1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কবির আঁকা বারোটি ছবি নিলাম হয়ে গেল সথবিতে

১৭ জুন ২০১০

ষাট বছর বয়সে ছবি আঁকতে শুরু করেছিলেন তিনি৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ তাঁর বারোটি ছবি নিলাম হয়ে গেল লন্ডনের বিখ্যাত নিলামসংস্থা ‘সথবি'তে৷ প্রায় এগারো কোটি ভারতীয় টাকা দাম পেয়েছে ছবিগুলি৷

https://p.dw.com/p/Nt1U
রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবির কি কোন অর্থমূল্য হয়?ছবি: Harun Ur Rashid Swapan

রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবির কি কোন অর্থমূল্য হয়? শিল্পবোদ্ধাদের সকলেরই মত, না হয় না৷ সেগুলি অমূল্য৷ তারপরেও বিশ্বখ্যাত শিল্পবস্তু নিলাম সংস্থা সথবি যখন তাঁর ছবিগুলিকে নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল এ মাসের গোড়ায়, তখন তা নিয়ে যথেষ্ট প্রতিবাদ এবং আপত্তি দেখা গেছে৷ কারণ, কবির আঁকা যে ছবিগুলিকে নিলামে তুলে সেই অর্থ সমাজসেবার কাজে দান করার ঘোষণা করেছিল ডার্লিংটন হল ট্রাস্ট, সেগুলিকে ভারতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি রয়েছে বহুদিন আগে থেকেই৷

সেই কৈশোরের গোড়া থেকেই যিনি কবিতা, গান লিখতে শুরু করেছিলেন, পরবর্তীতে নাটক থেকে উপন্যাস বা প্রবন্ধ, সাহিত্যের সব শাখাতেই যাঁর অবাধ বিচরণ, সেই রবীন্দ্রনাথ ছবি আঁকায় হাত দেন যথেষ্ট পরিণত বয়সে৷ প্রথমে লেখার মধ্যে কাটাকুটি থেকে একটা অবয়ব তৈরি করতে ভালোবাসতেন কবি৷ পরে সেই শখই তাঁকে টেনে আনে পূর্ণাঙ্গ ছবির দিকে৷ বিমূর্ত্ত কিছু অবয়ব, কখনো প্রকৃতি, কখনো বা শুধুই কল্পনার গভীর কিছু রেখা এক আশ্চর্য ঘন রঙে, তীব্র আবেগের লেলিহান ফুলকিতে ফুটে উঠত কবির ক্যানভাসে৷ সে ছবিগুলি সম্পর্কে তিনি নিজেই অনেকসময় তাঁর ঘনিষ্ঠজনেদের কাছে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন৷ মনের কোণায় ছিল সন্দেহও৷ পাশ্চাত্ত্যের সমঝদাররা কী আদৌ তাঁর এই শিল্পচর্চাকে বুঝবে? এ প্রশ্নও করেছেন কবি তাঁর প্রিয়জন, অনুজ শিল্পী নন্দলাল বসুর কাছে৷ ১৯৩০ সালের জুন মাসে নন্দলালকে লেখা একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ইংল্যান্ডে হয়তো বা উপেক্ষিত হবে তাঁর এই পরিণত বয়সের স্বশিক্ষিত শিল্পচর্চা৷ এই ছবিগুলি৷

লন্ডন শুধু নয়, তিনের দশকে প্যারিসেও এক প্রদর্শনীতে কবির আঁকা ছবিগুলি দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান আট দশক আগের সেই রেনেসাঁ পরবর্তী বিশ্বের শিল্পবোদ্ধারা৷ নোবেলজয়ী বাঙালি কবির সৃজনশীলতার গভীরতা সেদিন তাঁদের মুগ্ধ করার পাশাপাশি বিনতও করেছিল তাঁর ভুবনজয়ী অতলান্ত প্রতিভার সামনে৷ অর্থাৎ, এই সৃষ্টির শিল্পমূল্য সেদিন প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল সাগরপারে৷ বোঝা গিয়েছিল তুলির আঁচড়ে যে সৃষ্টি তিনি করে গেছেন, তা কালজয়ী, তা বিশ্বমানের৷

যদিও সেই শিল্পের অর্থমূল্য নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে বারোটি ছবি নিলাম হয়ে যাওয়ার পর৷ ভারতীয় শিল্পবোদ্ধা এবং প্রথমসারির শিল্পীদের অভিমত, অর্থমূল্যে অন্তত কবির সৃষ্টি সেভাবে মর্যাদামন্ডিত হল না এই নিলামে৷ আরও অনেক বেশি দাম ধার্য হওয়া উচিত ছিল রবীন্দ্রনাথের ছবির৷ কিন্তু অর্থমূল্যের সেই সম্মান পায় নি কবির ছবি৷

তা না পাক, রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবিগুলির মালিকানা অন্তত পাওয়া উচিত ছিল তাঁর স্বদেশের৷ সেই ব্রিটিশ শাসনের অন্ধকার দিনে অন্য অনেক কিছুর মতই জোর করে নিয়ে চলে যাওয়া এই অমূল্য ছবিগুলির মালিকানা ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতেই তাই বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদ ক্রমশই ধূমায়িত হচ্ছে এবং হয়ে চলেছে৷

প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন