1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গরম বেলুনে শীতল কৃষ্ণসাগর পাড়ি দেবেন স্ক্যাল্কো-রেভেজ

৯ সেপ্টেম্বর ২০১০

তারুণ্যের স্বভাবই এই৷ অসম্ভবকে সম্ভব করতে চাওয়া৷ সম্প্রতি এমনই এক অসম্ভবকে সম্ভব করতে চাইছেন দুই তরুণ৷ বেলুনে চড়ে পয়লাবারের মতো কৃষ্ণসাগর পার হতে চাইছেন এক ইউক্রেনিয় আর এক জর্জিয়ান৷

https://p.dw.com/p/P82L
Balloon, Ballonist, Ukraine, Sea, Crimia, Black sea, কৃষ্ণসাগর, ইউক্রেইন, বেলুন, বেলুনিস্ট, উড়াল, সমুদ্র
ছবি: presse

ইউক্রেনিয় তরুণটির নাম স্ক্যাল্কো আর রেভেজ হচ্ছেন জর্জিয়ান৷ এই দুই তরুণের লক্ষ্য, ইউক্রেনের ক্রিমিয়া পেনিনস্যুলা থেকে গরম বাতাসে ফোলানো এক বেলুনে চড়ে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার সুকঠিন পথে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া৷ তাঁরা ক্রিমিয়ার পেনিনস্যুলা থেকে উড়াল দিয়ে পৌঁছতে চান  জর্জিয়ার বাটুমি অঞ্চলে৷  সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই দুজন নির্ঘাত ২০১১ সালের জানুয়ারিতে বেলুনে চড়ে উড়াল দিতে চলেছেন৷

ইউক্রেনিয় স্ক্যাল্কো জানিয়েছেন, ‘এক হিসেবে এটি তেমন কোন দূরত্ব নয়, কিন্তু বরফ ঢাকা সমুদ্র আর কৃষ্ণসাগরের তীব্র বাতাসের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের৷'  আসল লড়াইটা তাই সেই প্রকৃতিরই বিরুদ্ধে৷

বেলুনে চড়ে এমন অভিযান কিন্তু বেশ খরচের ব্যাপারই বটে৷ সাবেক সোভিয়েতের মানুষ-জনের আয়-রোজগারের হিসেব কষলে এটি শখ হিসেব অতিশয় উচ্চমূল্যের৷ সরঞ্জাম সহ একটি পুরোদস্তুর তৈরি বেলুনে চড়ার খরচ ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ডলার৷ যা একার্থে সাবেক সোভিয়েতের একজন মানুষের প্রায় ১০ বছরের রোজগার৷ আর এই কৃষ্ণসাগর পার হতে যে বেলুন খরচা লাগবে টাকার অংকে সেটি হচ্ছে- ৩ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার!

6 jähriges Kind fliegt in HOT AIR BALOON
ছবি: AP

স্বাভাবিক ভাবে ধরেই নেওয়া যায় যে, এত খরচ-খরচা করে যে অভিযানটি পরিচালিত হচ্ছে তা নেহাৎ শৌখিন মানুষের শখ নয়৷ ‘ঠিক তাই, আকাশে ওড়ার  ক্ষেত্রে পেশাদারি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষরাই এই উড়ালে অংশ নিয়ে থাকেন, বিশেষ করে আমাদের দেশের মানুষ-জনের ক্ষেত্রে এটিই বাস্তবতা৷' আলেক্সান্দর নভিকভ নামে ইউক্রেনের পেশাদার এক বৈমানিক এমনটিই জানিয়েছেন৷

স্ক্যাল্কো আর রেভেজ যে বেলুনটি  চড়ে কৃষ্ণসাগর পাড়ি দেবেন তা ইতোমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে৷ এর কাপড়ের খোল বা গ্যাস ভরানোর আবরণটি কাটা থেকে শুরু করে সেলাই এবং জোড়া দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করেছে চেক রিপাবলিকের এক নামডাকঅলা বেলুন কোম্পানি৷ নির্মাতা হিসেবে এর সারা ইউরোপ জুড়েই নাম-ডাক আছে৷

এই বেলুনে খাবার, গ্যাস, অর্থাৎ রসদ-পত্র সহ প্রায় ৫ টনি ভারী জিনিষপত্র তোলা হবে৷ এর মাল-পত্রের মধ্যে আরো রয়েছে স্ক্যাল্কো আর রেভেজ- এর ওজনও!  রয়েছেন দুজন বৈমানিক৷ অবতরণে সহায়তা করবেন এমন দুজন কর্মীও থাকবেন এই ৫ টনের হিসেবের মধ্যে৷

৫ টি দেশের ওপর দিয়ে উড়ে যাবে এই কৃষ্ণসাগর পার হতে চাওয়া বেলুনযান৷ যদিও এর বৈমানিকরা একটি সুনির্ধারিত পথেই এগোতে চাইবেন, কিন্তু পথের নানারকমের বাধা, নানান প্রতিকূলতা রয়েছে যার মুখোমুখি হতে পারেন এর অভিযাত্রীরা৷

সমুদ্রের বাতাস যদি বেলুনটিকে এর যাত্রাপথের খুব বেশি দক্ষিণে ঠেলে দেয়, সেক্ষেত্রে তারা পৌঁছবেন তুরস্কের হিমশীতল বরফাচ্ছাদিত পন্টিক পাহাড়ে৷ এর মানে হচ্ছে- বাধ্য হয়েই তখন তাঁদের সেই প্রবল ঠাণ্ডা বরফঢাকা পাহাড়ে নেমে পড়তে হবে৷ অথবা তাঁরা যদি কৃষ্ণসাগরেও নামতে বাধ্য হন,  সেক্ষেত্রেও সেই ভয়াবহ শৈত্যে খুব বেশি সময় তাঁরা বাঁচতে পারবেন না৷

এদিকে এই বেলুনটি যে খুব আধুনিক প্রযুক্তির ঠিক তাও নয়৷ অনেক উঁচু দিয়ে এটি উড়তে পারে না৷ সেকারণে স্ক্যাল্কো আর রেভেজ উচ্চতার যাবতীয় সুবিধাটুকু নিতে পারবেন না৷ আবার কৃষ্ণসাগরের বাতাসের স্বভাব হচ্ছে উপকূল ধরে ঘড়ির কাঁটার মতো ঘুরতে ঘুরতে এগোনো৷ স্ক্যাল্কোদের যা প্রয়োজন, সেই উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বদিকে যাওয়ার সহযোগী সরাসরি বাতাস তাঁরা সেক্ষেত্রে পাচ্ছেন না৷

যাইহোক, ‘বিপদে ডরে না বীর' আউড়ে এই কৃষ্ণসাগর অভিযানের অভিযাত্রীরা রীতিমতো বদ্ধপরিকর যে তাঁরা এই অভিযানে সফলই হবেন৷ দলের আবহাওয়াবিদ যিনি রয়েছেন, তাঁর ভাষ্য হচ্ছে- ‘আমরা ১০ বছরের আবহাওয়ার তথ্য ঘেঁটেই এই অভিযানের পথ ঠিক করেছি৷ শীতকালটাকে বেছে নিয়েছি একারণেই যে তখন কৃষ্ণসাগরের এতোলবেতোল বাতাসকে রুখে দেবে সাইবেরিয়ান বায়ূস্রোত৷ মোটামুটি ৮০ ভাগ নিশ্চিৎ যে আমরা সফল হচ্ছিই৷

আর এই স্পষ্ট জবাবের  অর্থ হল-

‘আমরা যাচ্ছি৷'

প্রতিবেদনঃ হুমায়ূন রেজা

সম্পাদনাঃ সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়