1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এনার্জি ড্রিংক তরুণদের ঠেলে দেয় মদপানের দিকে

১০ জানুয়ারি ২০১১

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তরুণ তরুণীদের মধ্যে মদ্যপানের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে৷ একই সঙ্গে বাড়ছে অ্যালকোহলজনিত নানা সমস্যা৷ এর সঙ্গে নতুন করে যোগ হয়েছে ক্যাফেইন পান৷ এসব নিয়ে গবেষকদের পাশাপাশি এখন রাজনীতিকরাও সক্রিয় হচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/zveC
জার্মানির জনপ্রিয় এনার্জি ড্রিংকছবি: dpa

গত আগস্ট মাসের ঘটনা৷ অ্যামেরিকার একটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো ১৮ বছরের এক তরুণীকে৷ কিছুক্ষণ আগেই তরুণীর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে৷ চিকিৎসকরা চেষ্টা করলেন মেয়েটাকে বাঁচাতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেন৷ অকালেই নিভে গেল একটি জীবন প্রদীপ৷

এরপর কিছুদিন পর আবারও হঠাৎ করে নয়জন ছাত্রী ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লো৷ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয় হয় আর কি৷ দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় সেই যাত্রায় বেচে গেল তাঁরা৷

এভাবে জলজ্যান্ত তরুণ তরুণীদের হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কারণ কি? আগস্ট মাসে মারা যাওয়া তরুণী তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার আগে একটি পানীয় পান করেছিলেন৷ অ্যালকোহল মিশ্রিত পানীয়টিতে আরও ছিল ক্যাফেইন৷ আরও ছিল গুয়ারানা এবং টাউরিন৷ খেলাধুলায় শারীরিক সামর্থ বাড়াতে এই উপাদান দুটি বেশ কাজে দেয়৷ এছাড়াও জানা গেছে, মেয়েটি সেদিনই স্লিমিং পিল খেয়েছিল৷ একদিকে স্লিম হওয়ার চেষ্টা অন্যদিকে অ্যালকোহল মিশ্রিত ক্যাফেইন৷ অসুস্থ হওয়া নয় ছাত্র ছাত্রীদের বেলাতেও একই ঘটনা৷ অসুস্থ হওয়ার আগ মুহূর্তে তারা অ্যালকোহল পানীয় পান করেছিল যার মধ্যে ছিল বেশি পরিমাণে ক্যাফেইন দেওয়া৷

এগুলো হচ্ছে অনেক ঘটনাগুলোর মধ্যে মাত্র কয়েকটি৷ এবং এই ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে৷ তরুণ সমাজের অ্যালকোহল প্রীতি এখন শুধু অ্যালকোহলেই সীমাবদ্ধ নেই, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্যাফেইন৷ ফলে বাড়ছে এই ধরণের ঘটনা৷ তাই যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ পাঁচটি রাজ্য ইতিমধ্যে অ্যালকোহল মিশ্রিত ক্যাফেইন বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে৷ রাজ্যগুলো হলো মিশিগান, নিউ ইয়র্ক, ওকলাহোমা, ইউটা এবং ওয়াশিংটন৷ শুধু রাজ্যগুলোই নয় যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এখন একইভাবে এইসব পানীয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে৷ উদ্দেশ্য, তরুণদের রক্ষা করা৷

কেবল রাজ্য কর্তৃপক্ষ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই নয় প্রচারণায় নেমেছেন মার্কিন সেনেটর চার্লস শুমার৷ তিনি উত্তেজক অ্যালকোহল পানীয় নিষিদ্ধ করার আন্দোলন চালাচ্ছেন৷ তিনি চান, মার্কিন খাদ্য এবং ওষুধ বিভাগ যেন ক্যাফেইনও নিষিদ্ধ করে, কারণ এর ক্রিয়ায় অ্যালকোহলের প্রতি মানুষ ঝুঁকে পড়ে৷ তিনি জানান, অ্যালকোহলের সঙ্গে ক্যাফেইন মিশালে এটি অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইনের মাত্রা ভয়াবহভাবে বাড়িয়ে দেয় যা অত্যন্ত বিপজ্জনক৷

মার্কিন এই সেনেটরের আন্দোলনে সমর্থন যোগাচ্ছে বিজ্ঞানীদের গবেষণাও৷ তরুণদের অ্যালকোহলের দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণ অনুসন্ধান করতে সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের পক্ষ থেকে একটি গবেষণা চালানো হয়৷ মোট এক হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীর ওপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়৷ এতে দেখা যায়, যারা এনার্জি ড্রিংক বা শক্তিবর্ধক পানীয় পান করে তাদের অ্যালকোহলের দিকে ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা বেশি৷ যারা সপ্তাহে অথবা প্রায় প্রতিদিন ক্যাফেইন মিশ্রিত এসব এনার্জি ড্রিংক পান করে তারাই মদ্যপানের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে এবং তারা পরবর্তীতে অন্যদের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে বেশি মদ্যপান করে৷

উল্লেখ্য, পশ্চিমা দেশগুলোতে কারো বয়স ১৮ হওয়ার আগ পর্যন্ত সে অ্যালকোহল কিনতে পারে না৷ তবে তারা এইসব ক্যাফেইন মিশ্রিত এনার্জি ড্রিংক কিনতে পারে৷ গবেষকরা দেখছেন, এইসব এনার্জি ড্রিংক থেকেই অ্যালকোহল পানীয় পানের অভ্যাস গড়ে ওঠে৷ কেবল অভ্যাস নয়, বেশি অ্যালকোহল পানে যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় এনার্জি ড্রিংক থেকেও সেসব শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে মার্কিন গবেষকরা জানিয়েছেন৷ যেমন হঠাৎ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলা কিংবা মাথা ধরা ইত্যাদি৷

ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের যেসব গবেষক এই গবেষণা চালিয়েছেন, তাদের অন্যতম অ্যামেলিয়া অ্যারিয়া৷ তিনি বলেন, ‘‘মাতাল হওয়া থেকে রক্ষা পেতে টিনএজারদের অনেকেই অ্যালকোহলের সঙ্গে ক্যাফেইন মিশিয়ে পান করে যাতে তারা অনেক সময় জেগে থাকতে পারে৷ কিন্তু সেটা ভুল৷'' যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে এই সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন গবেষক অ্যামেলিয়া অ্যারিয়া৷ তবে এই সমস্যা মোকাবেলায় আসলে ব্যক্তিকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে বলে মানছেন তিনি৷ অ্যারিয়ার ভাষায়, ‘‘পণ্যকে নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য আমাদের রয়েছে কিন্তু ব্যক্তি আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য আমাদের নেই৷''

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম

সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক