1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ির ৫০ বছর

৫ মে ২০১০

বিয়ের পর দেরি করে বাচ্চা চান যারা, তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ভাবেন৷ জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেই ভাবনায় প্রথমেই জায়গা করে নেয়৷ এই বড়ি ২০১০ সালে ৫০ বছরের প্রবীণাতে পরিণত হল৷ তবে এখনও তার দাপট এখনো আগের মতই৷

https://p.dw.com/p/NEfU
ছবি: picture-alliance/ dpa

ছেলে হোক মেয়ে হোক দু'টি সন্তানই যথেষ্ঠ৷ কিন্তু মাত্র দু'টি সন্তানের মধ্যে পরিবারকে আটকে রাখার উপায় কি ? খুব সহজ৷ উপায় বাতলে দিয়েছে জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি৷ ১৯৬০ সালে প্রথম এই ট্যাবলেট বাজারে আনে অ্যামেরিকা৷ বলা প্রয়োজন, জন্ম শাসনের এই বড়ি বার হবার পরই সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মহিলা যেন খুঁজে পান কাঙ্খিত সোনার হরিণটি৷

১৯৬০ সালের অগাস্ট মাসে প্রথম যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেট বাজারে ছাড়া হয় তার নাম এভোনিড৷ এর কিছুদিনের মধ্যে অন্যান্য দেশেও বড়িটি সুলভ হয়ে ওঠে৷ অ্যামেরিকায় এবং বিশ্বের অন্যত্র জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণের পক্ষে যিনি জোর প্রচার চালান তিনি মার্গারেট স্যাঙ্গার৷ মেয়েদের জন্ম শাসনের অধিকারের পক্ষে লড়াইকে তিনি করে তোলেন তাঁর জীবনের ব্রত৷ এই ব্রত পালন করতে গিয়ে জেলও খাটতে হয়েছে তাঁকে৷ বহু গ্রন্থ লিখেছেন তিনি জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে৷ লেকচার দিয়েছেন বিশ্বের নানা দেশে৷

Die erste Antibabypille
একদম প্রথম দিকের জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়িছবি: AP

প্রখ্যাত জার্মান নারিবাদী লেখিকা অ্যালিস শোয়ার্ৎসার জানান, এই জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি নারী স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এক মাইলফলক রচনা করেছে৷ তিনি জানান, সে সময় যে অল্প কয়েকজন মহিলা সাহস করে এই বড়ি খেতেন তিনি তাদের মধ্যে একজন৷ মূল লক্ষ্য ছিল অনাকাঙ্খিত এবং অপরিকল্পিত গর্ভধারণকে এড়িয়ে যাওয়া৷ তবে তিনি একা ছিলেন না অনেকেই তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন৷ খ্রিষ্টীয় গির্জার কঠিন নিষেধ থাকা সত্বেও৷

ওষুধ কোম্পানি বায়ার শেরিং-এর ওষুধ বিভাগের প্রধান মাওরিন ক্রোনিন জানান, এই বড়ি মেয়েদের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে৷ অনেকে মেয়েই গর্ভবতী হয়ে পড়েন কিন্তু বাচ্চা নিতে চান না৷ তখন গর্ভপাতের দিকে ঝুঁকে পড়েন তারা৷

গোটা ইউরোপে প্রায় ৫০০ মহিলার ওপর একটি জরিপ চালানো হয়, তারা সবাই এক বাক্যে জানিয়েছেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি তাদের জীবনের মান অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে৷ অনিচ্ছা বা পরিকল্পনা ছাড়াই গর্ভধারণ ঘটে যেতে পারে এমন সার্বক্ষণিক উদ্বেগ থেকে তাদের রেহাই দিয়েছে এই ট্যাবলেট৷

সারা বিশ্বে প্রায় বার কোটিরও বেশি মহিলা জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করে থাকে৷ এ দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে উত্তর এবং মধ্য ইউরোপ৷

জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ির প্রয়োজনীয়তা আসলে কতটুকু ? এ প্রসঙ্গে মহিলা চিকিৎসক ডাঃ ফেরদৌস মহল রুনী জানান, ‘‘আমি মনে করি জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি আমাদের জন্য ভীষণ ইতিবাচক একটি ভূমিকা পালন করছে৷ কারণ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে এই পিল অপরিহার্য৷ সেই হিসাবে এটি আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক, অন্ততপক্ষে আমাদের দেশের জন্য৷''

Diätlügen - Pillen
দু'টি সন্তানের মধ্যে পরিবারকে আটকে রাখার উপায় বাতলে দিয়েছে জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়িছবি: picture alliance/dpa

৫০ বছর আগে প্রথম জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনের প্রথা প্রচলিত হয়৷ এই বড়ির উদ্ভাবন ছিল মেয়েদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে অনেক বড় একটি পদক্ষেপ৷ ডাঃ ফেরদৌস আরো বললেন, ‘‘অবশ্যই আমি মনে করি যে ১৯৬০ সালে যারা এই পিল উদ্ভাবন করেছিলেন, তারা ভবিষ্যতের কথা যেভাবে চিন্তা করেছেন, কিভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷ তার অন্যতম উপায় হল জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল৷ এবং বছরের পর বছর এই ট্যাবলেটকে আরো উন্নত করা হয়েছে৷ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘লো-ডোজ' পিল করা হয়েছে৷ যেগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুবই কম৷ সেসব পিল বাজারে নিয়ে আসতে পেরেছে ওষুধ কোম্পানিগুলো - সেটাকে আমারা স্বাগত জানাচ্ছি৷ ''

বিশেষ করে ক্যাথলিক গির্জা জন্ম নিয়ন্ত্রণে ঘোর বিরোধী৷ ভ্যাটিক্যান সবসময়ই জন্ম নিয়ন্ত্রণের কঠিন সমালোচনা করে এসেছে৷ যে কোন ধরণের বড়ি বা অন্য কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণে বাধা দিয়েছে ভ্যাটিক্যান৷ নীতি বিরোধী বলে বার বার জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়িকে চিহ্নিত করেছে রোমান ক্যাথলিক চার্চ৷

অনেক মুসলিম দেশও জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করে আসছে৷ ধর্মীয় নেতারা ফতোয়া দিয়েছেন এর বিরুদ্ধে৷ তবে বেশ কিছু দেশ এই বাধা সত্ত্বেও জন্ম নিয়ন্ত্রণের নীতি বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছে৷

তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেটের বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে৷ অনেকেই অভিযোগ করেছেন তাদের মধ্যে এক ধরণের হতাশা কাজ করছে, ওজন বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে সবচেয়ে বেশি৷ এছাড়া সমালোচকরা জানিয়েছেন কোন কোন ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় এই ট্যাবলেট সেবনের ফলে ক্যান্সারের ঝুকি বেড়ে যেতে পারে মেয়েদের৷

প্রতিবেদন : মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদক : আবদুল্লাহ আল-ফারূক