1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এবার কিস্তি মাৎ করতে উঠেপড়ে লেগেছে খুঁদে বন্ধুরা

৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০

এক যে ছিল রাজা, আর তার ছিল এক রানি৷ তার হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘোড়া, ছিল নৌকা-সিপাই...আরো কতো কি ! না, কোন রূপকথার গল্প বলছি না৷ বলছি সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত ছায়াছবি ‘সতরঞ্জ কে খিলাড়ি’র সেই ‘দাবা’ খেলার কথা৷

https://p.dw.com/p/LuQZ
ছবি: DW-TV

জার্মানির ‘নর্ডরাইন-ভেস্টফালেন' রাজ্যের প্রায় ১৫৭টি বাচ্চাদের স্কুলে বা ‘কিন্ডারগার্টেন'-এ শুরু হয়েছে ‘দাবা' শিক্ষার আসর৷ কম্পিউটার আর ‘ভিডিও গেমস'-এর যুগে তাই এবার ঘোড়ার আড়াই-ঘর আর ‘কিস্তি মাৎ'-এর চাল শিখতে ব্যস্ত ছোট্ট-ছোট্ট ছেলেমেয়ারা৷ কিন্তু কীভাবে ? কীভাবে সেই খুদে বন্ধুদের দাবার মতো তুখড় বুদ্ধিমত্তার একটা খেলায় আকৃষ্ট করছেন জার্মানরা ?

ছোট-ছোট রং-বেরং-এর বোতাম সাইজের ‘জেমস', নানা রকমের চকলেট - তাও আবার বিশাল পরিমাণে - এসব দিয়েই মন ভোলানো হয়ে থাকে ‘কিন্ডারগার্টেন'-এর বাচ্চাদের৷ এসবের প্রলোভন দেখিয়েই বাচ্চাদের শান্ত করে বসানো হয় দাবা খেলতে৷ আজ নয়, সেই ২০০৮ সাল থেকে৷ ছোট্ট ইউলিয়ুস জানায়, ‘‘রাজা'র যখন প্রাণ সংকট, সে অবস্থাকেই বলা হয় ‘কিস্তি মাৎ'৷ আর তখন রাজার পালানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না৷''

এই ছ'বছর বয়সী ছেলেটাও বুঝে গেছে দাবার মোদ্দা কথা৷ ‘নর্ডরাইন-ভেস্টফালেন'-এর আরো অসংখ্য বাচ্চার মতো, ইউলিয়ুসও স্কুলেই শিখে ফেলেছে দাবার সব তাবড় তাবড় চাল৷

Flash-Galerie Spiele Gesellschaftsspiele Schach
স্কুল বা ‘কিন্ডারগার্টেন'-এ শুরু হয়েছে ‘দাবা' শিক্ষার আসরছবি: picture-alliance/ dpa

বাচ্চাদের এভাবে দাবা খেলা শেখানোর ব্যাপারটা প্রথমে মাথায় আসে রাল্ফ শ্রাইবারের৷ দাবা খেলতে ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসতো রাল্ফ৷ তাই নিজের যখন মেয়ে হলো, তখন সে ভাবতে শুরু করল, তাকে কিভাবে খুব সহজ করে দাবা খেলা শেখানো যায়৷ আর এতে তাকে সাহায্য করেছিল রাল্ফ-এর স্ত্রীও৷ রাল্ফের কথায়, ‘‘আমরা প্রথমেই ও'কে দাবা খেলায় ব্যবহৃত প্রত্যেকটি ঘুঁটি সম্পর্কে ভাল করে বোঝাই৷ রাজা, রানি, হাতি, ঘোড়া - একে একে প্রত্যেকটি ঘুঁটির চাল বুঝিয়ে দেই৷ তারপর একদিকে আসল ঘুঁটি ও প্রতিপক্ষ হিসেবে চকলেট আর জেমস সাজিয়ে বলি - খেলো, তবে ঘুঁটি দিয়ে চকলেট আর জেমস কাটতে পারলেই কিন্তু, সে গুলো তোমরা খেতে পারবে৷ কয়েকদিন এভাবেই চলে৷ আর দেখা যায়, দু-তিন দিনের মধ্যেই তারা ঘুঁটির চালগুলি সব শিখে ফেলছে৷ তখন আমাদের মেয়ের বয়েস ছিল মাত্র আড়াই৷ অর্থাৎ, তিন বছর বয়সের মধ্যেই তারা শিখে ফেলে দাবা খেলা৷''

নিজের মেয়েকে শেখানোর পর, রাল্ফ ‘নর্ডরাইন-ভেস্টফালেন' রাজ্যের আরো বেশ কয়েকটা স্কুলে এভাবে দাবা শেখানোর উপায়ের কথা জানায়৷ দেখতে দেখতে প্রায় ১৫৭টি স্কুলে পাঠক্রমের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করা হয় দাবা৷ আর কেনই বা হবে না ? দাবা তো আর শুধু খেলা না৷ এতো একরকম রাজ্য জয়৷ এতে রাজা-রানি আছে, যুদ্ধ আছে, হার-জিত আছে৷ তাই বাচ্চারা এ খেলায় দারুণ মজা পায়৷ কাজে লাগায় তাদের কল্পনা শক্তি, সত্যি করে তোলে যুদ্ধ জয়ের স্বপ্ন৷

Schach für Kinder
দাবা খেলায় শান্ত তো বটেই, বেশ মনোযোগীও হয়ে ওঠে বাচ্চারাছবি: picture-alliance/ dpa

‘‘এবার আমার চাল....আর তারপর কিন্তু আমার৷'' হ্যাঁ, এবার ডেনিসের চাল৷ ইউলিউস-কে সঙ্গে নিয়ে আজ সে দু-দুটো মেয়ের বিপক্ষে খেলছে৷ মাটিতে দাবার বোর্ড পেতে গোল করে বসেছে ওরা৷ বেশ ভালোই খেলে ওরা৷ আর তাই তো, স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেই ওদের প্রত্যেককে একটা করে দাবার বোর্ড আর ঘুঁটি দেওয়া হয়েছে৷ ডেনিস বলে, ‘‘প্রথম দিকে খাতার মধ্যে ছক কেটে সাদা, কালো রঙ করে খেলতে হতো আমাদের৷ প্রতিটি চালে রাবার দিয়ে মুছে মুছে খেলতে হতো আমাদের৷ কিন্তু এখন, আমাদের খেলার বোর্ড আছে৷ তাই এখন আমাদের খুব মজা৷''

এভাবে যে বাচ্চারা একটা নতুন খেলাই শিখছে - তা নয়৷ এভাবে তাদের বেশ অনেকক্ষণ ধরে একটা জায়গায় আটকে রাখা যায়৷ এতে শান্ত তো বটেই, বেশ মনোযোগীও হয়ে ওঠে বাচ্চারা৷ ফলে অন্যান্য কাজে, বিশেষত পড়াশোনার সময় তাদের চঞ্চলতাও কমে৷ আনন্দের সঙ্গে জানালেন পাঁচ বছর বয়সী ডেনিসের মা নিকোল গামবালাট৷ হবে না ? সেখানেই তো এ পরিকল্পনার ‘কিস্তি মাৎ'৷

‘‘কিস্তি মাৎ৷ অর্থাৎ, যখন কোথাও যাওয়ার আর পথ থাকে না - তখনই হয় কিস্তি মাৎ৷ আর তখন রাজা যায় মরে৷ আমি, মানে আমার যদি এখন চাল থাকতো...তাহলে এখন আমিই হয়ে যেতাম কিস্তি মাৎ৷'' জানালো খুঁদে বন্ধু ডেনিস৷

প্রতিবেদক : দেবারতি গুহ

সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক