1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কৃষিতে পড়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব

১১ ফেব্রুয়ারি ২০১১

ধান বাংলাদেশ প্রধান ফসল৷ আর কৃষি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ প্রকৃতি নির্ভর৷ এখন পর্যন্ত আউশ আমন ধান পুরোপুরিই বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল৷ সেই দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে৷ কৃষি ও কৃষক ক্ষতির মুখোমুখি৷

https://p.dw.com/p/10FWt
বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ প্রকৃতি নির্ভরছবি: DW/Swapan

কয়েকটি কথা শুনুন৷ এক – জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শস্যের গুণাগুণ ও উৎপাদনের পরিমাণে পরিবর্তন আসবে৷ বর্তমান চাষ এলাকায় উৎপাদন হ্রাস পাবে৷ দুই – পানির স্বল্পতা ঘটবে, হ্রাস পাবে মাটির উর্বরতা৷ তিন – নতুন নতুন বালাই দেখা দিতে পারে৷ ফলে কৃষিতে কীটনাশক ও সারের প্রয়োগ বাড়াতে হবে৷ চার – সেচের ব্যাপকতা, ভূমিক্ষয়, মৎস্য বৈচিত্র্য কমে যাওয়া, রাসয়ানিকের ব্যবহার পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে৷ পাঁচ – দারিদ্র বাড়বে এবং সমাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে৷ ছয় – ২১ শতকে সার্বিকভাবে কৃষির উৎপাদন শতকরা ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে৷ সাত – ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ধান ও গমের উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে৷

এই সবই হবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং ধরণ পরিবর্তিত হচ্ছে৷ এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষি কাজে৷ ফলে প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে৷

Reisfeld Bangladesch
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রভাব পড়ছে কৃষি কাজেছবি: DW/Swapan

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বহুলাংশে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভরশীল৷ মানুষের মৌলিক প্রয়োজন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জোগান দিয়ে থাকে কৃষি৷

বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি খাতের অবদানের প্রায় ৫৫ শতাংশ৷ সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ৫৪ শতাংশ মানুষ কৃষি পেশায় নিয়োজিত আছেন৷ কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বাংলাদেশের কৃষি বৈরী জলবায়ুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈরী জলবায়ুর সৃষ্টি হচ্ছে৷

তাপমাত্রা বৃদ্ধি জলবায়ুর ও আবহাওয়ার স্বাভাবিক অবস্থাকে অস্বাভাবিক ও অস্থিতিশীল করে তুলেছে, যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষির ওপর৷ কেননা কোনো একটি নির্দিষ্ট শস্যের বেড়ে ওঠার জন্য একটি পরিমিত মানের জলবায়ুর তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি উপাদানগুলোর প্রয়োজন হয়৷

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, এ কথা আগেই বলেছি৷ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ইতোমধ্যেই বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে৷ বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২১০০ সন নাগাদ সাগর পৃষ্ঠ সর্বোচ্চ ১ মিটার উঁচু হতে পারে, যার ফলে বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৮.৩ শতাংশ এলাকা নিমজ্জিত হতে পারে৷ এ পূর্বাভাস সত্যে পরিণত হলে বাংলাদেশকে উক্ত এলাকার কৃষিসহ সব কিছুই হারাতে হবে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে৷

বাংলাদেশের কৃষিবিদরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম একটি নিদর্শন বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টে যাওয়া৷ আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে তেমন বৃষ্টি হয় না৷ আশ্বিন মাসে ৪-৫ দিন এমন পরিমাণে বৃষ্টিপাতে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়৷ খরাসহ বিভিন্ন কারণে দেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনে দিনে নিম্নমুখী হয়ে সেচকাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে৷ এর ফলে বিভিন্ন কৃষির উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷

অন্যদিকে, স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত বিঘ্নিত হওয়ায় ঘন ঘন বন্যা ও খরার সম্মুখীন হতে হচ্ছে দেশকে৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন বাংলাদেশের কৃষির জন্য অবধারিত নিয়তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ ১৯৭৩-১৯৮৭ সন পর্যন্ত ২১ দশমিক ৮ লাখ মেট্রিক টন শুধু ধান নষ্ট হয়েছে খরায়৷ বন্যা, খরা, লবণাক্ততা প্রভৃতি দেশের কৃষির ধরনকে বদলিয়ে দিয়েছে৷ এক সময় এ দেশে কয়েক হাজার প্রজাতির ধান চাষ হতো৷ বর্তমানে তা গেছে অনেক কমে৷

বন্যার কারণে আউশ ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষক সেচ ও খরচনির্ভর বোরো ধানের দিকে ঝুঁকেছে৷ অপর দিকে ধানের দিকে কৃষক বেশি ঝুঁকে পড়ায় ডাল চাষের জমি হ্রাস পেয়েছে৷ ফলে ডালশস্যের আবাদ তাৎপর্যপূর্ণভাবে হ্রাস পেয়েছে৷ তাছাড়াও পাট, গম ও আখের চাষ উৎপাদন উভয়ই লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে৷ সব কিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে যে ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, তা সত্যিই দুঃখের, বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন