1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওবারামারগাউ - গোটা গ্রামই যেখানে ‘প্যাশন প্লে’-র মঞ্চ

৫ এপ্রিল ২০১০

জার্মানির বাভারিয়া অঞ্চলের ছোট্ট ওবারামারগাউ গ্রামে প্রতি ১০ বছর অন্তর মঞ্চায়িত হয় যিশু খ্রিষ্টের ক্রুশে বিদ্ধ হওয়ার মর্মস্পর্শী কাহিনি নিয়ে ‘প্যাশন প্লে’৷ ওবারামারগাউ’এর বাসিন্দারাই এই নাটকের কুশীলব৷

https://p.dw.com/p/Mjy0
প্যাশন প্লের একটি দৃশ্যছবি: Passionsspiele GmbH

এই প্যাশন থিয়েটারের যাত্রা শুরু হয় সেই ১৬৩৪ সালে৷ এর আগের বছর ১৬৩৩ সালে প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এই গ্রামের বহু মানুষ৷ তাই গ্রামের বাসিন্দারা ঈশ্বরের কাছে অঙ্গীকার করেন প্রতি ১০ বছর অন্তর যিশু খ্রিষ্টের ক্রুশে বিদ্ধ হওয়ার কাহিনি তুলে ধরবেন থিয়েটারের মাধ্যমে৷ শোনা যায় তারপর থেকে এই গ্রামে প্লেগে আক্রান্ত হয়ে আর কোনো মানুষ মারা যায়নি৷

সর্বশেষ ‘প্যাশন প্লে’ অনুষ্ঠিত হয় ২০০০ সালে৷ দশ বছর গড়িয়ে যাওয়ার পর ফিরে এল আবার প্যাশন প্লের বছর ৷ পাঁচ হাজার মানুষের গ্রাম ওবারামারগাউ’এর তর যেন আর সইছেনা৷ ‘প্যাশন প্লে’র প্রস্তুতিপর্ব চলছে বেশ কয়েক মাস ধরে৷ ১০০টিরও বেশি মঞ্চায়ন হবে৷ যা শুধু গ্রামটির শীর্ণ কোষাগারে অর্থই এনে দেবেনা, গ্রামবাসীদের দৈনন্দিন জীবনে বয়ে আনবে এক সুখকর বৈচিত্র্যও৷

প্যাশন প্লের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন ক্রিশ্টিয়ান শ্ট্যুকেল৷ ওবারামারগাউ’এর অপেশাদার শিল্পীদের নিয়ে রিহার্সেল করাচ্ছেন তিনি৷ ক্রিশ্টিয়ান শ্ট্যুকেল নিজেও এই গ্রামেরই বাসিন্দা৷ ছেলেবেলা থেকেই থিয়েটারের প্রতি ভালবাসা তাঁর৷ সেই ভালবাসা থেকেই প্যাশন প্লের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন শ্টুকেল৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,

‘‘আমি এমন এক পরিবারে বড় হয়েছি, যেখানে অনবরত ‘প্যাশন প্লে’ নিয়ে আলোচনা হত৷ ১৯৭০ সালে ৭ বছর বয়সেই আমি আমার দাদার সঙ্গে সব সময় প্যাশন থিয়েটারে যেতাম৷ যার ফলে স্কুলে ‘ক্লাস টু’ টা কোন দিক দিয়ে চলে গেছে বুঝতেই পারিনি৷ বলা যায় অতি অল্প বয়সেই প্যাশন প্লের সঙ্গে গভীর সংযোগ আমার৷’’

মে মাসের ১৫ তারিখে ‘প্যাশন প্লে’র উদ্বোধন ৷ তাই তোড়জোড় চলছে পুরোদমে৷ মঞ্চসজ্জা, পোশাক তৈরি করা, রিহার্সেল দেয়া এসব নিয়ে ব্যতিব্যস্ত সবাই৷ শিল্পী নির্বাচন করা হয়ে গেছে প্রায় বছর খানেক আগেই৷ ওবারামারগাউতে জন্ম যাদের কিংবা সেখানে কমপক্ষে ২০ বছর ধরে বসবাস করছেন যারা, তারাই অভিনয় করতে পারবেন প্যাশন প্লেতে৷ প্রধান চরিত্রগুলির জন্য দুজন করে শিল্পী নির্বাচন করা হয়েছে৷ যিশু ক্রিশ্টের চরিত্রে রূপদানকারী অভিনেতাদের একজন ফ্রিডরিখ মাইয়েট তাঁর অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে জানান,

‘‘শারীরিক দিক দিয়ে বেশ কষ্টকর দৃশ্য এটি৷ কেননা আমাদের প্রায় ২০ মিনিট ক্রুশে ঝুলে থাকতে হবে৷ আগেকার প্যাশন প্লেতে অন্যদের যিশুর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখেছি৷ এখন নিজেকেই এই দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে৷ সত্যি এক মর্মান্তিক মৃত্যু৷’’

প্যাশন প্লে উপভোগ করতে হাজার হাজার মানুষ সরগরম করে তুলবেন ওবারামারগাউ গ্রামের পথ ও প্রান্তর৷ অ্যামেরিকা, ইংল্যান্ড ও স্ক্যান্ডেনেভিয়ার দেশগুলি থেকেও আসবেন বহু উৎসাহী দর্শক৷ সেই ১৯৩০ সালের জুলাই মাসে খোদ রবীন্দ্রনাথ জার্মানি ভ্রমণে এসে ওবারামারগাউ’এর ঐতিহ্যবাহী প্যাশন প্লে উপভোগ করেছেন৷ গভীর আবেগ নিয়ে লিখেছেন ইংরেজি কবিতা ‘দ্য চাইল্ড’৷ পরে সেই কবিতাই বাংলা রূপান্তরে নাম নেয় ‘শিশুতীর্থ’৷

প্রতিবেদক : রায়হানা বেগম

সম্পাদনা : আব্দুল্লাহ আল-ফারূক