1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলবায়ু পরিবর্তন: গাছপালা ও প্রাণীকূল সর্বোচ্চ হুমকির মুখে

১২ জানুয়ারি ২০১০

বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ দূষণের ফলে বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে তাতে পৃথিবীর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গাছপালা ও প্রাণী রয়েছে সর্বোচ্চ হুমকির মুখে৷ যারা পৃথিবী হতে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে৷

https://p.dw.com/p/LTl3
ছবি: AP

বিশ্বের তাপমাত্রা ১.৫ হতে ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায় তবে ২০-৩০ শতাংশ গাছপালা ও পশু পাখির জীবনের উপর ভয়াবহ ঝুঁকির সম্ভাবনা বিদ্যমান৷ অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীতে গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রভাবে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ঝড়ঝঞ্ঝা, খরা, বন্যা, বরফ গলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি ও পানি সংকট দেখা দিতে পারে৷ তথ্যানুযায়ী যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ, তাহলো ২০৮০ সালের মাঝে ১১০ থেকে ৩০০ কোটি মানুষ ভয়াবহ পানি সংকটে পড়বে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পতিত হবে৷

জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ জনপদ 'বাংলাদেশ'

বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০০৭ সালের তথ্য মতে, বাংলাদেশের নদী অঞ্চলের আয়তন ৯,৩৭৯.৫১ বর্গকিলোমিটার, বনাঞ্চলের আয়তন ২২,৫৮৪ বর্গকিলোমিটার৷ নদী ও বনাঞ্চল বাদে বাংলাদেশের আয়তন ১১৫৬০৬.৪৯ বর্গ কিঃমিঃ৷ বৈচিত্র্যপূর্ণ অবস্থানের বিবেচনায় বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ জনপদ৷ সাম্প্রতিক সময়ের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৬৫০ প্রজাতির পাখি, ১৪৫ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১৫ জাতের উভচর প্রাণী, ৭০০ প্রজাতির সামুদ্রিক ও মিঠা পানির মৎস্য এবং ৫০০০ প্রজাতির উদ্ভিদের নমুনা বিদ্যমান৷ বাংলাদেশে প্রায় ৫০০০ এর বেশি সম্পূরক উদ্ভিদ রয়েছে৷ যার মাঝে ২২৪ প্রজাতির কাঠ উৎপাদনকারী বৃক্ষ৷ ১৩০টি প্রজাতি তন্তু উৎপাদনকারী উদ্ভিদ৷ এছাড়াও বাংলাদেশে ২৬ প্রজাতির ঘাস পাওয়া যায়৷ বন্য প্রাণীদের মাঝে উভচর, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ীর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে ১৯, ১২৪, ৬৬১ ও ১২৩টি৷

Ein weisser Tiger im Zoo von Delhi in Indien
সাদা বাঘ বিলুপ্ত প্রায়, যে কয়টি আছে . তা চিড়িয়াখানায়ছবি: UNI

৩০ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে

বাংলাদেশে বর্তমানে ৩০টি প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখোমুখি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ৷ বিপন্ন প্রাণীসমূহের মাঝে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, হাতি, অজগর সাপ, কুমির, ঘড়িয়াল ইত্যাদি৷ বিগত শতাব্দীতেই বাংলাদেশে ১৯টি প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে৷ যার মাঝে অন্যতম হলো গন্ডার, বুনো মোষ, কালো হাঁস, নীলগাই, রাজশকুন ইত্যাদি৷ কেউ কেউ মন্তব্য করেন এই জনপদে ২৭টি বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে ও ৩৯টি প্রজাতি বাংলাদেশ হতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে৷

ধ্বংসের পথে মাছের বংশ

বর্তমানে মিঠা পানিতে ২৬০ প্রজাতির স্থানীয় মাছ, ৩১ প্রজাতির বিদেশি মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ি এবং সমুদ্রে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় ও কমপক্ষে ১৬ প্রজাতির সামুদ্রিক চিংড়ি পাওয়া যায়৷ দেশে প্রাপ্ত ৪৫০ প্রজাতির শামুক ঝিনুকের মাঝে ৩০০টি উপকূল এলাকায় পাওয়া যায়৷ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির সহায়তায় সাস্টেইনেবল এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজম্যান্ট কর্মসূচির-এর অধীনে উন্নয়ন সমবায় কর্তৃক প্রকাশিত জনপ্রতিবেদন ২০০২-২০০৩ বাংলাদেশের পরিবেশ-এর তথ্য মতে বিগত ১৫ কিংবা ২০ কিংবা ৩০ বছর পূর্বে বাংলাদেশে যে ধরনের মাছ পাওয়া যেত বর্তমানে তার বহু কিছুই বিলুপ্ত অথবা হুমকির মুখোমুখি৷

Waldbrand in Portugal
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কি বিভিন্ন সময়ে দাবানলের সৃষ্টি হচ্ছে?ছবি: AP

সেই সব মাছেরা

২০ বছর আগে যে মাছ পাওয়া যেত তার মাঝে অন্যতম হলো- পুঁটি, টেংরা, মলা, মিহি, মাগুর, চাঁদা, ধূতরা, গুজা, বাগদা চিংড়ি, বোয়াল, শোল, বেলে, টেপা, ফলি, নারলি, গোটা নাইল্যা, পোগাল, খাঁটি পুঁটি, নেদাই, খাটা, পাবদা, আইড়, কালবাউশ, নৌয়ালি, শাল দাঁকা, শাংকা, বইরগর রাজ, গুজা, চিতল, কৈ, শাতি, পোয়া, ভাঙনা, চিতল, ছোট পুতনি, খাটা চেং, কালজাটা, চেলা, বাগ, ধুরয়া, নালাছাতা, বাজয়ি, নাড়ালি, পিঠকাটা, রূপচাঁদা, কোনা টেংরা, কাজলী, বোম, ছুরি, গাং, বাঁশ পাতারি, বাকল, চাঁদা, রাজ, কলই, সরপুটি, কালুন, দোয়চেলা, মলা, ইচা, খইলশা, চেউয়া, বাইম এবং বোটি৷

BdT Deutschland Bitterling ist Fisch des Jahres 2008
মাছের অনেক প্রজাতিই এখন বিলুপ্তির পথেছবি: picture-alliance/ dpa

সব এখন যেন ইতিহাস

উল্লেখিত মাছগুলো দেশের প্রায় সর্বত্র খাল বিল নদীতে ২০ বছর আগে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত৷ কিন্তু জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার কারণে বর্তমানে অর্থাৎ ২০ বছর পরে কিছু মাছ বিলুপ্ত প্রায় ও কিছু মাছ হুমকির সম্মুখীন৷ তার মাঝে অন্যতম হলো- মলা, শোল, পোগাল, বাটি, পুঁটি, বেদাই, পাবদা, আইড়, বইরগর, বাটা, বাচা ইত্যাদি অন্যতম৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক