বিপজ্জনক মাদক
২৮ জুলাই ২০১৪ইদানীং মাদক গবেষকদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মেথ৷ দীর্ঘদিন ধরে এই মাদক সেবন করলে প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়৷ নার্ভ সেল বা স্নায়ুকোষ ধ্বংস হয়৷ ক্ষতি হয় মস্তিষ্কের৷ আক্রমণাত্মক ও সহিংস করে তোলে মানুষকে৷
এই মাদকের ক্লিস্টাল পাউডার নাক দিয়ে টানা হয়, মুখে খাওয়া হয়, সিগারেটের মতো ধূমপান করা হয় কিংবা সিরিঞ্জ দিয়ে শিরায় ঢোকানো হয়৷
সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিস্তৃতি লক্ষ্য করা যায়
জার্মানির কোনো কোনো অঞ্চলে বিশেষ করে চেক সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে ‘ক্রিস্টাল মেথ' মাদক সেবনের হার খুব বেশি৷ চেক প্রজাতন্ত্রে এক ধরনের ‘ল্যাবরেটরিতে' সস্তায় তৈরি করা হয় এই ফ্যাশন মাদক৷ এরপর অল্প অর্থের বিনিময়ে জার্মানিতে পাঠানো হয় এটি৷
বিশেষ করে স্যাক্সনি, স্যাক্সনি-আনহাল্ট, ট্যুরিঙেন ও বাভারিয়ায় এই মাদকের প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যায়৷ এক পরিসংখ্যানে জানা গিয়েছে, স্যাক্সনির আসক্তি-পরামর্শ কেন্দ্রে আসা মানুষের হার এক বছরের মধ্য চার শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এ কথা জানান মাদক গবেষক হাইনো শ্ট্যোভার৷
ক্রিস্টাল মেথের সাইকোঅ্যাকটিভ প্রভাব সাংঘাতিক৷ এই মাদক সেবনে শরীরে উত্তেজনা বেড়ে যায়৷ মানুষকে জাগিয়ে রাখে৷ দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়৷ আবার এই মাদক ছেড়ে দিলে উল্টো ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়৷ আসক্তরা এটি ছাড়া ঘুমাতে পারেন না, যদিও ক্লান্তি তাদের ঘিরে থাকে৷ কোনো কাজে মনোযোগ দিতে সমস্যা হয় তাঁদের৷
স্বাস্থ্যের ভীষণ ক্ষতি হয়
দীর্ঘদিন ক্লিস্টাল মেথ সেবন করলে স্বাস্থ্যের ভীষণ ক্ষতি হয়৷ অনেকের দাঁত পড়ে যায়৷ ওজন অত্যন্ত কমে যায়৷ অল্প সময়ের মধ্যে বার্ধক্য ভর করে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই বিপর্যয় ঘটে যায়৷ এই সব ক্ষতি আর পূরণ করা যায় না – বলেন মাদক গবেষক শ্ট্যোভার৷
মাদক জগতে ক্রিস্টাল মেথ অনেক দিন ধরেই পরিচিত৷ আগে এটির বাণিজ্যিক নাম ছিল ‘পারভিটিন'৷ অত্যধিক ক্লান্তিতে জাগিয়ে রাখার জন্য ব্যবহৃত হতো এই মাদক৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এর বিস্তৃতি লক্ষ্য করা যায়৷ রাতে দায়িত্বপালনরত ট্যাংক কম্যান্ডার ও পাইলটরা এই মাদক সেবন করতেন৷ আজও এইসব কারণে ক্রিস্টাল মেথের দিকে হাত বাড়ান অনেকে৷ ‘‘যেমন শিক্ষার্থীরা কিংবা চাপের কাজ করেন যারা৷ এছাড়া সাময়িকভাবে একটানা দীর্ঘ সময়ের কাজ করতে হলে এই মাদকের সাহায্য নেন অনেকে৷'' জানান শ্ট্যোভার৷
জার্মানিতে ক্রিস্টাল মেথ মূলত পার্টি মাদক হিসাবে ব্যবহার করা হয়৷ যেমন টেকনো পার্টিতে৷ এই মাদক নিলে তরুণরা তরুণীরা দীর্ঘ সময়ের জন্য সতেজ থাকে৷ নাচের উন্মাদনা বজায় থাকে৷
বিকল্প মাদক রিপোর্ট
'গত ২রা জুলাই জার্মানিতে প্রথমবারের মতো বিকল্প মাদক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়৷ ৫০ জনের মতো বিশেষজ্ঞ মাদক প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের বিকল্প কলাকৌশলের উল্লেখ করেছেন৷ অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি কার্যকর মাদক প্রতিরোধ নীতি গড়ে তোলাই হলো এই প্রতিবেদনের লক্ষ্য৷ জার্মান এইডস সাহায্য সংস্থা, প্রাক্তন আসক্তদের ফেডারেশন – ‘সেল্ফহেল্প নেটওয়ার্ক'-সহ বেশ কয়েকটি সংস্থা এই প্রতিবেদনের কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে৷
জার্মান সরকারের আসক্তি ও মাদক রিপোর্টের বিকল্প প্রতিবেদন এটি৷ ‘‘আমরা তাদের মতো একই বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছি৷ প্রশ্ন উত্থাপন করেছি৷ কিন্তু উত্তরগুলি ছিল ভিন্নরকম৷ '' বলেন মাদক গবেষক শ্ট্যোভার৷
তিনি মনে করেন, মাদক প্রতিরোধ ও আসক্তদের পরামর্শের ব্যাপারে আরো অনেক কিছু করার রয়েছে৷ বিশেষ করে ক্রিস্টাল মেথের ক্ষেত্রে৷
সমবয়সিদের পরামর্শ কাজে লাগে
মাদক প্রতিরোধে আরো বেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়া, নতুন ধরনের কলাকৌশল ও পদ্ধতির দাবি জানান শ্ট্যোভার৷ যারা আগে ক্রিস্টাল মেথ সেবন করতেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর প্রস্তাব দেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘সাধারণত পরামর্শ কেন্দ্রের কর্মীরা আসক্তদের চেয়ে বেশি বয়সের হয়ে থাকেন৷ তাই তাঁদের তেমন নির্ভরযোগ্য মনে করতে পারেন না ভুক্তভোগীরা৷ সে ক্ষেত্রে ক্রিস্টাল মেথ সেবনে যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেইসব সমবয়সিদের পরামর্শ অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর হতে পারে৷''