1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘এটা আমাদের জমি'

১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

ইসরায়েলি স্যাটেলারদের গড়া আউটপোস্টটি অবৈধ, তাই খোদ ইসরায়েলের আদালতই সেটা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে৷ কিন্তু আমোনার বাসিন্দা সেটা ছাড়তে রাজি নয়।

https://p.dw.com/p/2UOuH
আমোনা
ছবি: DW/T. Kraemer

বুধবার রাত অবধিও আমোনার বাসিন্দারা তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সরকারি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন৷ কিন্তু শেষমেশ তারা সেটা প্রত্যাখানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ কিন্তু অধিকৃত পশ্চিম তীরের কাছের একটি পাহাড়ের গায়ে তৈরি আউটপোস্টটি সম্ভবত গুড়িয়ে দেয়া হবে৷ গত মাসে ইসরায়েলের হাইকোর্ট সেখানকার পঞ্চাশটি স্থানান্তরযোগ্য বাড়ি আগামী ২৫ ডিসেম্বরের আগেই ভেঙ্গে ফেলতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে৷ নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য আর মাত্র কয়েকদিন হাতে আছে৷

তবে সেখানে বসবাসরতদের অন্যত্র সরিয়ে নিতেও নানা ধরনের প্রস্তাব দিচ্ছে সরকার৷ আউটপোস্টের বাসিন্দাদের কাছের আরেকটি প্লটে জমি দেয়ার কথা বলা হয়েছে৷ আরেক দলের জন্য কাছের অফরা এলাকায় জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ কিন্তু সেসব স্থানে যেতে এখনো রাজি হননি আমোনার বাসিন্দারা৷ ফলে সেখানে এখন অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে৷

এদিকে, আমানোর বাসিন্দাদের সমর্থন জানাতে আরো কিছু মানুষ সেখানে গিয়েছেন৷ সরকারের উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দিতে রাতের আধারে আমোনে জড়ো হচ্ছেন তারা৷ কেউ কেউ আবার উচ্ছেদ ঠেকাতে কাঠের শেল্টার তৈরি করেছেন৷ এসব যারা করছেন তাদের মধ্যে তথাকথিত ‘হিলটপ ইয়ুথ' নামে একটি সহিংস ফিরিঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যও রয়েছেন৷ সেটলার তরুণদের নিয়ে গোষ্ঠীটি তৈরি করা হয়েছে৷

আমোনা
আমোনার বাসিন্দাদের অচিরেই চলে যেতে হবে...ছবি: DW/T. Kraemer

দশ বছর আগে থেকেই আমোনের আউটপোস্টটি নিয়ে বিরোধ চলছে৷ তখন নয়টি মোবাইল হোম গুড়িয়ে দেয়া হলে পুলিশ এবং সেটলারদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে৷ এটি হচ্ছে পশ্চিম তীরে তৈরি ১০০টি অবৈধ আউটপোস্টের একটি, যেগুলো ইসরায়েল সরকারের অনুমতি না নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল, তা সত্ত্বেও শুরুতে কর্তৃপক্ষ তাদের বাধা দেয়নি৷ সেখানকার বাসিন্দা এলি গ্রিনব্যার্গ আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘প্রকৃত মানুষদের জন্য প্রকৃত কোনো সমাধান ছাড়াই আমাদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে৷ এটা একটা ট্রাজেডি৷'' গ্রিনব্যার্গ ২০০৪ সাল থেকে আমোনে বসবাস করছেন৷ তিনি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা সেটেলারদের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখানে কারণ আমরা ইহুদি ইতিহাসের অংশ৷ আমরা এই জমি কখনো ছাড়বো না৷ এটা আমাদের জমি, আমাদেরকে এটা দেয়ার অঙ্গিকার করা হয়েছিল৷''

এদিকে, আমোনের প্রতিবেশী এলাকা সিলভাদের মানুষরা এখন অপেক্ষায় আছেন৷ ফিলিস্তিনের এই গ্রামটির কয়েকজন বাসিন্দা ইসরায়েলের আদালতে আমোনার অবৈধ সেটলমেন্টের বিষয়টি উত্থাপন করেন৷ গত ২০ বছরে এই নিয়ে আদালতে অনেক টানাহ্যাচড়া হয়েছে৷ একের পর এক রুল জারি হয়েছে, যার বিরুদ্ধে আপিলও হয়েছে৷ এখন সর্বোচ্চ আদালত চূড়ান্ত রায় দেয়ায় সরকারের সামনে দৃশ্যত আর কোনো পথ খোলা নেই৷ ৮২ বছর বয়সি ফিলিস্তিনী মারিয়াম হামাদ বলেন, ‘‘আমার বয়স যখন সাত কিংবা আট, তখন আমি প্রায় প্রতিদিন বাবার সঙ্গে আমোনে যেতাম৷''

নিজ জন্মভূমি আমোনার দিকে তাকিয়ে আছে এক নারী
দূর থেকে নিজের জন্মভূমি আমোনার দিকে তাকিয়ে আছে এক নারীছবি: DW/T. Kraemer

সর্বশেষ বিশ বছর আগে সেখানে নিজেদের পারিবারিক জমিতে পা রাখার সুযোগ পেয়েছিলেন হামাদ৷ ১৯৯৬ সালে হঠাৎ করে সেটলাররা সেখানে মোবাইল বাড়ি তৈরি করে৷ এরপর আর সেমুখো হওয়ার সুযোগ পাননি তিনি৷ অথচ আউটপোস্টটির আড়াই হেক্টর জমির মালিক আইনত তিনি৷ হামাদ বলেন, ‘‘জমি আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কেননা আমরা চাষী৷'' ২০১৪ সালে নিজেদের পক্ষে আদালতের রুল জারির পর থেকেই সেখানে যাবার অপেক্ষায় আছেন হামাদ এবং অন্যান্য আবেদনকারীরা৷ 

প্রসঙ্গত, আমোনের এই আউটপোস্ট নিয়ে ইসরায়েলে লম্বা বিতর্ক চলছে৷ সেদেশের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু একাধিকবার সেখানকার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন৷ এমনকি ভবিষ্যতে যাতে এ রকম সেটলমেন্ট প্রত্যাহার করতে না হয়, সেজন্য সংসদে নতুন এক রেগ্যুলেশন বিলও প্রস্তাব করা হয়েছে৷ এতে ফিলিস্তিনি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে ইসরায়েলি সেটলারদের নির্মাণ করা পুরনো আউটপোস্টগুলো বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে৷ ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সেটা করা যাবে৷

বলাবাহুল্য, এই বিলে উগ্রপন্থি ইসরায়েলিরা সন্তষ্ট হলেও অন্যরা জানিয়েছেন, এর ফলে সেখানে দ্বি-জাতি সমাধানের যে সম্ভাবনা আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচিত হচ্ছে তা আরো গুরুত্ব হারাবে৷ ইসরায়েলি এন্টি-সেটলমেন্ট সংগঠন ‘পিস নাও'-এর মুখপাত্র আনাত বেন নুন এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘নতুন এই বিল পাস হলে অন্তত ৫৪টি পুরনো আউটপোস্ট বৈধ করার সুযোগ তৈরি হতে পারে৷ তখন সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে সেটলমেন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সেগুলো সম্প্রসারনেরও সুযোগ থাকবে৷''

আন্তর্জাতিক স্তরেও নতুন বিলটির সমালোচনা করা হচ্ছে৷ জেরুসালেমে জাতিসংঘের বিশেষ দূত নিকোলাই ম্লেডেনোভ জানিয়েছেন, এই বিল পাস হলে তা আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী হবে৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও মনে করে, এ ধরনের বিল ইসরায়েলের নিজস্ব আইনি কাঠামোর সঙ্গেই মানানসই নয়৷

আমোনার বাসিন্দারা অবশ্য আশাবাদী যে, প্রস্তাবিত বিলে আমোনাও অন্তর্ভূক্ত হতে পারে৷ তাই সেটা পাস করতে যা কিছু করা দরকার, করার পক্ষে তারা৷ গ্রিনব্যার্গের কথা হচ্ছে, ‘‘আমাদের দাবি হচ্ছে, আমাদের সঙ্গে ইসরায়েলি নাগরিকদের মতোই ব্যবহার করতে হবে৷ যদি আমার সন্তান সেনাবাহিনীতে যায়, যদি আমি ট্যাক্স দিয়ে থাকি, তাহলে আমোনাতে আমরাই থাকবো, আরবরা নয়৷''

তানিয়া ক্রেমার/এআই

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান