1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চোখের ইশারাতেই এবার চলবে গাড়ি

১০ মে ২০১০

ভাবুন তো একবার, ব্যস্ত সড়কের মধ্য দিয়ে একটি গাড়ি সাঁ সাঁ করে ছুটছে৷ হঠাৎ করে থামছে, কখনো ডানে কিংবা বাঁয়ে মোড় নিচ্ছে৷ কিন্তু গাড়ির ড্রাইভার দিব্যি বসে আছে ড্রাইভিং সিটে৷ তার কিন্তু হাত পা কোনটাই নড়ছে না৷

https://p.dw.com/p/NJyf
স্পিরিট অফ বার্লিন চালিয়ে দেখাচ্ছেন একজন গবেষকছবি: AP

এটাও কি সম্ভব? হ্যা, জার্মানির কিছু গবেষক এবার সেই ধরণের গাড়িই নিয়ে আসছেন৷

চোখের ইশারায় ড্রাইভিং

গাড়িটির নাম স্পিরিট অফ বার্লিন, কারণ এই গাড়িতে যে নতুনত্ব সংযোজন করা হয়েছে তার পেছনে রয়েছেন বার্লিনের বেশ কিছু মেধাবী এবং করিৎকর্মা গবেষক৷ তাঁরা কাজ করছেন ইন্সটিটিউট অফ কম্পিউটার সায়েন্স এর অধ্যাপক ড. রাউল রোহাসের অধীনে৷ গত মাসে তাঁরা তাদের নতুন গবেষণার ফল তুলে ধরেন গণমাধ্যমের সামনে৷

কি আছে তাদের গবেষণায়? ধারণাটি একেবারে নতুন না হলেও এটা এতদিন ধরে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হয়নি, অর্থাৎ কেবল চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করেই চলবে মোটর গাড়ি৷ নাইট রাইডার সিরিয়াল তো সবারই মনে আছে, যেখানে নায়কের মুখের কথা শুনেই গাড়িটি ভিলেনদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতো৷ এবার স্পিরিট অব বার্লিন চলেছে গবেষকদের চোখের দৃষ্টি দেখে৷ অর্থাৎ ড্রাইভার কি চাচ্ছেন সেটা গাড়ি বুঝতে পারছে তার চোখের দিকে নজর রেখেই৷

Flash-Galerie the Spirit of Berlin
সাধারণ একটা গাড়ির মতই দেখতে স্পিরিট অফ বার্লিনছবি: AP

নতুন সফটওয়্যার আইড্রাইভার

কিন্তু কীভাবে সম্ভব হল এটি? এজন্য অবশ্যই প্রযুক্তির কাছেই দ্বারস্থ হতে হয়েছে গবেষকদের৷ নতুন একটি সফটওয়্যার আবিষ্কার করা হয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে আইড্রাইভার৷ মূলত এই সফটওয়্যারটিই মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে পারে৷ গাড়িটির ড্রাইভারের মাথায় পরানো থাকবে একটি বিশেষ ধরণের হেলমেট৷ বাইসাইকেল চালকরা যে ধরণের হেলমেট পরে থাকে এটা দেখতে সেরকমই৷ এতে রয়েছে দুইটি ক্ষুদ্র ক্যামেরা এবং একটি ইনফ্রারেড এলইডি৷ এই হেলমেটটির সঙ্গে সংযুক্ত বিশেষ সফটওয়্যার সম্বলিত একটি ল্যাপটপ কম্পিউটার৷ হেলমেটের একটি ক্যামেরা থাকছে সামনের দিকে, এটি হচ্ছে সিন ক্যামেরা৷ আর অন্যটির থাকছে ড্রাইভারের একটি চোখের দিকে তাক করা যার নাম আই ক্যামেরা৷ এই আই ক্যামেরার মাধ্যমেই চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করা হবে৷ এই ক্যামেরা থেকে ইনফ্রারেড এলইডি আলো ড্রাইভারের চোখের ওপর পড়ে, তবে তাতে ড্রাইভারের কোন সমস্যা হয়না৷

এই হেলমেট পরা অবস্থায় ড্রাইভারের কাছে দুইটি অপশন থাকে, সেগুলো হল ফ্রি রাইড এবং রুটিং অপশন৷ ফ্রি রাইড অপশনে ড্রাইভার ডানে তাকাচ্ছে নাকি বাঁয়ে তাকাচ্ছে সেটি বুঝে গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলও ডানে বাঁয়ে ঘুরবে৷ গাড়ির গতি আগে থেকেই ঠিক করা থাকবে, অবস্থা বুঝে তার কিছুটা গতি এদিক সেদিক হতে পারে৷ কিন্তু ধরুন, সারাক্ষণ বসে থাকতে থাকতে বেচারা ড্রাইভারের যদি ঘুম পেয়ে যায়, তাহলে? তাহলেও কোন সমস্যা নেই, চোখ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকলে গাড়ি আপনা আপনিই ব্রেক কষে থেমে যাবে৷ তাই দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও থাকছে না৷

The Spirit of berlin
গাড়ির ভেতরে রয়েছে আইড্রাইভার সফটওয়্যার সম্বলিত ল্যাপটপছবি: AP

অন্য যে অপশনটি থাকছে সেটি হচ্ছে রুটিং অপশন৷ অর্থাৎ কোন মোড়ে পৌঁছার আগে গাড়িটি ড্রাইভারের হেলমেটে সঙ্কেত পাঠাবে৷ এসময় ড্রাইভার যেদিকে মোড় নিতে চান সেদিকে কমপক্ষে তিন সেকেন্ড তাকিয়ে থাকতে হবে, তাহলেই গাড়িটি বুঝে ফেলবে তাকে কোনদিকে মোড় নিতে হবে৷ আর ড্রাইভার যদি সামনেই তাকিয়ে থাকেন তাহলে গাড়িটি সোজা চলে যাবে৷ অন্য কোন গাড়ি অনুসরণ করার ক্ষেত্রেও এই নতুন পদ্ধতি দারুণ কাজ দেবে৷ এক্ষেত্রে ড্রাইভারকে বেশি কিছু না করে কেবল সামনের গাড়িটির দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে, বাকি কাজ করবে আইড্রাইভার নামে নতুন সফটওয়্যারটি৷

বদলে যাবে সাধারণ একটি গাড়ি

নতুন এই গবেষণার পেছনে গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে কাজ করে আসছে ড. রাউল রোহাসের নেতৃত্বাধীন গবেষক দলটি৷ তাদের উদ্ভাবিত স্পিরিট অব বার্লিন গাড়িটি দেখতে আর অন্য দশটা গাড়ির মতই৷ কিন্তু এই গাড়িটিকেই পাল্টে দিয়েছে কিছু সেন্সর, কম্পিউটার সফটওয়্যার এবং ড্রাইভিং হেলমেটটি৷ গবেষক দলের এই গবেষণায় সহায়তা করছে সেন্সোমোটোরিক ইন্সট্রুমেন্ট নামে একটি কোম্পানি৷ এর আগে আরেক গবেষক টিনোশ গানজিনেহ এবং মিয়াও ওয়াং আইড্রাইভার নামে আরও একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছিলেন৷ এটি ব্যবহার করে আইপডের মাধ্যমেই গাড়ি চালানো যেত৷ তবে বার্লিনের গবেষকদের উদ্ভাবন আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে৷

কিন্তু এভাবে বসে থেকে শুধু চোখের ইশারা দিয়ে গাড়ি চালাতে কি রাজি হবেন কেউ? কারণ ড্রাইভিং এর মজাই যে অন্যরকম৷ এভাবে প্রযুক্তি যদি মানুষের জীবনকে পাল্টে দিতে থাকে তাহলে এক সময় যে গোটা দেহই অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক