1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চাঁদে রয়েছে কয়েক’শ মিলিয়ন ম্যাট্রিক টন বরফ পানি

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১০

চাঁদে পানির অস্তিত্ব অনেক আগেই ধরা পড়েছে৷ কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, আগে যা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি পানি রয়েছে চাঁদে৷

https://p.dw.com/p/PNPL
চাঁদে পাওয়া পানির ছবিছবি: NASA

মানুষ যখন প্রথম চাঁদে পা রেখেছিল এবং চাঁদ থেকে পাথরের টুকরো নিয়ে এসেছিল পৃথিবীতে, তখন থেকেই বিজ্ঞানীদের ধারণা হয়েছিল যে চাঁদ ভীষণ শুকনো৷ কিন্তু গভীর পর্যবেক্ষণ এবং তিনটি পৃথক মহাকাশযানের পাওয়া বিভিন্ন তথ্য থেকে চাঁদে পানির অস্তিত্বের দ্ব্যর্থহীন প্রমাণ পাওয়া গেছে৷

চাঁদে পানির অস্তিত্ব সম্পর্কে আগে জানা থাকলেও, পানির পরিমাণ সম্পর্কে কিন্তু কারো ধারণা ছিল না৷ কিন্তু এবার, চাঁদে যে পরিমাণ পানির অস্তিত্ব ধরা পড়েছে, তা বিজ্ঞানীদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে৷ চাঁদ কী তবে নভোচারীদের জন্য একটু বেশি ভিজে ? বিজ্ঞানীরা এখন অনেকটা সেইরকমই ভাবছেন৷

চলতি বছরের মার্চ মাসে ‘নাসা' চাঁদে পানির পরিমাণ সম্পর্কে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করে৷ তাতে বলা হয়, নর্থ লুনার পোলে ৬০০ মিলিয়ন ম্যাট্রিক টন বরফ-পানি রয়েছে৷ বলা হচ্ছে, ৬০০ মিলিয়ন ম্যাট্রিক টন - অর্থাৎ যাকে ইউএস গ্যালনে পরিবর্তন করলে দাঁড়ায় ১৫৮ মিলিয়ন মার্কিন গ্যালন৷ এই পরিমাণ পানি নাকি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের অধিবাসীদের তিন বছরের পানির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম৷ ভাবুন তো একবার, চাঁদ থেকে পানি নিয়ে এসে পৃথিবীর চাহিদা পূরণ করার ব্যাপারটা৷ মজার ব্যাপার তাই না ? একই সঙ্গে ধারণা করা হচ্ছে, চাঁদের সাউথ পোলে বরফ-পানি জমে থাকার ফলেই সেখানে কখনও সূর্যের আলো পৌঁছায় না৷ আর দূর থেকে সেগুলোকে কৃষ্ণ গহ্বর বল মনে হয়৷ তবে শুধু বরফ জমা পানিই নয়, চাঁদের সাম্প্রতিক মিশনগুলো বলছে, চাঁদের ধূসর ধুলোর নীচে জমাট বাধা বরফও রয়েছে৷

Bild der NASA und ISRO Eisvorkommen am Nordpol vom Mond
নাসার ক্যমেরায় তোলা নর্থ লুনার পোলের ছবিছবি: UNI

চাঁদে সবসময়ই পানি ছিল

ভারতীয় নভোযান চন্দ্রযান-১-এ বহন করা সরঞ্জামাদির মাধ্যমেই প্রথম জানা যায়, চাঁদে এতো বেশি পানি থাকার কথা৷ মজার ব্যপার হচ্ছে ৪০ বছর আগে অ্যাপোলোর নভোচারীরা চাঁদের যে পাথর সংগ্রহ করেছিলেন, নতুন করে সেই নমুনার ওপরে সমীক্ষা চালনো হয়েছে সম্প্রতি৷ তাতেও দেখা গেছে, চাঁদের অভ্যন্তরে যে পরিমাণ পানি থাকার কথা ভাবা হতো, তার চেয়ে শতগুন বেশি পানি রয়েছে চাঁদে৷ এখন অবশ্য বিজ্ঞানীরা একটা ব্যাপারে নিশ্চিত যে, চাঁদ সৃষ্টির প্রথম থেকেই তার ভেতরে পানি ছিল৷ অর্থাৎ এটা আসলে চাঁদেরই পানি৷

কিন্তু চাঁদে যে এতো পানি রয়েছে, বিজ্ঞানীরা তা আগে বুঝতে পারলেন না কেন ? বিজ্ঞানীর বলছেন, প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে চাঁদের গঠনের শুরুতেই তপ্ত ম্যাগমা থেকে পানি আসে চাঁদের ভেতরে৷ তাঁরা এখন মনে করছেন, আগের সমীক্ষাগুলো থেকে যা মনে করা হয়েছিল, তার চেয়ে চাঁদের ভেতরের পাথর এবং অন্যান্য কিছুর বিস্তৃতি আরো অনেক বেশি গভিরে রয়ে গেছে৷ আর এই সব কিছু দেখে শুনেই বিজ্ঞানীরা বলছেন, ধারণার চেয়ে শতগুন বেশি পানি রয়েছে চাঁদে৷

Mond bei Tag
এই চাঁদ কী এবার আমাদের পোনির যোগান দেবে ?ছবি: AP

সমীক্ষার নেতৃত্বদানকারী ফ্রান্সিস ম্যাক কিউবিন ‘স্পেস ডট কম'-কে বলেছেন, অ্যাপোলো মিশন থেকে প্রথম যখন চাঁদের পাথরগুলো পৃথিবীতে নিয়ে আসা হয়, তখন এগুলো সত্যিই ভীষণ রকম শুকনো ছিল৷ আর এই কারণেই মানুষের ধারণা হয়েছিল - চাঁদ যেভাবে গঠিত হয়েছে, তার ফলে প্রকৃত অর্থেই চাঁদ ছিল শুকনো৷

২০০৮ সালে ‘ভলকানিক গ্লাস বিডস' থেকেই গবেষকদের প্রথম ধারণা হয় যে, আগে যা ভাবা হতো তার চেয়ে চাঁদে অনেক বেশি পানি আছে৷ আর সেই সময় থেকেই ফ্রান্সিস ম্যাক কিউবিন এবং তাঁর সহকর্মীরা চাঁদে পানির সন্ধান করতে থাকেন৷ কিন্তু তখন তা শুধু বিভিন্ন মডেল এবং হিসেব নিকেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল৷ আর তখন থেকেই বিভিন্ন মিশনের পর্যবেক্ষকরা এবং নাসাসহ মহাকাশ সংস্থাগুলো চাঁদের বিভিন্ন জায়গায় যথেষ্ট পানির উপস্থিতির কথা নিশ্চিত করে৷ একই সঙ্গে চাঁদের বহির্ভাগে বরফ-পানি থাকার কথাও জানায় তারা৷

সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত নতুন সমীক্ষাগুলো বলছে, চাঁদে অনেক বেশি পানি থাকার কথা জানা যাওয়ার বিষয়টি ভবিষ্যৎ চন্দ্র অভিযানের জন্য হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷

প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ