1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কিংবদন্তির ট্রেন ট্রান্সসিব

২১ অক্টোবর ২০১৬

বেইজিং থেকে মঙ্গোলিয়া; সেখান থেকে সাইবেরিয়া হয়ে মস্কো, দশ হাজার কিলোমিটার পথ, রেলপথ৷ ট্রেন কিন্তু শুধু একটা৷ তবে যে সে ট্রেন নয়, কিংবদন্তির ট্রান্সসাইবেরিয়ান রেলওয়ের জারেনগোল্ড, বা জারের সোনার ট্রেন৷ কে চড়ে সেই ট্রেনে?

https://p.dw.com/p/2RVd8
Transsibirische Eisenbahn
ট্রেনের ভেতরে সব কিছু লাল মখমলে মোড়াছবি: picture-alliance/dpa/DB Lernidee Erlebnisreisen

ট্রেনটির নাম ‘জারেনগোল্ড' বা ‘জারের সোনার ট্রেন'; জার বলতে স্বভাবতই রাশিয়ার জার বা সম্রাটকে বোঝায়৷ যাত্রীরা সবে এশিয়া থেকে ইউরোপ মহাদেশে পা দিয়েছেন, ইয়েকাটেরিনবুর্গ শহরের কাছে৷ ট্রান্সসাইবেরিয়ান রেলওয়ে ধরে বেইজিং থেকে মঙ্গোলিয়ার উলান বাটোর হয়ে, বৈকাল হ্রদ, ইর্খুটস্ক আর নভোসিবিরস্ক ছাড়িয়ে ইয়েকাটেরিনবুর্গ পৌঁছাতে দশ দিন দশ রাত সময় লেগে গেছে!

ট্রেনের ভেতরে সব কিছু লাল মখমলে মোড়া, যেন সত্যিই জারের জন্য৷ পরে কমিউনিস্ট পার্টির হোমরা-চোমরা ছাড়া অন্য কেউ জারের সোনার ট্রেনে চড়তে পারতেন না৷ আজ হামবুর্গের পেট্রা আর আক্সেল পট সেই ট্রেনে চড়েছেন বটে, তবে খুব একটা ইমপ্রেসড হননি, অন্তত ট্রেন দেখে নয়৷ ট্রেনের ঝাঁকানিতে ঘুমোনোও অভ্যেসের ব্যাপার৷ আক্সেল বলেন, ‘‘ম্যানেজ করে নিতে হয়৷ আমি ১৯০ সেন্টিমিটার লম্বা৷ আমিও এই বিছানায় শুতে পারি, কিন্তু ডানদিক বাঁদিক নড়াচড়া করার উপায় নেই৷ তা সত্ত্বেও বেশ আরামের৷ চার বা পাঁচতারা হোটেল নয় বটে, তা প্রত্যাশা করাও ভুল, বিশেষ করে এই ট্রেনে চড়লে...৷''

পেট্রা বললেন, ‘‘দিন দুয়েক পরেই ওটা আর গায়ে লাগে না, বেশ ভালো ঘুমোনো যায়৷ বরং কেবিন থেকে করিডর ধরে রেস্টুরেন্ট কার অবধি যেতে যে দোলা খেতে হয়, তাই নিয়েই লোকে ঠাট্টা-মশকরা করে৷ নয়ত বেশ মজাই লাগে৷''

নানা ভাষা, নানা মত

জারেনগোল্ড ট্রেনে সব দেশের মানুষ আছেন৷ ইন্দোনেশিয়ার এক যাত্রী বললেন, এটাই তাঁর প্রথম রেল যাত্রা৷ ট্রান্সসাইবেরিয়ান রেলওয়ে সম্পর্কে অনেক শুনেছিলেন, এবার সেই স্বপ্ন সার্থক হলো৷ কিংবদন্তির ট্রেন ট্রান্সসিব সারা বিশ্ব থেকে মানুষকে টানে – শুধু একটি দেশের মানুষের কমতি৷ খোদ রুশদের এই ট্রেনে বিশেষ দেখতে পাওয়া যাবে না৷

টুর গাইড ডিটমার এব্যার্ট বলেন, ‘‘অধিকাংশ সময়টা আমরা রাশিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু ট্রেনে রুশ যাত্রী খুব কম থাকেন৷ ...রুশদের কাছে ট্রান্সসাইবেরিয়ান রেলওয়ের একটা অন্য অর্থ বা উদ্দেশ্য আছে৷ সাইবেরিয়ায় পণ্য ও যাত্রী চলাচলের ধমনী হতে পারে এই ট্রান্সসিব, কিন্তু সেটা পরিবহণের পন্থা হিসেবে৷''

এতটা পথ প্লেনে না গিয়ে ট্রেনে যাবার ইচ্ছা হয় কেন?

ভ্যানকুভার থেকে আসা ক্রিস্টা ম্যাগনুসন, ‘‘প্লেনে চড়লে অনেক কিছু মিস করতে হয়; দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে সেরকম চেনাজানা হয় না৷ ...ট্রেনে চড়লে দেশের সংস্কৃতির অনেক কাছে আসা যায়, মানুষজনের কাছে আসা যায়; অনেক কিছু দেখা যায়৷'' যেমন স্বশাসিত তাতারস্তান প্রজাতন্ত্রের রাজধানী কাজান৷ বহু শতাব্দী ধরে এখানে মুসলমান, খ্রিষ্টান, ইহুদি, তাতার ও রুশরা শান্তিতে বসবাস করছেন৷ কাজান-এর চোখ ধাঁধানো স্থাপত্য তার প্রমাণ৷

দ্বিপ্রহরে জারেনগোল্ড-এর যাত্রীদের জন্যে আরেকটা চমক৷ কাজানের সংগীত বিদ্যালয়ের ৮ থেকে ১৬ বছর বয়সি সংগীতশিল্পীরা যাত্রীদের জন্য একটি কনসার্ট দিলেন৷ কাজানের সংগীত বিদ্যালয়টি গোটা রাশিয়ায় খ্যাত৷ বহু বিশ্বখ্যাত যন্ত্রবাদকের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে এই কাজান থেকে৷ গানবাজনা আর সেই সঙ্গে রুশ খানাপিনা৷ ট্রেনের রেস্টুরেন্টের খাবারে মাছের কোনো অভাব নেই, তার সঙ্গে রয়েছে মাংস, আলু ও সবজি৷ ট্রেনে তিনটি রেস্টুরেন্ট কার৷ সেখানকার পরিবেশ আদৌ ফর্মাল নয়৷

পেট্রা পট বললেন, ‘‘সবকিছু বেশ ভালো৷ কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে হয় না৷ আগে থেকেই সব কিছুর ব্যবস্থা করা আছে, দারুণ ভালো ব্যবস্থা৷'' আক্সেল পট বললেন, ‘‘আমরা দু'জনেই নানা ধরনের স্মৃতি নিয়ে যাচ্ছি; এছাড়া যে সব মানুষের সঙ্গে আলাপ ও বন্ধুত্ব হয়েছে৷ ...সব মিলিয়ে ভালো কেটেছে৷'' এবার শুধু মধ্য রাশিয়া পার হয়ে মস্কোয় যাওয়াটা বাকি৷ সেখানেই জারের সোনার ট্রেনের সুদীর্ঘ ১০,০০০ কিলোমিটার যাত্রাপথের শেষ ও নতুন যাত্রার সূচনা৷

 প্রতিবেদন: মারটিন হ্যারৎসগ/এসি

 সম্পাদনা:  দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান