1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চলে গেলেন ধ্রুপদী রুশ ব্যালেরিনা সেমিওনোভা

১০ জুন ২০১০

মারিনা সেমিওনোভা৷ প্রবাদপ্রতিম এই রুশ ব্যালেরিনার পায়ের জাদুকরী ছন্দ থেমে গেল মৃত্যুতে৷ মস্কোর বলশয় থিয়েটার জানাচ্ছে, মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০২৷

https://p.dw.com/p/NmbA
ব্যালেই ছিল সেমিওনোভা’র জীবনছবি: ullstein bild - Zander & Labisch

সেই প্রথম যুগের কথা৷ গত শতাব্দের গোড়ায়, ১৯০৮ সালে তাঁর জন্ম হয়েছিল সেন্ট পিটার্সবার্গে৷ ব্যালেই ছিল জীবন৷ শিখেছিলেন আগ্রিপানা ভাগানোভার কাছে৷ মাত্র বারো বছর বয়সে ১৯২০ সালে প্রথম মঞ্চে আত্মপ্রকাশ৷ পিটার্সবার্গের মার্লিনস্কি থিয়েটারে৷ অনন্যসাধারণ প্রতিভা ছিল বলে প্রথম থেকেই মারিনা সেমিওনোভা ধ্রুপদী ব্যালের প্রধান চরিত্রগুলিতে অভিনয় এবং নাচ শুরু করেন৷ তারপর ব্যালের মক্বা বলে কথিত মস্কোর বলশয় থিয়েটারে চলে আসতে সময় লাগেনি বেশিদিন৷ মাত্র বাইশ বছর বয়সে ১৯৩০ সালে সে আমলের সোভিয়েত একনায়ক স্ট্যালিনের বিশেষ ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে মারিনা সেমিওনোভা চলে আসেন বলশয় থিয়েটারে৷ তারপর থেকে তাঁর অসামান্য শিল্প, তাঁর ছন্দোময় শরীরের বিভঙ্গ এবং দুর্দান্ত অভিনয় প্রতিভা মুগ্ধ করেছে দর্শককে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত৷

Staatsballett Berlin
আধুনিক ব্যালে শিল্পীদের অনেকেই সেমিওনোভার কাছে শিখেছেন এই শিল্প৷ছবি: Enrico Nawrath

এখানেই শেষ নয়, মারিনার ব্যালের কথা ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বেই৷ প্যারিসের বিশ্বখ্যাত অপেরার সে আমলের প্রধান, সের্গেই লিফার রাজনৈতিক সমস্যা অস্বীকার করে মারিনাকে ডাক পাঠান তিনের দশকে৷ গোটা সোভিয়েত রাশিয়া যখন লৌহ যবনিকার অন্তরালে, সেই ১৯৩৫ থেকে ৩৬ টানা একটি বছর প্যারিস অপেরার প্রধান ব্যালে শিল্পী ছিলেন এই মারিনা সেমিওনোভা৷ সে সময় বহির্বিশ্ব দেখার সুযোগ পেয়েছে তাঁর জাদুকরী ব্যালের স্বর্গীয় দৃশ্য৷

সেমিওনোভা তাঁর দীর্ঘ জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত ব্যালের উন্নতিতে কাজে লাগিয়ে গেছেন৷ এই প্রবাদপ্রতিম শিল্পীর মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন বলশয় থিয়েটারের পরিচালক আনাতোলি ইসকানভ সেকথাই বলেছেন তাঁর শোকবার্তায়৷ বলেছেন, সবচেয়ে অভিজ্ঞ, সবচেয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষিকার ভূমিকা পালন করতেন সেমিওনোভা৷ রুশ ব্যালের এই মুহূর্তের সর্বশেষ নামকরা শিল্পী গালিনা স্টেপানেনকোও তাঁরই শিষ্য৷ সেমিওনোভার কাছে বিশেষ ধ্রুপদী এবং স্বর্গীয় ব্যালে শিখে পরবর্তীতে মঞ্চ মাতিয়েছেন এমন শিল্পী রয়েছেন আরও অনেকেই৷

তবে রুশ ব্যালেকে গোটা বিশ্বের সামনে সঠিক শিল্প হিসেবে তুলে ধরতে সেমিওনোভার ভূমিকা অতুলনীয়৷ একথাও অনস্বীকার্য যে, শিল্প যে কোন দেশের সীমানা মানে না , মানে না কোন রাজনীতির বেড়াজাল, তা প্রমাণ করে গিয়েছেন এই অসামান্য শিল্পী৷ সংবাদসংস্থা ইতার তাসকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে সেকথাই বলেছেন ব্যালে জগতের আর এক প্রবাদপ্রতিম শিল্পী এবং শিক্ষক মিখাইল লাভরভস্কি৷

শিল্পীর মৃত্যু হতে পারে কিন্তু শিল্প কোনদিন মরে না৷ ১০২ বছর বয়সে ব্যালেরিনা মারিনা সেমিওনোভার স্বাভাবিক মৃত্যুর পরও তাই রসিকজনের স্মৃতিতে বেঁচে থাকবে ‘স্লিপিং বিউটি'তে মারিনা অভিনীত রাজকুমারী ফ্লোরিনার ভূমিকা, ‘সোয়ান লেক'-এর ওডেটে, গিসেলে কিংবা এসমারেল্ডার যেন বাতাসে ভেসে যাওয়ার সুমধুর, সুরেলা আর সুগন্ধী সব বিখ্যাত ভঙ্গী৷

শিল্প এখানেই, এভাবেই তাই চিরজীবি৷

প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদনা : জাহিদুল হক