1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নতুন নাগরিক

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা৩১ জুলাই ২০১৫

৩১শে জুলাইয়ের পর থেকে নিজের পছন্দের দেশের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন ভারত এবং বাংলাদেশে অবস্থিত ছিটমহলের বাসিন্দারা৷ এতদিন যাঁরা ছিলেন বাপে খেদানো, মায়ে তাড়ানো এক ‘নেই রাজ্যের' বাসিন্দা৷ কী রকম নেই রাজ্য?

https://p.dw.com/p/1G7q7
Indien Flagge Präsidentenpalast
ছবি: AP

ছিটমহল নিয়ে তথ্যচিত্র বানিয়েছেন, এ রকম একজন চিত্রপরিচালক একবার বলেছিলেন, ধরে নেওয়া যাক এমন একটা জায়গা, যেখানে পড়াশোনার জন্য স্কুল নেই, অসুস্থ হলে চিকিতসার জন্য হাসপাতাল নেই, আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হলে থানা-পুলিস নেই, এমনকি রোজকার বেঁচে থাকার জন্যে যে বাজারহাট, দোকান দরকার হয়, সেটুকু পর্যন্ত নেই৷ চাল কিনতেও যেতে হয় সীমান্ত পেরিয়ে পাশের দেশে৷ যেহেতু ‘নেই রাজ্যের' বাসিন্দা, পাসপোর্ট-ভিসার ব্যাপার নেই তাঁদের৷ এমনকি নাগরিকত্বও নেই না মানুষগুলোর৷ ফলে পুরো বেঁচে থাকাটাই তাঁদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মেজাজ-মর্জির ওপর নির্ভরশীল৷ রক্ষীরা যখন ইচ্ছে, যেমন ইচ্ছে হেনস্থা করে৷ প্রতিবাদ করলে আটকে রেখে অত্যাচার করে৷ সামান্য এক বস্তা চাল আনার অনুমতি দিতে হলেও ঘুস চায় তারা৷ আর না দিলে হাত মুচড়ে কেড়ে নেয় কষ্টের চাল৷

‘‘আমরা, যাঁরা শহরে-গ্রামে থাকি, তাঁরা ঘোর দুঃস্বপ্নেও চিন্তা করতে পারব না এমন একটা দুঃসহ জীবনের কথা৷ কিন্তু ছিটমহলের মানুষগুলোর কোনো উপায় নেই৷ নেহাত বাধ্য হয়েই, কার্যত ওই কুকুর-বেড়ালের জীবন ওঁদের'', বলেছিলেন সেই চিত্রপরিচালক৷ তাই ছিটমহলের অবলুপ্তি মানে সেই মানুষগুলোর জন্যে একটা ভদ্র-সভ্য জীবন বাঁচার সুযোগ৷ ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল হস্তান্তরের পর, ওঁরা কে কোন দেশে থাকতে চান, তার সমীক্ষাও করা হয়েছে৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দারা সবাই ভারতেই থাকতে চান৷ আর বাংলাদেশের ছিটমহল থেকে ৯৭৯ জন মানুষ মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে চলে আসতে চান৷ এই যাঁরা চলে আসবেন, তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ ধর্মত হিন্দু৷ বাকিরা মুসলমান৷

Symbolbild Grenze Indien Bangladesh
‘বাংলাদেশে ভারতের ছিটমহলের কিছু বাসিন্দাকে নাকি ভারতে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে’ছবি: AFP/Getty Images

এই তথ্যের মধ্যে কিন্তু কোনো চমক নেই৷ কাজের সুযোগ যেদিকে বেশি, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ চিরকাল সেদিকেই থাকতে চেয়েছেন৷ ঠিক যেভাবে গ্রাম-মফস্বল থেকে শহরে, ছোট শহর থেকে আরও বড় শহরে চলে আসে মানুষ৷ বড় জায়গা মানে বেশি কাজ, জীবনধারণের সুযোগ আরও বেড়ে যাওয়া – হিসেবটা এতটাই সহজ-সরল৷ এর মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ, হিন্দু-মুসলমানের বিভাজনের ভূমিকা খুব কম৷ ধরা যাক যে মুসলিম পরিবারগুলো ভারতে বাংলাদেশের ছিটমহল ছেড়ে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে চলে যেতে চায়, তারা কি দেশকে ভালোবাসে না? কথায় বলে, আপনি বাঁচলে বাপের নাম৷ আগে তো পেট, তার পরে তো দেশ এবং অন্যান্য সব কিছু৷ যদি অন্নের সংস্থানই না হয়, জীবিকার নিশ্চয়তা যদি না থাকে, তা হলে কোন দেশের নাগরিক হলাম, তা দিয়ে কী হবে?

অবশ্য বিচ্ছিন্ন দু-একটি অভিযোগও শোনা যাচ্ছে৷ বাংলাদেশে ভারতের ছিটমহলের কিছু বাসিন্দাকে নাকি ভারতে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে৷ তাদের নাকি জোর করে বাংলাদেশে রেখে দেওয়া হচ্ছে৷ যেহেতু এখনই এ খবর যাচাই করার কোনো উপায় নেই, যদি এমন কিছু ঘটছে বলে মেনে নিতেও হয়, তা হলেও এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়৷ প্রথমত, এমন বাধ্যতামূলক নাগরিকত্ব আদৌ কেউ মেনে নেবে কিনা, নিলেও কতদিন এভাবে জোর করে তাদের আটকে রাখা যাবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন৷

Porträt - Sirsho Bandopadhyay
শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা প্রতিনিধিছবি: privat

দ্বিতীয় প্রশ্নটা তার থেকেও বড়৷ ছিটমহল এত বছর ধরে অপাংক্তেয় থেকে গেলেও, ৩১শে জুলাইয়ের পর থেকে আর থাকবে না৷ সীমান্ত পাহারা ছাড়া প্রশাসনিক নজর আগে যেমন এই এলাকায় একেবারেই ছিল না, ভবিষ্যতে তেমনটা আর হবে না৷ বরং উল্টোটা হবে৷ ছিটমহল বিনিময়ের পর দু'দেশের সরকারই এই এলাকার পুনর্গঠন এবং উন্নয়নে যত্নবান হবে৷ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে৷ ফলে জোরজুলুম বেশিদিন চলবে না৷

তাছাড়া, ছিটমহলের অবলুপ্তি ঘটলেও নাগরিক বিনিময়ের প্রক্রিয়া এখনই শেষ হচ্ছে না৷ এখানকার বাসিন্দাদের ঠাঁইবদল চলবে এই বছরের শেষ পর্যন্ত৷ সেক্ষেত্রে ইচ্ছুকদের জোর করে তাদের অপছন্দের দেশে আটকে রাখা নেহাত সহজ হবে না৷

ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তে ছিটমহলগুলি থেকে যাওয়াটা এক ধরনের রাজনৈতিক বাধ্যতা ছিল৷ ঠিক কেমনই এই সব ছিটমহলের অবলোপ এক ঐতিহাসিক অবশ্যম্ভাবিতা বলে আজ মনে হচ্ছো৷ এর পর দুই দেশের কাছেই আর একটা কর্তব্য পালন করাই বাকি থাকে৷ এখানকার বাসিন্দাদের নিরপেক্ষ এবং সামগ্রিক উন্নয়ন৷ তবে সেটা কতদূর হয়, সময়ই সেই কথা বলবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য