1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোবলেন্স শহরে উদ্যান মেলা

২২ এপ্রিল ২০১১

১৫ই এপ্রিল ছিল কোবলেন্স শহরে বুন্ডেসগার্টেনশাউ – অর্থাৎ জার্মান উদ্যান মেলা৷ মেলার উদ্বোধন করেন জার্মান প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান ভুল্ফ৷ বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই বাগানকে জার্মান জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ধরে নেয়া হয়৷

https://p.dw.com/p/112Id
জার্মানরা বাগান করতে পছন্দ করেছবি: picture alliance / dpa

গত ১৫ই এপ্রিল বেশ ঘটা করেই পালন করা হল বুন্ডেসগার্টেনশাউ বা জার্মান উদ্যান মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান৷ আর এ উদ্যানে বিভিন্ন ধরণের ফুলগাছ, গাছের চারা ছাড়াও দেখা গেছে নানা ধরণের বনসাই৷ বলা প্রয়োজন, জার্মানরা বাগান করতে পছন্দ করে৷ যে কোন বাড়ির বারন্দায় কোন না কোন ফুলের টব শোভা পাচ্ছে – এ দৃশ্য দেখা যাবেই৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিধ্বস্ত গোটা জার্মানিকেই একেবারে শূন্য থেকে এগিয়ে যেতে হয়েছে৷ তখনই নানা জাতের গাছ লাগিয়ে সবুজ করা হয়েছে জার্মানিকে৷ প্রতি বছর এই উদ্যান মেলার আয়োজন করা হয় একেকটি শহরে৷ এবছর এই মেলার স্থান রাইন নদীবর্তী কোবলেন্স৷ রাইনলান্ড প্যালাটিনেট রাজ্য, কোবলেন্স শহর আর স্পন্সররা মিলে এই মেলা আয়োজন করতে ১০২ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছে৷ মেলায় কী দেখা গেল? যতদূর চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল৷

BdT Deutschland BuGa Bundesgartenschau 2011 in Koblenz
ছবি: dapd

জার্মান প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান ভোল্ফ তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে বললেন, ‘‘জার্মানির এই উদ্যান মেলা অত্যন্ত সফল একটি আয়োজন৷ এই মেলা কোবলেন্স শহরকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলবে বলে আমি মনে করি৷ কোবলেন্স শহরের প্রাসাদ ছাড়াও শহরের সাংস্কৃতিক এবং শৈল্পিক ছোঁয়া আগ্রহী দর্শনার্থীদের টানতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস৷''

ফুলে ভরা কোবলেন্স শহর

আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন অনেকেই৷ গোটা কোবলেন্সকে সবুজ করে তুলে ধরতে তারা করেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম৷ ক্রিশ্চিয়ানে গান্ডনার জানান,‘‘কোবলেন্স শহর আমি অনেক আগে থেকেই চিনি৷ কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে শহরটির৷ নদীর ধারগুলো বাঁধানো হয়েছে আগে যা ছিল না৷ কোবলেন্স এর থেকে কোন ধরণের সুবিধা পাবে কিনা তা বলা মুস্কিল৷''

পরিবর্তন হচ্ছে কোবলেন্সের – এই হল এবছরের জার্মান উদ্যান মেলার স্লোগান, আনন্দের সঙ্গে জানান উদ্যোক্তা ক্রিশ্চিয়ানে গান্ডনার৷ মেলা চলবে ১৬ই অক্টোবর পর্যন্ত৷ আশা করা হচ্ছে প্রায় কুড়ি লক্ষ মানুষ আসবে এই মেলায়৷ উদ্যান মেলার টানে পর্যটকরা আসবে সারা ইউরোপ থেকে৷ বিভিন্ন ধরণের ফুল সবার মন কাড়ছে৷ রঙে-রঙে ভরে গেছে চারদিক৷ টিউলিপের মরশুম এখন৷ তাই এই ফুলের প্রতি দৃষ্টি সবার৷ এই এই টিউলিপই অন্তত আটটি বিভিন্ন রঙে দেখা যায়৷

বেশ কিছু সংস্থা এই মেলায় অংশগ্রহণ করেছে৷ অনেকেই আসছেন তাদের প্রিয় কুকুর সঙ্গে নিয়ে৷ আর আকাশে উড়ছে বাজপাখি আর কাক৷ এরা যেন গাছ নষ্ট না করে তা জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ গার্ড৷ ভাল্টার সেল বললেন,‘‘ এটা হচ্ছে এক বিশেষ ধরণের বাজপাখি৷ এই পাখির প্রজাতি উত্তর অ্যামেরিকায় দেখা যায় সবচেয়ে বেশি৷ আশেপাশে কোন মানুষ দাঁড়িয়ে থাকলেই এই পাখিগুলো আর মাটিতে নামে না৷ আর কাকের দল বুঝে গেছে এখানে তাদের জন্য কিছু নেই৷''

কোবলেন্সের প্রাসাদ এবং বাগান মূল আকর্ষণ

এবারের এই মেলা সফলভাবে আয়োজন করতে নিয়োগ করা হয়েছিল শিল্পী এবং বেশ কিছু প্রত্নতত্ত্ববিদ৷ কোবলেন্সের প্রাসাদ এবং সেখানকার বাগানকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই গার্ডেন শোতে৷

কোবলেন্স এমনিতেই নিসর্গ ঘেরা এক শহর৷ আছে নদী, পাহাড়, পাহাড়ের উপর ঐতিহাসিক দুর্গ আর প্রাসাদ৷ প্রাসাদ উদ্যান পেরোলেই রাইন-বিহারের সবুজ এলাকা৷ সুদৃশ্য গির্জা, শিল্পকলা মিউজিয়াম, বিভিন্ন ভাস্কর্য পেরিয়ে গেলেই পৌঁছে যাবেন আপনি যে জায়গাটায় তার নাম জার্মান ট্রায়াঙ্গেল৷ এখানেই মোজেল নদী এসে মিশেছে রাইনে৷ নদীবর্তী এই স্থানই হল জার্মান উদ্যান মেলার মূল আকর্ষণ৷ আরেক আকর্ষণ হল কোবলেন্স প্রাসাদ এবং ঘোড়ার পিঠে তলোয়ার হাতে তৎকালীন শাসনকর্তা আউগুস্টুসের মুর্তি৷

প্রতি বছর নদীর পানি উঠে আসে বাগান পর্যন্ত৷ সেখানে থেকে অনেক কষ্ট করে গাছগুলো বাঁচানো হয়েছে৷ ক্রিশ্চিয়ানে গান্ডনার আর জানালেন,‘‘প্রথম প্রথম বন্যার পানি উঠে আসতো বাগান পর্যন্ত৷ তখন দামি গাছগুলো সরিয়ে অনেক উঁচুতে তুলতে হয়েছিল৷ এছাড়া প্রায় সবগুলো গাছই আমরা সরিয়ে নিয়েছি যাতে করে এই মেলাটি নিখুঁতভাবে করা যায়৷ এ বছরের জানুয়ারি মাসেও হঠাৎ করেই পানি বেড়ে গিয়েছিল৷ আশা করছি মেলা চলা অবস্থায় এমন কিছু আর ঘটবে না৷''

জার্মানিতে এখন বসন্ত৷ গাছে গাছে এসেছে নতুন পাতা, নতুন কুড়ি৷ কোবলেন্সের এই মেলায় আসন করে নিয়েছে রঙ-বেরঙের কয়েক হাজার ফুলের গাছ৷ দূরে নীল আকাশ৷ দেখে মনে হবে যেন নীল আকাশ নেমে এসেছে মাটির পৃথিবীতে, ফুলের কাছে, রঙের কাছে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক