1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গ্রিসের আর্থিক সঙ্কট থেকে শিক্ষা

৫ মে ২০১০

বেশ কিছু সময় ধরেই সংবাদ শিরোনামে রয়েছে গ্রিস৷ অবশ্য কারণটা নেতিবাচক৷ সেদেশের চরম আর্থিক সঙ্কট ইউরোপ তথা গোটা বিশ্বের আর্থিক বাজারের স্থিতিশীলতা বিপন্ন করছে৷

https://p.dw.com/p/NEg0
গ্রিসের সঙ্কট ইউরো এলাকার স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেছবি: AP

প্রেক্ষাপট

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র গ্রিসে প্রায় প্রতিদিনই এমন, ধর্মঘট, বিক্ষোভ, হরতাল দেখা যাচ্ছে৷ রাষ্ট্রের চরম আর্থিক সঙ্কট ও সেই সঙ্কট সামাল দিতে একের পর এক অপ্রিয় পদক্ষেপই এই চরম ক্ষোভের অন্যতম কারণ৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, এই সঙ্কটের দায় কার? কেন আদৌ এমন এক সঙ্কটের সৃষ্টি হল?

Griechenland Proteste Montag 3. Mai 2010
বেতন কমে যাওয়ায় নৌ-সেনারাও প্রতিবাদে পথে নেমেছেনছবি: AP

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলির মধ্যে একদিকে যেমন সাধারণ কিছু মিল রয়েছে, অন্যদিকে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও চরিত্রগত কারণে অমিলেরও অভাব নেই৷ গ্রিসের কথাই ধরা যাক৷ বহুকাল ধরেই সেখানে নানারকম আর্থিক অনিয়ম চালু ছিল৷ কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা, সরকারি দপ্তরে ঘুষ দেওয়া-নেওয়ার ঘটনা, হিসেবে গরমিল, নথিপত্রে কারচুপি, ঘরের গোলমাল ঘরেই রেখে দেওয়ার চেষ্টা – এমন অনেক ঘটনার পরিণতি কী হতে পারে, আজ তা স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ গ্রিসে যদি অভিন্ন মুদ্রা ‘ইউরো' চালু না থাকতো, সেক্ষেত্রে সেদেশের সমস্যা প্রাথমিকভাবে অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবেই বিবেচিত হত – অন্য যে কোন সঙ্কটগ্রস্ত দেশের মত গ্রিসকেও আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য হাত পাততে হত৷ কিন্তু ইউরো এলাকার সদস্য হিসেবে গ্রিসের সুখ-দুঃখের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাকি দেশগুলিও৷ ফলে গ্রিসের সঙ্কট গোটা ইউরো এলাকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা বিশ্বের সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তাই গ্রিসের নেতৃত্ব বা মানুষদের যতই দোষারোপ করা হোক না কেন, সেদেশকে এই সঙ্কট থেকে উদ্ধার করা ছাড়া আপাতত অন্য কোন পথ খোলা নেই৷

NO FLASH Griechenland Protest Finanzministerium
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাইরে পুলিশ ও জনতার সংঘর্ষছবি: AP

সমাধানসূত্র

কিন্তু এই সঙ্কট কাটানোর পথও মোটেই সহজ নয়৷ একদিকে গ্রিসের সরকার কার্যত দেশের সার্বভৌমত্ব হারিয়ে বসে রয়েছে৷ অতীতে শাস্তি এড়াতে সেদেশ যেভাবে নিজস্ব বাজেট ঘাটতি সম্পর্কে ভুল তথ্য-পরিসংখ্যান পেশ করে এসেছে, তার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছে৷ রাষ্ট্রীয় ব্যয় কমিয়ে অর্থনীতির কাঠামোর আমূল পরিবর্তন করতে সরকারকে অত্যন্ত অপ্রিয় সংস্কার নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে৷ বাধ্য হয়ে গ্রিসের সরকার সরকারি কর্মীদের বেতন কমানো থেকে শুরু করে সরকারি ব্যয় কমাতে একের পর এক কঠিন পদক্ষেপ নিচ্ছে৷

বাইরে থেকে সাহায্য

অন্যদিকে বিধিনিয়মের বেড়াজাল ভুলে গ্রিসের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হচ্ছে ইউরো এলাকার দেশগুলিকে৷ বলাই বাহুল্য, অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ হিসেবে জার্মানিকে এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে৷ গোটা ইউরো এলাকার স্বার্থে গ্রিসের দু্র্দিনে এই সহায়তা যে করতেই হবে, সেবিষয়ে মোটামুটি ঐক্যমত তৈরি হয়ে গেলেও কে এই অর্থের যোগান দেবে, তা নিয়ে বিতর্ক এখনো কাটছে না৷ বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সঙ্কটের জের ধরে বেসরকারি ব্যাঙ্কের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হয়েছিল শিল্পোন্নত দেশের সরকারগুলিকে৷ সেই স্মৃতি এখনো মানুষের মনে তাজা রয়েছে৷ যে ম্যানেজারদের ভুলত্রুটি এই সঙ্কটের অন্যতম প্রধান কারণ, তাদের অনেকেই মোটা অঙ্কের বোনাস পেয়ে মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছে৷ অন্যদিকে ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে বাঁচাতে সরকারি কোষাগার উজাড় করে করদাতাদের অর্থ ঢালতে হয়েছে৷ এখন গ্রিসের সঙ্কট মেটাতেও আবার সেই করদাতাদের দেওয়া অর্থই কাজে লাগাতে হবে৷ তবে আশার কথা, মঙ্গলবার জার্মানির বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি গ্রিসের জন্য আর্থিক সাহায্য দিতে এগিয়ে এসেছে৷ ডয়চে বাঙ্ক-এর প্রধান ইয়োজেফ আকারমান এবিষয়ে বলেন, ‘‘বাড়িতে আগুন লেগেছে, তাই আগুন নেভানোই এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ৷ গ্রিস কবে কী ভুল করেছে, তা নিয়ে আলোচনা ও বিতর্কের জন্য হাতে বেশি সময় নেই বলে আমি মনে করি৷ একটি বাড়িতে আগুন ধরে গেলে এবং সেই আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিলে এটাই সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ৷ এখন সেটাই করা হচ্ছে এবং আমরা সবাই স্বেচ্ছায় সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছি৷''

Deutschland Wirtschaft Deutsche Bank Josef Ackermann zu Finanzkrise Griechenland
ডয়চে বাঙ্ক-এর প্রধান ইয়োজেফ আকারমানছবি: AP

ভবিষ্যতের শিক্ষা

মানুষের মনে এখন একটাই প্রশ্ন জাগছে৷ গ্রিসের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এমন আর্থিক সঙ্কট কীভাবে এড়ানো সম্ভব? জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল ইউরো এলাকার দেশগুলির জন্য আরও কড়া নিয়ম চালু করতে চান৷ তাঁর মতে, নিয়ম ভাঙলে ইউরো এলাকার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এমনকি কোনো দেশের ভোটাধিকারও সাময়িকভাবে কেড়ে নেওয়া যেতে পারে৷ রাষ্ট্র যাতে দেউলিয়া না হয়ে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করতেও কড়া নিয়ম চালু করার প্রস্তাবের কথা শোনা যাচ্ছে৷ তাছাড়া গোটা ইউরো এলাকার কাঠামো, নতুন সদস্য গ্রহণের প্রক্রিয়া, যোগদানের পূর্বশর্ত ইত্যাদি বিষয়ের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের দাবি উঠছে৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক