1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গণজাগরণ মঞ্চ

জাহিদুল কবির১৬ এপ্রিল ২০১৪

মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার জন্য যে সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজন ছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪২ বছর পর গণজাগরণ মঞ্চ সে কাজ শুরু করতে পেরেছে বলে মনে করেন ইমরান এইচ সরকার৷

https://p.dw.com/p/1Bii3
Screenshot der Internetseite www.gonojagoronmoncho.com
ছবি: gonojagoronmoncho.com

ইমরান এইচ সরকারের ভাষায়, গণজাগরণ মঞ্চ নির্দলীয় একটি রাজনৈতিক আন্দোলন৷ একইসঙ্গে এটি সমাজ বিনির্মাণের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনও বটে৷

ডয়চে ভেলের ‘দ্য বব্স – বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড'-এ এবার সেরা সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম বিভাগে লড়ছে গণজাগরণ মঞ্চ, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে যাদের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল৷

এ বিভাগে লড়াইয়ে আছে ইউক্রেনের ফেইসবুক কমিউনিটি ‘ময়দানার্স' বা ‘ইউরো-ময়দান'৷ ইউক্রেনের সাম্প্রতিক গণ অভ্যুত্থানকে যাঁরা যাঁরা সমর্থন দিয়েছেন, মূলত তাঁদের নিয়ে এই কমিউনিটি৷ রয়েছে তুরস্কের একটি উদ্যোগ, যারা তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সাধারণ মানুষকে উৎসাহ দিচ্ছে৷

Bangladesch die Bewegung in Dhaka
ইমরান এইচ সরকারের ভাষায়, গণজাগরণ মঞ্চ নির্দলীয় একটি রাজনৈতিক আন্দোলনছবি: Harun Ur Rashid Swapan

ডয়চে ভেলেকে ইমরান বলেন, ‘‘ইউক্রেন বা তুরস্কের উদ্যোগগুলো ভিন্ন বিষয় নিয়ে, তবে আমাদের আন্দেলনের সঙ্গেও তাদের মিল রয়েছে৷ নির্বাচন নিয়ে যে কাজটি তারা করছে তাতে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে৷ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনেও সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, তাদের প্রতিবাদের ভাষা হয়ে ওঠার চেষ্টা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো রয়েছে৷''

ঢাকার শাহবাগ থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া এ আন্দোলনের মুখপাত্র বলেন, তাদের এই আন্দোলন তুলনামূলকভাবে অনেক ব্যাপক ও দীর্ঘমেয়াদি৷ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বাধাগুলো দূর করে ‘নৈতিক শক্তির ওপর দাঁড়ানো' একটি সমাজ বিনির্মাণের জন্য তারা কাজ করছেন৷

রাজনৈতিক, তবে নির্দলীয়

মঞ্চের কর্মীরা সব সময়ই বলে এসেছেন, তাঁদের এ আন্দোলন ‘রাজনৈতিক'৷ তবে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট নয় এমন ঘটনাতেও মঞ্চের কর্মীদের বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে৷

আত্মপ্রকাশের ১৪ মাস পর গণজাগরণ মঞ্চকে ইমরান সংজ্ঞায়িত করছেন এভাবে: ‘‘এটা নিঃসন্দেহে একটি রাজনৈতিক আন্দোলন৷ যুগপৎভাবে এটা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনও৷ তবে এটাকে আমি রাজনৈতিক দলীয় আন্দোলন বলছি না, কারণ সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দল এর নেতৃত্ব দেয় না৷ এটাকে আমরা বলতে পারি নির্দলীয় একটি রাজনৈতিক আন্দোলন৷''

The Bobs Award 2013 Voting, Bild für Votingartikel
thebobs.com/bengali এই লিংকে গিয়ে ভোট দিন এখনি

তাঁর মতে, রাজনৈতিক দাবির বাইরেও সামাজিক উদ্যোগ হিসাবে গণজাগরণ মঞ্চের একটি স্বতন্ত্র চরিত্র ইতিমধ্যে দাঁড়িয়ে গেছে, যা মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনাকেই ধারণ করে৷

‘‘মুক্তিযুদ্ধকে আমরা বলে থাকি একটি মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের যুদ্ধ৷ সেই মানবিক রাষ্ট্র, একটি ‘সেক্যুলার স্টেট' তৈরির জন্য যে ধরনের কার্যক্রম, যে ধরনের সামাজিক উদ্যোগ দরকার ছিল, আমি মনে করি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমে সেটা প্রকাশিত হয়েছে, মানুষের সামনে এসেছে৷''

‘সামাজিক জাগরণ'

ইমরান বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ছয় দফা দাবিকে প্রাধান্য দিলেও গত এক বছরের বেশি সময়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, বিশেষ করে যেখানেই মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, সেখানেই সম্পৃক্ত হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ৷

‘‘রানা প্লাজা ধসের পর বিপুল পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন হয়, আমরা রক্ত সংগ্রহের মাধ্যমে ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হই৷ রক্ত সংগ্রহের পর আমরা সেখানে একটি ফিল্ড হাসপাতাল করি, যাতে মানুষের আরো কাছাকাছি যাওয়া যায়, তাদের পাশে দাঁড়ানো যায়৷''

সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং গণজাগরণ মঞ্চের রোডমার্চের বিষয়টিও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন ইমরান৷ বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে সারা বাংলাদেশে যখন ধর্মের নামে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হলো, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হলো, তাণ্ডব চালানো হলো – তখনো মানবিক জায়গা থেকেই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছি৷ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধের যে দাবি আমাদের রয়েছে, সেই অবস্থানে থেকেই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে রোডমার্চ করেছি, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি৷''

[No title]

বিভক্তি, বিতর্ক

কর্মীদের ওপর হামলা, পুলিশের বাধা, বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি এবং আটক-গ্রেপ্তারের মতো ঘটনায় সম্প্রতি অন্যভাবে আলোচনায় রয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ৷ বলা হচ্ছে, মুখপাত্র হিসাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইমরানের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা, দল গঠনের চিন্তা, আর্থিক লেনদেন নিয়ে অস্পষ্টতা – এ সব কারণেই মঞ্চে ‘ভাঙন' দেখা দিয়েছে৷

শুরু থেকেই মঞ্চে সংগঠকের ভূমিকায় ছিল এমন কয়েকটি সংগঠনকেও গত কয়েকদিন মঞ্চের সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায়নি৷ অবশ্য ইমরান বলছেন, যা ঘটেছে, তাকে তিনি ‘ভাঙন' বলতে রাজি নন৷ মঞ্চের চেতনাকে যারা ‘ধারণ করতে পারেনি', মূলত তারাই নানাভাবে গণজাগরণ মঞ্চের দীর্ঘমেয়দি এই আন্দোলনকে ‘বিতর্কিত' করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তাঁর৷

‘‘আপনারা জানেন, যারা হামলা করেছে এবং সংবাদ সম্মেলনগুলো করেছে, তারা নির্দিষ্টভাবে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী৷ সেই রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে, বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷ সুতরাং গণজাগরণ মঞ্চকে বিতর্কিত করার এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক একটি চেষ্টা৷''

ভাঙন না ধরলে শুরু থেকে সঙ্গে থাকা কয়েকটি সংগঠন কেন ইদানীং মঞ্চের কর্মসূচিতে আসছে না? এমন প্রশ্নে ইমরান বলেন, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে মঞ্চের ‘কর্মকৌশলে পরিবর্তন আসায়, দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করায়' সরকারে থাকা সংগঠনগুলো একে একে তাদের অবস্থান ‘গুটিয়ে' নিয়েছে৷

‘‘গত বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে গণজাগরণ মঞ্চের মার্চে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অংশগ্রহণ করেনি, যদিও তারা শুরু থেকেই মঞ্চের কর্মসূচির সাথে ছিল৷ এরপর দেখেছি, যুদ্ধাপরাধের বিচারেরর দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠেছে, যুদ্ধাপরাধী সংগঠনগুলোর সাথে সরকারের নৈতিক অবস্থানের পরিবর্তনের কারণে যখন সংকটের সৃষ্টি হয়েছ, সরকারি দল যখন হামলা করল এবং পুলিশের পেটোয়া বাহিনী যখন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর আক্রমণ করল, তখনো কিছু ছাত্র সংগঠন, যারা সরকারে রয়েছে, তারাও নানাভাবে মঞ্চকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করল৷''

এ সব সংগঠন বর্তমানে গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে রয়েছে কিনা, তাও তারা স্পষ্ট করেনি বলে মন্তব্য করেন ইমরান৷ তাঁর দাবি, সরকার জামায়াতে ইসালামী ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে অবস্থান পরিবর্তন করার কারণেই গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে এই ‘বিতর্ক তৈরির' চেষ্টা৷

‘‘যুদ্ধাপরাধী সংগঠনগুলোর সাথে তাদের দূরত্ব কমে যাওয়ার যে নজির আমরা ইসলামী ব্যাংকের অর্থ গ্রহণ করার মাধ্যমে দেখেছি, অর্থাৎ সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নৈতিক অবস্থানের যে পরিবর্তন আমরা ২০১৪ সালে দেখেছি, তার প্রেক্ষিতে গণজাগরণ মঞ্চ যে অবস্থান নিয়েছে, সেই অবস্থান নেয়ার কারণেই মূলত সেই দলের কর্মীরা খড়গহস্ত হয়েছ, আমাদের ওপর আক্রমণ করেছে৷''

গণজাগরণ মঞ্চকে একটি ‘দলীয় আন্দোলনের' রূপ দেয়ার চেষ্টা চলছে বলেও ইমরানের অভিযোগ৷ দু'মাস আগে এক সাক্ষতকারে ইমরান বলেছিলেন, বিভিন্ন সময়ে মঞ্চ এবং এর কর্মীদের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, তা সাংগঠনিকভাবে মোকাবেলা করতে না পারায় মঞ্চ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে৷

সেই বিভ্রান্তি কীভাবে দূর করা যায়, এখন সে বিষয়েও ভাবছেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানালেন মঞ্চের মুখপাত্র৷

‘‘এখন যেহেতু নানাভাবে মঞ্চ একটা টার্গেটে পরিণত হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের নতুন পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে হয়েছ, সেহেতু আমরা কৌশলগত অবস্থান নিয়ে ভাবছি, কীভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করে আমাদের চূড়ান্ত দাবি ‘ছয় দফা' আদায়ের আন্দোলনকে আরো বেগবান করা যায়৷''

ইমরান জানান, ইতিমধ্যে সমমনাদের ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ তাঁরা নিয়েছেন৷ রাজনৈতিক ‘অ্যাজেন্ডার' বাইরে থেকে গণজাগরণ মঞ্চের চেতনাকে ধারণ করবে এবং এই আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করবে – এমন সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলাচনাও চলছে৷ তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কীভাবে সাধারণ মানুষকে আরো সম্পৃক্ত করা যায়, কীভাবে তাদের বিভ্রান্তি দূর করা যায়, সে বিষয়টি নিয়েও কাজ চলছে৷

তিনি বলেন, ‘‘আমরা শুরু থেকেই বলেছি, গণজাগরণ মঞ্চ গণমানুষের আন্দোলন৷ কোনো অবস্থাতেই ছয় দফা দাবির সাথে আপস করে এই আন্দোলনের গতিপথ বা কর্মকৌশল কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্ধারণ করতে দেয়া হবে না৷''

দ্য বব্স

ডয়চে ভেলের দ্য বব্স বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম অ্যাওয়ার্ড'-এ গণজাগরণ মঞ্চ লড়ছে সেরা সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজমবিভাগে৷ ইউক্রেনীয়, টার্কিশসহ ১৪টি ভাষার প্রতিযোগীদের লড়াইয়ে গণজাগরণ মঞ্চ বাংলার প্রতিনিধি৷ সেরা হওয়ার দৌঁড়ে গণজাগরণ মঞ্চকে এগিয়ে নিতে চাই বেশি বেশি ভোট৷

ভোট দিতে চাইলে ভিজিট করুন thebobs.com/bengali ওয়েবসাইট৷ এরপর সেখানে লগ-ইন করুন ফেসবুক, টুইটার, ভিকন্টাক্টে কিংবা ডয়চে ভেলের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে৷

বিভাগ বাছাই করে গণজাগরণ মঞ্চের ঘরে বোতাম চেপে দিন আপনার ভোট৷ আগামী ৭ই মে পর্যন্ত প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একটি ক্যাটাগরিতে একটি করে ভোট দেয়া যাবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য