1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওরা কি আওয়ামী লীগকে চাঁদে পাঠাবে?

১২ জানুয়ারি ২০১৭

আওয়ামী লীগের জনসভায় নাকি অনেক মানুষ হয়েছিল৷ কিন্তু সরকারের তথ্য অধিদপ্তর তাতে খুশি হতে পারেনি৷ তাই ফটোশপের কারসাজিতে জনসভার মানুষ বাড়িয়েছে৷ আওয়ামী লীগকে আসলে কত জনপ্রিয়, কত উঁচুতে দেখতে চায় তারা? চাঁদের উচ্চতায়?

https://p.dw.com/p/2VhOZ
আওয়ামী লীগ
ছবি: Saiful Islam Kallol

আওয়ামী লীগকে চাঁদে তোলার আশঙ্কা জাগার কারণ আছে৷ এর একটা অতীতও আছে৷ বাংলাদেশে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনে বিশেষ প্রিয়কে চাঁদে পাঠানোর নজির তো আমরা আগে দেখেছি৷ ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসির আদেশ দেয়ার পর জামায়াত-শিবির সমর্থকরা দেশে তাণ্ডব চালায়৷ ‘সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে' বলে গুজব ছড়িয়ে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টাও হয়েছে তখন৷ সাঈদী নিজে অবশ্য জানিয়েছিলেন, তাঁকে চাঁদে দেখা যেতে পারে এমন কথা তিনি বিশ্বাস করেননি৷

মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রেস ইনফর্মেশন ডিপার্টমেন্ট (পিআইডি) আওয়ামী লীগের জনসভা নিয়ে যা করেছে, তা দেখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বোধহয় বিশ্বাস করতে পারবেন না৷ এমন কাণ্ড কোনো স্বাভাবিক মানুষ করতে পারে!

পিআইডি-র অবিশ্বাস্য এ কীর্তিটি তুলে ধরেছে ডেইলি স্টার৷ ডেইলি স্টারের শাহরিয়ার খান সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন ফটোশপে অবিশ্বাস্য ‘কীর্তি' স্থাপনে পিআইডিও কম যায় না৷

২০১৩ সালে জামায়াত-শিবির সমর্থকরা তাদের জেলবন্দি নেতা সাঈদীকে ‘জাদুবলে' মুক্ত করে ফটোশপে চড়িয়ে সোজা চাঁদে পাঠিয়েছিল৷ ২০১ ৭ সালে সরকারের তথ্য অধিদপ্তর সংবাদমাধ্যমকে আওয়ামী লীগের জনসভার এমন ছবি সরবরাহ করেছেন যেখানে একই ব্যানার উল্টো এবং সোজা, একই ব্যক্তির ডাবল ভার্সন, গেঞ্জির ফুঁড়ে মানুষের আত্মপ্রকাশসহ অনেক সার্কাস, অনেক ভৌতিক কাণ্ড-কীর্তি আছে৷

জনসভার দিনে ঢাকার মানুষকে কী পরিমাণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সে খবর আমরা সংবাদমাধ্যমেই পেয়েছি৷ সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল, রেডিও, অনলাইন পোর্টালগুলোর খবর অনুযায়ী, সকাল থেকেই  সোহরাওয়ার্দি উদ্যান অভিমুখে মিছিল শুরু হয়েছিল শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে৷ জনসমায় যথেষ্ট লোক সমাগম হয়েছিল এমন খবরও আমরা পেয়েছি৷

কিন্তু পিআইডি-র তাতে মন ভরেনি৷ তাই ছবির সঙ্গে ছবি জোড়া দিয়ে জনসভায় জনসংখ্যা বাড়ানো হয়েছে৷

নিজেদের ওয়েবসাইটে পিআইডি দাবি করে, তারা ‘‘বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়াধীন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তর৷ বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম এ সংস্থাটি দেশের তথ্যসম্পদ উন্নয়ন, তথ্য সংরক্ষণ, তথ্যের নিরাপদ সঞ্চালন, তথ্য অধিকার সংরক্ষণ, অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিতকরণসহ তথ্যসংশ্লিষ্ট বিবিধ আইন-বিধি-বিধান-প্রবিধান প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে থাকে৷''

পিআইডি মনে করে, তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, ‘‘জনগণ ও সরকারকে সেবা প্রদান৷''

পিআইডি নাকি ‘‘সবসময় জনকল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারি সংবাদ এবং ছবি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশের জন্য সরবরাহ করে থাকে৷ তথ্য অধিদফতর জনগণের ভূমিকাকে সবসময় মূল্যায়ন করে এবং গুরুত্ব দিয়ে থাকে৷ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সহযোগিতায় তথ্য অধিদফতর সর্বান্তকরণে দেশবাসীর সেবার পাশাপাশি রাষ্ট্রকে সেবা দিয়ে থাকে৷''

অথচ আমরা বুঝতে পারছি না এমন ভৌতিক ছবি প্রকাশ করে পিআইডি তথ্যসম্পদ উন্নয়ন, তথ্য সংরক্ষণ, তথ্যের নিরাপদ সঞ্চালনের কী অবদান রাখল৷

আশীষ চক্রবর্ত্তী
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

এর মাধ্যমে জনগণ ও সরকারকে ‘বিনোদন' ছাড়া আর কী ধরনের সেবা দেয়া হলো তা-ও আমাদের বোধগম্য হয়নি৷

‘জনকল্যাণ', ‘জনগণের ভূমিকা', ‘সেবা' ইত্যাদি মুখরোচক শব্দকে পিআইডি কতটা মহিমান্বিত করলেন তা-ও বুঝতে পারছি না৷

আমরা জানতাম, পিআইডি চিরকালই সরকারের৷ সেই সুবাদে সরকারি দলের হয়েই তারা কাজ করে৷ অনেক সময় সরকারি দলের প্রতি তাদের আনুগত্য দলীয় কর্মীদেরও লজ্জায় ফেলে৷ কিন্তু এবারের ‘কীর্তি' অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে চুরমার করেছে৷

তাদের এবারের ‘কীর্তি' যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের লজ্জায় ফেলবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ পিআইডি আসলে কী চায়? সরকারের ‘সুনজর' থাকা নিশ্চিত করতে তারা কি আওয়ামী লীগকে চাঁদে পাঠাতে চায়?

আপনি কি লেখকের সঙ্গে একমত? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান