও একটি রক্তিম মৃত পর্যায়ে পৌঁছাবে৷ যেমনটি এই বামন গ্যালাক্সিটি একসময় পৌঁছেছিল৷ আর এভাবেই নিঃশেষ হয়েছিল তার অপরাপর সঙ্গী-সাথিরা৷ নিঃসঙ্গ এই ভিন গ্রহটির মতোই হয়তো একদিন পৃথিবীও নিষ্প্রাণ ঘুরে ঘুরে চলবে৷
কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন- যেখানে স্পন্দন, সংঘর্ষ, গতি, যেখানে উদ্যম, চিন্তা, কাজ/ সেখানেই সূর্য, পৃথিবী, বৃহস্পতি, কালপুরুষ, অনন্ত আকাশগ্রন্থি..../ অরব অন্ধকারের ঘুম থেকে নদীর চ্ছল চ্ছল শব্দে জেগে উঠব না আর/ তাকিয়ে দেখব না নির্জন বিমিশ্র চাঁদ বৈতরণীর থেকে/ অর্ধেক ছায়া গুটিয়ে নিয়েছে/ কীর্তিনাশার দিকে/ ধানসিড়ি নদীর কিনারে আমি শুয়ে থাকব-ধীরে-পউষের রাতে/ কোনদিন জাগব না জেনে-/কোনোদিন জাগব না আমি-/কোনোদিন আর।
যাক গে৷ এখনই বিমর্ষ বিষন্ন হয়ে কাজ নেই৷ সে অনেক শতাব্দী পরের কথা৷ ততোদিনে হয়তো বিজ্ঞানীরা ঢের আলোকবর্ষ দূরের এমন আরো ডজন খানেক গ্রহ আবিস্কার করে ফেলবেন৷ হয়তো সে গ্রহগুলো মানুষের বসবাস উপযোগী৷ তার কোন কোনটিতে মানুষের বসতিও স্থাপিত হবে হয়তো৷ আশায় বসতি৷
প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক