চেরিকুঞ্জের আহ্বান

বসন্ত এলেই কি এক আনন্দে গোলাপি হয়ে ওঠে বনের ‘আল্টস্টাড’, অর্থাৎ ‘ওল্ড টাউন’? কেবল বন নয়, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন সেই রূপ নয়নভরে দেখতে৷ রাস্তার দুই ধারে চেরির ডালে ডালে গোলাপি বাহার৷ মাথার ওপরে জ্বলছে চেরি, ঝরা চেরিতে ছেয়ে আছে পথ৷ এ যেন স্বর্গের পথে গোলাপি সুড়ঙ্গ!

গাছে গাছে নতুন কুঁড়ির গান দিয়ে এ পার্বনের শুরু৷ প্রথমে কুঁড়িগুলো পাপড়ি মেলতে শুরু করে৷ এরপর হঠাৎ বিস্ফারণ! গোলাপি আগুনে যেন জ্বলতে থাকে আল্টস্টাড, মানে পুরোনো শহরতলির অলি-গলি৷

বনের আল্টস্টাডের দুই প্রধান সড়ক – ব্রাইটেস্ট্রাসে আর হেরস্ট্রাসের দুই ধারে চেরির বাহার দেখা যায় সবচে বেশি৷ জার্মানির সাবেক রাজধানীর শোভাবর্ধন এবং পরিবেশের কথা ভেবে জাপানি এই গাছগুলো লাগানো হয়েছিল সেই ১৯৮৪ সালে৷

বনের এই বাসন্তী রূপের কথা এখন অনেক ‘ট্র্যাভেল গাইড’-এও লেখা হয়৷ জার্মানিতে বেড়াতে আসার জন্য অনেকেই বেছে নেন এই গোলাপি ঋতুকে৷ আলস্টাডের ফুল ছড়ানো পথে হাঁটতে হাঁটতে তাঁদের চোখে খেলা করে আনন্দ, আর আঙুল ব্যস্ত থাকে ক্যামেরায়৷

চেরি গাছের এই ফুলেল সাজ থাকে কিন্তু মাত্র কয়েকটা দিন৷ তাই রূপ পিয়াসীদের ভিড়ের মধ্যেও সবাই চেষ্টা করেন গোপালি নিসর্গ পেছনে রেখে অন্তত একটি ছবিতে নিজের জায়গা করে নিতে৷

আল্টস্টাডের সরু সরু রাস্তায় আবাসিক এলাকার ফাঁকে ফাঁকেই রয়েছে কাফে, ছোট ছোট দোকান, চিত্রশিল্পীদের আখড়া আর ‘বুটিক হাউস’৷ পুরনো পুরনো গন্ধ মাখা এই এলাকাটি সারা বছরই ছবির মতো সুন্দর৷ তবে বসন্তের চেরি সেই সৌন্দর্যকে নিয়ে যায় ভিন্ন মাত্রায়৷

কেবল দিনে নয়, আল্টস্টাডের চেরি সরণিতে চমক আছে রাতেও৷ সড়ক বাতি আর আশেপাশের বাড়ির শার্সি ফুঁড়ে আসা আলোর খেলায় অসাধারণ আভা ছড়ায় গোলাপি চেরি৷

এই গোলাপি বসন্তের আয়ু বড় জোর ১০ দিন৷ ফুলমঞ্জুরির ভারে নুয়ে পড়া ডালগুলো থেকে বাতাসে উড়তে থাকে পাপড়ি৷ ফুল ছড়ানো সেই পথ যেন এক অলৌকিক গোলাপি কার্পেট৷