1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চীনে খনির বর্জ্যে নদী দূষণ বাড়ছে

২৩ জুলাই ২০১০

চীনের বেইজিং শহরে ঢুকেই জেঁকে ধরলো গরম৷ প্রচণ্ড গরম৷ জনাকয়েক সাংবাদিকের সঙ্গে আমিও একজন৷ ‘জ্ঞান অর্জন করতে হলে প্রয়োজনে সুদূর চীনে যাও’, ছেলেবেলায় শুনেছিলাম এই গুণিবাক্য, আমাদের যাত্রাও এরকমই এক উদ্দেশ্যে৷

https://p.dw.com/p/OS1C
তামার খনির বর্জ্য চুইয়ে আসছে নদীতে (ফাইল ফটো)ছবি: AP

চীনের নানা ধরণের খনি আছে৷ কয়লা, সোনা, তামা, কঠিন শিলা, তেল, গ্যাস আরও অনেক কিছু৷ এই সব দেখতেই আমাদের অভিযান৷

গরমে গা পুড়ে যাচ্ছে৷ গাইডকে সঙ্গে নিয়ে আমরা চলে গেলাম নিজের হোটেলে৷ পরে আমরা যাবো অন্যতম বৃহৎ একটি সোনার খনি দেখতে৷ সোনার খনির কথা মনে হতেই চোখ চকচক করতে লাগলো৷

হোটেলে এসে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি৷ তারপর গভীর ঘুম৷ আহা এমন সুন্দর ঘুম অনেকদিন হয়নি৷ খুব সকালে ঘুম ভাঙলো৷ এরপর দ্রুতগামী ট্রেনে বেশ ঘণ্টা কয়েক পর সোনার খনিতে পৌঁছালাম৷ ঘুরে দেখলাম৷ তারপর আমাদের লক্ষ্য আরেক স্থান৷ ফুজিয়ান নামের একটি এলাকা৷ এখানেই আছে তামার খনি৷

পরদিন ফুজিয়ান'এর খনি দেখার পর পাশের সুন্দর পাহাড়ী নদী ডাকলো আমাদের৷ এই নদীর নাম ডিং৷ চাইছিলাম পা ছোঁয়াতে, কিন্তু বাধা আসলো, ‘‘সাবধান এই নদীর পানিতে পা ডোবাবেন না৷ তাহলেই হয়েছে৷'' কী কারণ? প্রশ্ন করলাম৷ উত্তর এলো, এই নদী দূষিত৷ এতো সুন্দর নদী দূষণের শিকার? কি করে হলো? এক কথায় জানিয়ে দেয়া হলো, তামার খনির বর্জ্য চুইয়ে আসছে এই নদীতে৷ বারবার বলা হচ্ছে, এই বর্জ্য নিঃসরণ বন্ধ করতে, কিন্তু তা করা হচ্ছে না৷ আর এই বিষের প্রভাবে ডিং নদীর মাছ মরে যাচ্ছে৷ মরে যাচ্ছে জলজ উদ্ভিদ৷ ইতিমধ্যে প্রায় শূন্যের কোটায় চলে এসেছে এই মাছ৷

মন খারাপ হয়ে গেলো এই বক্তব্য শুনে৷ কলকলিয়ে যে নদী বয়ে যাচ্ছে, যার দুই পাশে সবুজ পাহাড়, জনবসতি, সেই জলে বিষ! খুব আস্তে আস্তে এই ক্ষতিকারক প্রভাব এসে ভয়াবহ অবস্থায় রূপ নিয়েছে৷ এই তো চলতি মাসের শুরুতে বড় একটি লিকেজ ধরা পড়ে৷ দেখা যায় আগের ফুটোগুলো দিয়ে যে হারে এই ক্ষতিকারক বিষ বের হচ্ছিল, এবার আরও বেশি পরিমাণে বেরুচ্ছে তা৷

লাখ লাখ কিলোগ্রাম মাছ মরে গেছে এই নদী থেকে ইতিমধ্যেই৷ জানলাম, সরকার এই খনি কোম্পানিকে এখুনি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে৷ আর তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরণের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে বলে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েও দিয়েছে৷

ঘুরতে ফিরতে, নানা জায়গায় কথা বলতে গিয়ে জানলাম, খনির বর্জ্যের কারণে দূষণের ঘটনা চীনে নাকি নতুন নয়৷ চীনের অনেক নদীর অবস্থা ভয়াবহ৷ বেইজিং এর ‘ইন্সটিটিউট অফ পাবলিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যাফেয়ার্স'এর একজন পরিচালক আমাদের জানালেন, এ ধরণের নদীগুলোর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের সরাসরি নদীর পানি ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে৷

পানি ব্যবস্থাপনা সংগঠনগুলো চীনের পানি দূষণের এই অবস্থা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন৷ তারা জানান, এমনিতেই চীনে প্রতিদিন ঘর-গেরস্থালি ও শিল্পকারখানা থেকে বিপুল পরিমাণে বর্জ্য পানি নদীতে এসে পড়ে৷ বড় কিছু শহর ছাড়া অন্য শহরগুলোয় বর্জ্য পানি বেরোনোর আগে তা ঠিকমতো শোধন করা হয় না৷ এ কারণে খাবার পানি সহ কৃষি ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ছে৷ আর মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘায়ের মতো খনির বর্জ্য! পানি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই সব বর্জ্য মিশ্রিত নদীর দূষিত পানিতে অনেক রাসায়নিক ক্ষতিকর পদার্থ ও ধাতু থাকে৷ যা মানুষের জন্য, পশুপাখির জন্য, জীববৈচিত্র এবং পরিবেশ প্রতিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন