1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ছেলেমেয়েরা স্বাধীন হল, দেশে আজ কত শান্তি’

২০ এপ্রিল ২০১১

মুন্সি আব্দুর রউফ এর জন্ম ১৯৪৩ সালে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায়৷ ১৯৬৩ সালে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এ যোগ দেন তিনি৷ একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুর দিকেই প্রাণ হারান এই অকুতোভয় সৈনিক৷

https://p.dw.com/p/10wuW
একাত্তরে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ (ফাইল ফটো)ছবি: AP

মুন্সি আব্দুর রউফের মা মকিদুন্নেসা-র বয়স এখন ৯৯ বছর৷ তিনি বাস করেন ফরিদপুরের আড়পাড়া গ্রামে৷ মুঠোফোন সাক্ষাৎকারে মুন্সি আব্দুর রউফ সম্পর্কে তিনি বলেন, ছোটবেলায় খুব দুষ্টু ছিল রউফ৷ নদীতে সাঁতার কাটত৷ সারাবেলা কাটত তার নদী আর উঠোনে৷

তরুণ বয়সেই চাকরির সন্ধান

রউফ যখন কিশোর, তখন তাঁর বাবা মারা যান৷ ফলে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন রউফ৷ অস্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েই ভর্তি হন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এ৷ একাত্তরের ২৫শে মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুর সময় তিনি ছিলেন চট্টগ্রামে৷ সেখান থেকেই তিনি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন৷ মকিদুন্নেসা জানান, যুদ্ধে যাওয়ার আগে রউফ তাঁর মাকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন৷ একমাত্র ছেলে হওয়ায় মায়ের জন্য খাবার সংস্থানের ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন৷ কথা ছিল, যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় বোনের জন্য একটা শাড়ি নিয়ে আসবেন৷

মটার্রের গোলায় নিহত রউফ

শাড়ি নিয়ে আর ফিরতে পারেননি রউফ৷ একাত্তরের এপ্রিলে শত্রুপক্ষের মর্টারের গুলিতে প্রাণ হারান তিনি৷ বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ‘‘ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিআর-এর ১৫০ জন সৈনিককে রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি নৌ পথে নিরাপত্তাব্যুহ তৈরির দায়িত্বে দেওয়া হয়৷ এই দলের এক নম্বর এলএমজি চালক মুন্সি আব্দুর রউফ ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের নানিয়ারচর উপজেলাধীন বাকছড়ির একটি বাঙ্কারে৷ ৮ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২ নং কমান্ডো ব্যাটালিয়ান রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি নৌপথের আশেপাশে অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর উপর আক্রমণ করে৷

ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান তখন পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন৷ কিন্তু নিরাপদে অবস্থান ত্যাগের জন্য দরকার নিরবচ্ছিন্ন কাভারিং ফায়ার৷ মুন্সি আব্দুর রউফ এর এলএমজির কাভারিং ফায়ারে ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান তার সৈন্যদের নিয়ে পেছনে হটতে থাকেন৷ তাঁর অব্যর্থ গুলিতে শত্রুদের স্পিড বোটগুলো ডুবে যায় এবং সেগুলোতে অবস্থানরত পাকিস্তানী সৈন্যরা হতাহত হয়৷ হঠাৎ করে শত্রুর একটি গোলা এসে পড়ে রউফের ঠিক উপরে৷ মুহূর্তেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় মুন্সি আব্দুর রউফ এর দেহ''৷

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ

মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করায় বাংলাদেশ সরকার ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে৷ কিন্তু স্বাধীনতার পরও দীর্ঘ সময় তাঁর সমাধিস্থলের কাছে যেতে পারেননি মা মকিদুন্নেসা৷

মকিদুন্নেসাকে দেখাশুনা করছেন মুন্সি আইয়ুব আলী৷ তিনি জানান, ১৯৯৬ সালে আমরা নানিয়ারচরে রউফ-এর সমাধিস্থলে যাওয়ার অনুমতি পাই৷ এর আগে নিরাপত্তার কারণে আমাদেরকে সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি৷

কৃতজ্ঞতা

মকিদুন্নেসা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন নানিয়ার চরের বাসিন্দাদের প্রতি৷ যারা অপার স্নেহে তাঁর সন্তানকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন৷ তাই, অনেকে চাইলেও সন্তানের দেহাবশেষ নানিয়ার চর থেকে তুলে আনতে রাজি হননি তিনি৷

এই শহীদের জননী মনে করেন, যুদ্ধে তিনি সন্তান হারিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু দেশতো স্বাধীন হয়েছে৷ দেশে শান্তি এসেছে৷ এই শান্তির দেশের সব সন্তানকে নিজের সন্তান মনে করেন তিনি৷ তাই আজ আর কোন দুঃখ নেই মকিদুন্নেসার৷

মুন্সি আব্দুর রউফ এপ্রিলের ঠিক কোন তারিখে নিহত হন সেটি নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে৷ কেউ বলছেন, একাত্তরের ৮ এপ্রিল, কেউ ১৯ এপ্রিল আবার কেউবা বলছেন ২০ এপ্রিল৷ তবে তাঁর সমাধিস্থলে মৃত্যুর তারিখ লেখা আছে ২০ এপ্রিল, ১৯৭১৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক